মাওলানা মাসউদুল কাদির

  ১৮ মার্চ, ২০২৪

জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত থাকে রমজানে

প্রতিনিধিত্বশীল ছবি

রমজানুল মোবারকের আজ সপ্তম দিন। এখনো চলছে রহমতের দশক। আল্লাহর অপার রহমতের ছায়ায় রয়েছি আমরা।

রহমতের অবারিহত স্নিগ্ধতা হিসেবেই মহান আল্লাহতায়ালা রহমতের দরজা খুলে দেন এ রমজানে। জাহান্নামের শাস্তি বন্ধ রাখা হয়। মানুষের জাতশত্রু শয়তানও নিষ্ক্রীয় থাকে রমজানে। হাদিসেও এসেছে এমন ভাষ্য। নবী (সা.) বলেছেন, রমজান মাসে আল্লাহর রহমতের সঙ্গে সঙ্গে বেহেশতের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়, আর জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর মানুষের চির শত্রু শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (মুসলিম শরিফ)

মানুষ যদি আশাবাদী না হয়- তার প্রতিটি কর্মই হবে নিরাশার চাদরে ঢাকা। এ যে রমজান, নিজের আমলকে শানিত করে পরকাল রঙিন করার একটি বিশেষ সুযোগ আছে। সময়কে কাজে লাগাতে হবে।

আমরা মানুষ। অন্যের উপকারে এগিয়ে যাওয়া আমাদের ধর্ম। ভুলে গেলে চলবে না- মানুষই পৃথিবীর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। পরকালীন সৌন্দর্য লাভের জন্যও আমাদের পরের সেবায় এগিয়ে আসতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তুমি জগদ্বাসীর প্রতি দয়া করো, তবে আল্লাহতায়ালা তোমার প্রতি দয়া করবেন। (বোখারি, মুসলিম ও তিরমিজি)

রহমত, মাগফেরাত আর নাজাতের বার্তা নিয়ে যে পবিত্র মাস আমরা উদযাপন করছি, তা নিতান্তই মানবতাকে জাগিয়ে দেয়। রমজানে আমরা একে অন্যের ভালোবাসা বা টান উপলব্ধি করতে পারি। আল্লাহ যেমন নিজে সিয়ামের প্রতিদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন, তাতে বান্দা পরিশুদ্ধি অর্জন করতে পারে।

সিয়াম অবশ্য কর্তব্য ও পালনীয় হিসেবে মহান আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করে বলেন, হে মুমিনরা, তোমাদের জন্য সাওম ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। (সুরা বাকারা, ১৮৩)

আয়াতের প্রথম অংশে সিয়ামের ফরজ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শেষের দিকে আল্লাহতায়ালা ‘লাআল্লাকুম তাত্তাকুন’ বলে মানবজাতিকে পুতপবিত্র করার সুযোগের কথা উল্লেখ করেছেন। রমজানের রহমত পূর্ণরূপে লাভ করার জন্য বান্দাকে যে অনুশীলন পরিচালনা করতে হয়, তা একটি অবধারিত প্রশিক্ষণ। বছরের অন্য সময় এই প্রশিক্ষণ বান্দার খুব কাজে লাগে। পথ চলতে সহযোগিতা করে।

সিয়াম মূলত ইসলামের পাঁচটি রুকনের মধ্যে সিয়াম একটি। অবারিত রহমতের ছায়া মানবজাতির ওপর ছড়িয়ে পড়ে। প্রকৃতিতে এক ভিন্ন আবহের সূচনা হয়। অন্য এক জায়গায় আল্লাহতায়ালা বান্দাকে আশাবাদী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মানুষ ব্যক্তিগত থেকে রাষ্ট্রীয় জীবনসহ সর্বত্র আশাহত থাকতে পারে না। আশাহত মানুষ পরাভূত হয়। পরাজিত হয়। জিততে পারে না। মানুষকে জীবনে সফল হওয়ার জন্যও আল্লাহর রহমতের আশায় থাকতে হয়। মানুষের তো আর কোনো দরবারে যাওয়ার সুযোগ নেই। যদি আরো কোনো দরবার থাকত, আরো কোনো প্রভু থাকত, তাহলে একজনের কাছে নিরাশ হয়ে অন্যজনের কাছে যেতে পারত। যেহেতু এমন সুযোগ নেই, বান্দাকে এক আল্লাহর কাছেই চির সফলতার জন্য পড়ে থাকতে হবে। এখানেই সফলতা পেতে হবে। এ কথাই মহান আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ; তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা জুমার, আয়াত ৫৩)

রহমতের এই সময়ে রমজানকে কাছে পেয়ে সময় কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না। রহমতে স্নিগ্ধ হতে কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, জিকিরসহ সব কল্যাণমূলক কাজ বাড়িয়ে দিতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক : প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতু ইকরা দারুল উলুম হবিগঞ্জ [email protected]

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ধর্ম ও জীবন,রমজান,জান্নাত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close