গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

জয়-পরাজয়ের হিসাবে ব্যস্ত জোট-মহাজোটের নেতারা

সাঙ্গ হলো প্রচার

শেষ দিনেও নৌকা-ধানের শীষের পরস্পরবিরোধী অভিযোগ

আজ শুক্রবার সকাল ৮টার আগেই বন্ধ হয়ে গেছে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের সব ধরনের প্রচার। এর মাধ্যমে শেষ হলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা।

টানা ১৮ দিনের প্রচার শেষে অঙ্ক মেলাতে ব্যস্ত রাজনৈতিক প্রধান দুই জোটের (মহাজোট ও ২০ দলীয় জোট) পাশাপাশি অন্য জোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ভোটারদের পক্ষে টানতে কতটুকু প্রতিশ্রুতি দিতে পেরেছেন তারও হিসাব-নিকাষ চলতে থাকবে আগামীকাল শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত। কারণ রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যাংকও বন্ধ রাখা হয়েছে ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। যানবাহন চলাচলের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কমিশনের অনুমোদিত পরিচয়পত্রধারীর বাইরে কোনো যান চলাচল করবে না।

নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এর পাশাপাশি অনিবন্ধিত অনেক রাজনৈতিক দল প্রধান দুই জোটের সঙ্গে এ নির্বাচনে লড়ছেন। এর বাইরে বাম মোর্চা ও ইসলামী কয়েকটি দলের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। এত কিছুর পরও আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটে মূল লড়াই হবে নৌকা-ধানের শীষের মধ্যে। ভোটের লড়াইয়ে যারা বিজয়ী হবেন তারই আগামী ৫ বছর সরকার পরিচালনা করবেন। তবে প্রচার শেষ হলেও নৌকার চেয়ে প্রচারে পিছিয়ে ছিলেন ধানের শীষের প্রার্থীরা। এবার বিএনপি ব্যাপকভাবে প্রচার চালাতে পারেনি। তবে নৌকা-ধানের শীষের প্রতীক থাকার কারণে কেন্দ্র গিয়েই ভোটারদের পছন্দের প্রতীক ও প্রার্থীকে চিনে নিতে বেগ পেতে হবে না।

প্রচার নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে বক্তব্য রেখেছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল অভিযোগ করে বলেছেন, ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে না যেতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা। একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে। এ দুই জোট নির্বাচন নিয়ে যাই বলুক না কেন, নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে সাধারণ ভোটার, প্রার্থী ও বিদেশি কূটনীতিক মিশনগুলো। বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে তার দফতরে সাক্ষাৎ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বরার্ট মুলার বলেন, গত এক সপ্তাহে নির্বাচনের প্রচারে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে।

এদিকে, গতকাল প্রচারণার শেষ দিনে সাতক্ষীরার শ্যামনগরসহ অনেক সংসদীয় আসনে সহিংতার খবর পাওয়া গেছে। সাতক্ষীরা-৪ আসনে নৌকা ও কুলা প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিন বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিশেষ করে জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রথম শ্রেণির নেতাদের গ্রেফতার বেশি করা হচ্ছে বলেও দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

একই ধরনের অভিযোগ করা হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য আকতারুজামান বলেন, বগুড়াসহ অনেক জেলায় বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপরে হামলা চালাচ্ছেন। এ সময় পর্যন্ত প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়ে তাদের পাঁচজন নেতা নিহত হয়েছেন।

ফলে শেষ দিনের প্রচারণায় ভোট উৎসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে নানা শঙ্কা। কিন্তু নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে, নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। আর নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, একদিনে ৩০০ আসনে নির্বাচন করা বড়ই চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আছে বলে আমি মনে করি না। রাজনৈতিক চাপ ও উত্তেজনা বিরাজ করতে পারে। তবে তিনি বলেন, নির্বাচনে সহিংসতারোধে মাঠে দায়িত্ব পালন করা র‌্যাব ও বিজিবি এসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে সেখানে হস্তক্ষেপ করবে সেনাবাহিনী।

এদিকে, নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র ও কক্ষের নিয়ন্ত্রণে আজ থেকে মাঠে নামছে পুলিশ-আনসার। এর আগে গত ২৬ ডিসেম্বর মাঠে নামে র‌্যাব। এর আগে ২৪ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী এবং গত ২০ ডিসেম্বর মাঠে নামে বিজিবি। তিন স্তরের নিরাপত্তায় টহল দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুরো নির্বাচনের এলাকা সেই অর্থে বলা যায়, নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো থাকবে।

এর আগে নির্বাচনপূর্ব অনিয়ম রোধে ১২২টি নির্বাচন তদন্তে কমিটির জন্য ৩০০ সংসদীয় আসনের বিপরীতে ২৪৪ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছে। আজ থেকে আরো ৬৪০ জন প্রথম শ্রেণির বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নামছেন। ভোটগ্রহণের আগে-পরে পাঁচ দিন মাঠে থাকবেন। এছাড়া প্রার্থীদের আচরণ বিধি লঙ্ঘনের কারণে ৬৭৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনী অভিযোগের বেশিরভাগই পুলিশ ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে ‘আইনানুগ ব্যবস্থা’ নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রশাসন ও পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিজ কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এছাড়া অর্ধ শতাধিক অভিযোগ তদন্ত করার জন্য নির্বাচন তদন্ত কমিটির কাছে পাঠিয়েছে ইসি। এর মধ্যে বেশিরভাগ অভিযোগের সত্যতা পায়নি বলে জানিয়েছে কমিটিগুলো।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের চাহিদা ১৯৩৭, পাওয়া গেছে ৬৭৬ জন : ইসি সূত্রে জানা গেছে, এবার নির্বাচনে আচরণবিধি প্রতিপালনে মাঠ পর্যায়ে ১ হাজার ২০০ জন ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। তবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, র‌্যাব ও পুলিশের মোবাইল ও স্ট্রাইকিং টিমের সঙ্গে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দেয়ার জন্য অতিরিক্ত ১ হাজার ৯৩৭ জনের চাহিদা দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল ইসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬৭৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, চাহিদা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের একাধিক টিম একসঙ্গে টহল দেবে। একসঙ্গে তারা অ্যাকশনে যাবে। তিনি জানান, চাহিদা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়া গেলে প্রতিটি টিম আলাদাভাবে অ্যাকশনে যেতে পারত।

প্রথমবার জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার : প্রথমবারের মতো এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ করা হবে। আসনগুলো হচ্ছে ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ এবং সাতক্ষীরা-২ আসন। এসব আসনের ৮৪৫টি কেন্দ্রের ৫ হাজার ৩৮ ভোটকক্ষে এ মেশিন ব্যবহার করা হবে। এ ছয়টি আসনে ভোটার সংখ্যা ২১ লাখ ২২ হাজার। গতকাল বৃহস্পতিবার এসব আসনে মক ভোটিং অনুষ্ঠিত হয়।

মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ : নির্বাচনে অবৈধ লেনদেন বন্ধে আজ ২৮ ডিসেম্বর বিকাল ৫টা থেকে আগামী ৩০ ডিসেম্বর বিকাল ৫টা পর্যন্ত সব ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ থাকবে। নির্বাচন কমিশন একটি রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রচার,জয়-পরাজয়,অভিযোগ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close