জিয়াউদ্দিন রাজু

  ১৩ জানুয়ারি, ২০২১

কেন্দ্রের কঠোর বার্তায়ও দমছেন না ‘বিদ্রোহী’রা

দ্বিতীয় ধাপে ৬১টি পৌরসভায় ভোট হতে যাচ্ছে আগামী শনিবার। এসবের মধ্যে ২০টির বেশি পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রায় অর্ধশত ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মাঠে আছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কঠোর হুশিয়ারি সত্ত্বেও তারা মাঠ ছাড়ছেন না। বেশ কয়েকটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের সংঘর্ষও ঘটেছে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, মেয়র পদে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বাইরে গিয়ে কোনো নেতাকর্মী যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন তাহলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং পরবর্তী কোনো নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাবেন না। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘দলের বিপক্ষে যারাই কাজ করছে তাদেরই দলের পদ থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। কোনোভাবে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। বিদ্রোহীরা দলীয় মনোনয়ন বা দলের বড় পদ না পেলে তৃণমূলের কর্মী হিসেবে এর চেয়ে বড় শাস্তি কী হতে পারে। এ বিষয়টি তারা যখন বুঝতে পারবে তখনই তারা সরে দাঁড়াবে। দলের প্রার্থীর জন্য কাজ করবে।’

নোয়াখালীতে দলের মনোনীত এক প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, নিজ দলের নেতাকর্মীরা তার নির্বাচনী ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছেন। এমনকি তার বাড়িতে হামলা হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন।

জানা গেছে, গত ৩ জানুয়ারি ঝিনাইদহের শৈলকুপায় পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ৮ জন আহত হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে সরোয়ার হোসেন নামের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, গত রবিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশরাফুল আজমের সমর্থকরা মিছিল নিয়ে পাইলট হাইস্কুল মার্কেটে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী তৈয়বুর রহমানের নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে দিয়ে উপজেলা পরিষদের দিকে যাচ্ছিল। ওই সময় দুর্বৃত্তরা মিছিলের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ১১ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ আলী। তার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বিপ্লব (নির্বাচনী প্রতীক নারিকেল গাছ)। স্থানীয় নেতারা জানান, নৌকার প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে রেষারেষি চলছে। যেকোনো সময় এই কলহ সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে।

নাটোরের গুরুদাসপুর ও গোপালপুরে আওয়ামী লীগ মনোনীত এবং দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের প্রচার জমজমাট। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলের ওই ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা। নলডাঙ্গায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হলেন মনিরুজ্জামান মনির। ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী সাহেব আলী জগ প্রতীক প্রচার চালাচ্ছেন। অনেক দেনদরবার করেও তাকে ভোটের মাঠ থেকে সরাতে পারেননি জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। সাহেব আলীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর লোকজন তার কর্মী-সমর্থকদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। বিভিন্ন স্থানে প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

গাইবান্ধা পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবির। দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দল থেকে বহিষ্কৃত তিন নেতা হলেন মো. আহসানুল করিম (চামচ), ফারুক আহমেদ (ক্যারামবোর্ড) ও পৌরসভার বর্তমান প্যানেল মেয়র মতলুবর রহমান (নারিকেল গাছ)। বহিষ্কার করার পরও তারা নির্বাচনী মাঠ ছাড়তে নারাজ। প্রচার চালাতে গিয়ে দলীয় প্রার্থীর লোকজনের সঙ্গে সংঘাতের খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

সুন্দরগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন পৌরসভার বর্তমান মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন (নৌকা)। তার বিপক্ষে প্রার্থী হওয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই সদস্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খয়বর হোসেন মওলা (নারিকেল গাছ) ও দেবাশীষ সাহা (মোবাইল ফোন)। এ নিয়ে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মতিউর রহমান মতির বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর শাহী সুমন। দুই প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে স্থানীয় নেতাকর্মীরা উত্তেজিত। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সুমনকে দলের সব কর্মকান্ড থেকে অব্যাহতি দিয়ে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির করেছে সুপারিশ করেছে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন মেয়র শফি আলম ইউনুছ, আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ ও শফিউল আলম শফি। কেন্দ্রের মনোনয়ন বোর্ড অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদকে মনোনীত করে। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় বর্তমান পৌর মেয়র শফি আলম ইউনুছকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা বলেছেন, বর্তমান মেয়রের প্রভাবে দলীয় প্রার্থী কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আওয়ামী লীগ,বিদ্রোহী প্রার্থী,পৌরসভা নির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close