এম এ জলিল

  ০৪ মার্চ, ২০২৪

সংগ্রামে উত্তাল এই মাস একদিনে আসেনি

মার্চ মাস বাংলাদেশের রাজনীতিতে অতিগুরুত্বপূর্ণ। এ মাসের প্রথম সপ্তাহে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন ও স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণও এ মাসেই। সংগ্রামে উত্তাল এই অগ্নিঝরা মার্চ একদিনে আসেনি।

অবিভক্ত বাংলার নেতা ও শেষ প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী ও যুবনেতা শেখ মুজিবুর রহমান- তাদের নেতৃত্বে ইংরেজদের তাড়িয়ে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় ১৯৪৭ সালে ১৪ আগস্ট। স্বাধীনতার ৬ মাস পর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ইংরেজবিরোধী আন্দোলনকে ম্লান করে দিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে যে বাঙালিরা কাজ করেছিল, সেই সমর্থকদের ৫৫ শতাংশ বাঙালির মাতৃভাষা বাংলাকে বাতিল করে ১৪ শতাংশের ভাষা উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করতে চেয়ে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে ভাষণ দেন জিন্নাহ। এই ভাষণের বিরোধিতা করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাংলার যুব ও ছাত্রসমাজ।

১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানের সচিবালয় ঘেরাও করা হয়। সেদিন পাকিস্তানের পুলিশ বাহিনী শেখ মুজিবসহ ২ শতাধিক ছাত্র যুবককে গ্রেপ্তার করে। সেই থেকে বাঙালিদের মাতৃভাষা বাংলার জন্য আন্দোলন শুরু হয়। ভাষা আন্দোলনে যেসব রাজনীতিবিদ ও যুব ছাত্রনেতারা সমর্থন দিয়েছিলেন, তারা হলেন শেরেবাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান, প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম, বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী, ভাষাসংগ্রামী বাহাউদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ তোহা, অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত, অ্যাডভোকেট গাজীউল হক, আবদুল মতিন, অলি আহাদ, অ্যাডভোকেট কাজী গোলাম মাহবুব, মহিউদ্দিন আহমদ, তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীসহ আরো অনেক ব্যক্তিরা। এসব নেতার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতা-যুবকদের আন্দোলনরত মিছিলে পাকিস্তান পুলিশ বাহিনী গুলি চালায় গুলিতে সালাম, রফিক, শফিক, জব্বার ও বরকত শহীদ হন। মাতৃভাষা বাংলার পক্ষে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়। ভাষাশহীদের স্মরণে আবদুল গফ্ফার চৌধুরী গান রচনা করেন আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী ও যুবনেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে জয়যুক্ত হয় যুক্তফ্রন্ট এবং শেরেবাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী হন এবং পরে শেরেবাংলা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বাংলা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা, বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা, ভাষাশহীদ দিবস ও বাঙালিদের চেতনার ১ বৈশাখ সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় শেখ মুজিবুর রহমান ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের লাহোরে বাঙালিদের মুক্তির সনদ ৬ দফা ঘোষণা করেন। ৬ দফা ঘোষণার পর ১৯৬৮ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে ১ নম্বর আসামি করে আগোরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খান। এই মামলার প্রতিবাদে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব অভিযুক্ত মুক্তি পায়। মুক্তিপর ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে রেসকোর্স ময়দানে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষে ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ জয়যুক্ত হয়। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা না দিয়ে বাঙালি নিরস্ত্র জনগণের ওপর যুদ্ধে চাপিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৯ মাসের যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হয়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকার বৈষম্যহীন সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে সম্মত হয়। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী ৭১ ও ৭৫ সালের ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। হত্যার ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুর তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সরকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হয়েছে, স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচার হয়েছে। এখন যে কাজটি বিশেষভাবে প্রয়োজন বৈষম্যহীন সর্বজনীন শিক্ষা চালু করা। যে শিক্ষানীতিতে রাখতে হবে প্রাইমারি স্তরে শুধু ভাষা জ্ঞানে পারদর্শী হওয়া। যেমন : মাতৃভাষা বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ অঙ্ক। প্রাইমারি স্তরের পর উচ্চপর্যায়ে যারা লেখাপড়া করতে চান, তারা কারিকুলাম বা শিক্ষানীতি অনুযায়ী করবে। সে সুনাগরিক হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাংলাদেশ গড়বে এবং শিক্ষিত জাতি নির্মাণ করবে। আসুন আমরা উন্নতসমৃদ্ধ পরিবেশবান্ধব দেশ তৈরি করি। অন্যদিকে যারা দেশের সংবিধান, নির্বাচন, গণতন্ত্র, আইন মানে না তাদের বর্জন করি। সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া, তারেক জিয়ার রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশকে আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও মানবিক দেশ গড়ি। তবেই ভাষাশহীদ ও মুক্তিযুদ্ধের বীরসৈনিকদের প্রতি সম্মান দেখানো হবে।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অগ্নিঝরা মার্চ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close