reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৪ জুন, ২০২১

কখন রক্ত দেয়া যাবে কখন যাবে না, জেনে নিন

ফাইল ছবি

রক্তদান করলে শুধু অন্যজনের উপকার হয় না, আপনি নিজেও উপকার পাবেন। প্রথম হলো মানসিক শান্তি। আপনার রক্তে জীবন ফিরে পেয়েছেন কেউ- ভাবুন এটা কতটা পরোপকারী কাজ। তাই অনেকেই রক্তদানে উৎসাহী। কিন্তু যখন-তখন সময়ে একজন মানুষ রক্ত দিতে পারে না। রক্ত দেওয়ার আগে কিছু বিষয় রয়েছে যা মানতে হয়।

সুস্থ, সবল, নিরোগ একজন মানুষ প্রতি ৪ মাস অন্তর রক্ত দিতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রক্তদানের ফলে রক্তদাতার শারীরিক কোনো ক্ষতি হয় না। রক্তের লোহিত কণিকার আয়ু ১২০ দিন। অর্থাৎ আপনি রক্ত দিন বা না দিন ১২০ দিন পর লোহিত কণিকা আপনা আপনিই মরে যায়। সেখানে জায়গা করে নেয় নতুন লোহিত কণিকা। রক্তের আর উপাদানগুলোর আয়ুষ্কাল আরও কম।

দেহের মোট ওজনের আট ভাগই রক্ত। আর রক্তের ৫৫ ভাগই হলো রক্তরস বা প্লাজমা, যার ৯০ ভাগই আসলে পানি। সুতরাং আপনি যে রক্ত দেন তার ওজন এক পাইন্টের কম হলেও আসলে এর অর্ধেকটাই পানি। এজন্যেই রক্ত দেয়ার আগে এবং পরে চিকিৎসকেরা পর্যাপ্ত পানি খেতে বলেন (অন্তত ৫০০ মিলিলিটার)। তাহলেই রক্ত দেয়ার পর ক্ষয়টা দ্রুত পুষিয়ে যায়।

প্রোটিন ও শর্করাজাতীয় খাবার : বেশ পরিমাণ প্রোটিন এবং শর্করা আছে এমন খাবার ও পানীয় খেতে পারেন। যেমন, জুস বা শরবত। অধিকাংশ ল্যাবে রক্তদানের পরপরই আমরা ডোনারদের গ্লুকোজ দিয়ে থাকে। এটা খুবই উপযোগী।

ধূমপান ও মদ্যপান : রক্তদানের পরপরই ধূমপান ও মদ্যপান করবেন না।ব্যায়াম ও শারীরিক কসরত : রক্তদানের পরপরই যেকোনো ধরনের ব্যায়াম যেমন, জিমন্যাসিয়াম এবং নাচ বা দৌঁড়ের মতো শারীরিক কসরতের কাজ করবেন না।

জ্ঞান হারিয়ে ফেললে যা করণীয় : রক্তদানের পর কাউকে কাউকে অজ্ঞান হয়ে যেতে দেখা যায়। এটা হয় সাধারণত লো ব্লাড প্রেসারের কারণে। ঘাড়ের ধমনীতে ব্যারোরিসিপটর নামে বিশেষ একধরনের নার্ভসেলের কারণে রক্ত দেয়ার পর পরই দেহে খবর হয়ে যায় যে, রক্তচাপ কমে গেছে। এই শূন্যতা পূরণের জন্যে রক্তকণিকাগুলো তখন সংকুচিত হয় এবং রক্তচাপকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। আর রক্ত দেয়ার পর পরই কেউ যদি দ্রুত উঠে যান বা হাঁটতে শুরু করেন, তখন আকস্মিক রক্তচাপ নেমে যাওয়ার ফলে কারো কারো শরীরটাকে হালকা মনে হতে পারে, অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে ইত্যাদি। এটাকে এড়ানোর জন্যে যা করতে পারেন তাহলো, রক্ত দেয়ার পর পরই না উঠে কিছুক্ষণ সটান হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে, এসময় মাথার নিচে যেন কোনো বালিশ বা উঁচু কিছু না থাকে। কারণ মাথাটাকে রাখতে হবে হার্টের লেভেলে, যাতে হার্ট থেকে ব্রেনে পর্যাপ্ত রক্ত যেতে পারে। আর নামার আগে কিছুক্ষণ পা ঝুলিয়ে বিছানায় বসে থাকতে পারেন। আর তারপরও যদি আপনার কোনো অসুবিধা হয়, সেটা দেখার জন্যে আমাদের রয়েছেন উপস্থিত চিকিৎসকগণ।

অপেক্ষা করতে হয় কেন : একবার রক্ত দেয়ার পর পরবর্তী চার মাস পর আপনি আবার রক্ত দিতে পারবেন। এ সময়ের মধ্যে সাধারণত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা আগের অবস্থায় ফিরে যায়। প্রশ্ন হলো, কেন এ সময়টা লাগে? আসলে শ্বেতকণিকা বা অনুচক্রিকার ক্ষয়টা পূরণ হয়ে গেলেও লোহিতকণিকার ক্ষয় পূরণ হতে কিছুটা সময় লাগে। আর লোহিত কণিকার সাথে সুস্থতার একটা সম্পর্ক আছে। কারণ লোহিত কণিকায় থাকে হিমোগ্লোবিন অণু, যার প্রধান কাজই হলো সারাদেহে অক্সিজেন বয়ে নিয়ে যাওয়া। আর হিমোগ্লোবিনে থাকে আয়রন, রক্ত দেয়ার সময় যা কিছুটা হারায়। এটা পূরণ করার জন্যে তখন একদিকে দেহের লৌহভাণ্ডার বেশি বেশি ব্যবহৃত হয়, অন্যদিকে খাবার এবং পানীয় থেকে তৈরি হতে থাকে বেশি বেশি আয়রন। কখন রক্তদান করা যাবে না-

১. এইচআইভি, হাইপারটেনশন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, মৃগীরোগ বা হেপাটাইটিস থাকলে।

২. ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার কমপক্ষে এক বছর না হওয়া পর্যন্ত রক্ত দেয়া যাবে না। কারণ এক বছর পর্যন্ত ম্যালেরিয়ার জীবাণু শরীরে থাকতে পারে।

৩. আপনার দেহে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পর্যাপ্ত না থাকলেও সাময়িক সময়ের জন্যে আপনাকে রক্তদানে বিরত থাকতে হবে। পুরুষদের ক্ষেত্রে এটা ১২.৫ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে এটা ১৩।

৪. আকুপাংচার, কান ফুটো বা ট্যাটু করাবার সাথে সাথেই রক্তদান করা যাবে না। তাছাড়া সে সুঁই দিয়ে করা হয়েছে, তা জীবাণুমুক্ত ছিল কি না- এটা যদি নিশ্চিত জানা না থাকে তাহলে একবছর অপেক্ষা করতে হবে।

৫. ফ্লুতে আক্রান্ত হলে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

৬. গর্ভবতী এবং সদ্য প্রসব করেছেন এমন মায়েরাও রক্তদান করতে পারবেন না।

৭. ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তি রক্তদান করতে পারবেন না। তবে অন্যান্য ক্যান্সারে আক্রান্ত কেউ তার সর্বশেষ সার্জারি, কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের পাঁচ বছর অতিক্রম হওয়ার পর রক্তদান করতে পারবেন।

৮. রক্তদানের ২৪ ঘণ্টার পূর্বে যদি কেউ মদ্যপান করে।

৯. নিজের দেহে রক্ত নিলে অন্তত একবছর অপেক্ষা করতে হবে।

১০. বিদেশে গেলে ফিরে আসার পর কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

১১. দাঁত বা মুখের কোনো অপারেশন হলে অপেক্ষা করতে হবে।

১২. ধূমপান করার চার ঘণ্টা পর্যন্ত রক্তদান করা যাবে না।

১৩. বড় কোনো সার্জারি হয়ে থাকলে কমপক্ষে ৬ মাস এবং ছোট সার্জারি হলে কমপক্ষে ২ মাস অপেক্ষা করতে হবে।

১৪. এন্ডোস্কোপি করাবার পর কমপক্ষে চার মাস পর্যন্ত রক্তদান করা যাবে না।

পিডিএসও/ইউসুফ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রক্তদান,মানসিক শান্তি,পরোপকারী কাজ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close