মাওলানা মাসউদুল কাদির

  ১৯ মার্চ, ২০২৪

রোজার প্রতিটি রাতই মহিমান্বিত

প্রতীকী ছবি

রমজানুল মোবারকের আজ অষ্টম দিন। রমজানের প্রতিটি রাতই গুরুত্বপূর্ণ। সিয়ামণ্ডসাধনার যে রাতের কথা বলছি, তা অনেকটা হাট-বাজারের মতোই। বাজারে গেলে আমরা নানা সদাইপাতি কিনি। রমজানের রাতেও মধুময় ইবাদতের পসরা বসে। আল্লাহতায়ালা বান্দাকে কাছে নেওয়ার জন্য, জান্নাত দানের জন্য নানারকম পথ ও পদ্ধতি খুলে দিয়েছেন। সূর্য ডোবার পরেই আমরা ইফতার করি। সাওম ভাঙি। মাগরিবের সালাতের পর মুমিন বান্দা তেলাওয়াতেও সময় কাটাতে পারে। তারাবির সালাত আদায়ের পর পৃথিবী বিখ্যাত বুজুর্গরা সমগ্র রাতব্যাপী নিজেদের আমলের মধ্যে নিয়োজিত রেখেছেন। তাহাজ্জুদ, সাহরি, ফজরের আজান ও সালাত—এ মধুময় ইবাদতের হাটেই রাত কেটে যায় মুমিনের।

আমরা জানি, সাওমের প্রতিটি রাতই গুরুত্বপূর্ণ, বরকতময়। তাজা আমলের রূপলাবণ্যে রাতসিক্ত হয়ে ওঠে মুমিনের ক্রন্দনরোলে। সাওমের দিনে উপবাস থেকে রাত কাটাতে হয় নানা রকম আমলে। দাঁড়িয়ে, বসে, রুকুতে, সিজদায়, কথায়, বলায়, আচরণে, সংযমে মুমিন রাতের প্রতিটি মুহূর্তেই নিজেকে সতেজ অনুভব করেন। আমলের মরুবিয়াবানে যেন পরিশ্রান্ত মুসাফির বান্দা। কেবল শবেবরাত নয়, কেবল শবেকদর নয়- সাওমের প্রতিটি রাতই বরকতের অনন্ত আধার। ইফতারের পর থেকেই মুমিন বান্দার শুরু হয় আমলের সতত প্রশিক্ষণ। আল্লাহকে কাছে পাওয়ার অদম্য বাসনায় নির্জন এই রাতকেই মুমিন সবচেয়ে বড় সুযোগ হিসেবে চিহ্নিত করে এগিয়ে যায়। ঝাঁপিয়ে পড়ে আমলের ময়দানে। তারাবি, তাহাজ্জুদ, কিয়ামুল লাইল, সাহরিসহ কত আমলের সাজানো সাম্পান।

রাতের এই আমল সম্পর্কে নবীজি হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমান অবস্থায় সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে তারাবি ও তাহাজ্জুদ আদায় করবে, আল্লাহ তার পূর্ববর্তী (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (সহিহ বোখারি ও মুসলিম)

শুধু তারাবি সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, রমজানে রাত্রিকালীন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের নাম হলো তারাবির সালাত। (নাসায়ি শরিফ, ১৩০৮)

দরসে তিরমিজির এক বর্ণনায় আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) তারাবি পড়তেন রাতের প্রথম অংশে আর তাহাজ্জুদ পড়তেন শেষ রাতে।

বিশিষ্ট বুজুর্গরা সাওমের পুরো রাতই সালাতে কাটিয়ে দিতেন। আমলের বাইরে কোনো কাজই করতে দেখা যায় না তাদের। কোনো কোনো বুজর্গ রাতকে কোরআন মাজিদের তেলাওয়াতের জন্যও রেখে দিতেন। হাফেজরা সারা রাতই সালাতে বা সালাতের বাইরে কোরআন তেলাওয়াত করে রাতটাকেই যেন সিয়ামণ্ডসাধনাময় করে তুলতেন। আমরা ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর কথা জানি। তিনি প্রতি রাতেই এক খতম কোরআন তেলাওয়াত করতেন।

রাতে কোরআন তেলাওয়াতের যে স্বাদ, তা উপলব্ধি করতে পারেন তারাই, যারা সাওমের আমলের ভেতরে মনোনিবেশ করতে পারেন। সবাইকে সাওমের প্রতিটি রাতকেই মহিমান্বিত ভেবে আমল করা উচিৎ। তাহলেই সফলতা, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে আমরা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারব ইনশাআল্লাহ। নবীজির তো ‘হাত্তা তাওকারামাত কাদামাহু’ সালাতে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা মোবারক ফুলে যেত। হজরত রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী, হজরত হোসাইন আহমদ মাদানী, হজরত আশরাফ আলী থানভীসহ উপমহাদেশের বিশিষ্ট পূর্বসূরীদের জীবনেও এরকম আমল করতে দেখা যায়। তাই প্রত্যেক মুমিনকে সাওমের পূর্ণ সাফল্য লাভে রাতকে কাজে লাগাতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে কোনো সময়কেই হেলা করলে চলবে না। আমলে নিজেকে নিয়োজিত করে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের পথে সংগ্রামী হবো- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আল্লাহতায়ালা আমাদের কবুল করুন, আমিন।

লেখক : প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতু ইকরা দারুল উলুম হবিগঞ্জ [email protected]

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রোজা,রমজান,সাওম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close