reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৫ মার্চ, ২০২৪

জলদস্যুদের বোর্ডিং থেকে কেবিনে ফিরলেন নাবিকরা

ছবি : সংগৃহীত

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে থাকা বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের বোর্ডিং থেকে জাহাজের নিজ নিজ কেবিনে ফেরত পাঠিয়েছে বলে দাবি করছে জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির গ্রুপ। বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যায় কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আসছে, জলদস্যুদের বোর্ডিং থেকে নাবিকদের জাহাজে যার যার কেবিনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে এর ঘণ্টাখানেক আগে এক অডিওবার্তায় ওই জাহাজের এক নাবিক জানিয়েছেন, তাদের একটি ওয়াশরুমে অস্ত্রের মুখে বন্দি রাখা হয়েছে।

অডিও বার্তায় ওই নাবিক বলেন, আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে জলদস্যুরা। আমি ওয়াশরুম থেকে ভয়েস দিচ্ছি। ওরা সাত-আটজন আছে। ওদের ডেরায় নিয়ে যাবে আমাদের। ওদের সবার কাছে গান (অস্ত্র) আছে।

এভাবেই নিজের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের নাবিক।

জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন, জাহাজটি নৌপথে পণ্য পরিবহন করে থাকে। সোমালিয়ান জলদস্যুর হাতে আটক হওয়া জাহাজটি থেকে আরেকটি কোম্পানির জাহাজে কর্মরত চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকার আরমান হোসেন বাবু নামের একজনের কাছে অডিওবার্তায় ওই নাবিক (নাম জানা সম্ভব হয়নি) বলেন, আমরা মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে দুবাইয়ের পথে যাচ্ছিলাম। ওরা (জলদস্যু) দুই মাস আগে ইরানি একটি ফিশিং বোট আটক করেছিল। ওটা আমাদের জাহাজের সঙ্গে বর্তমানে বাঁধা আছে। ওটা থেকেই মূলত জলদস্যুরা আমাদের আক্রমণ করে। ওই ফিশিং বোটটা ওরা হয়তো ছেড়ে দেবে। ওই বোটের জন্য আমরা ডিজেল দিলাম। আমাদের নিয়ে ওরা হয়তো ওদের আস্তানায় চলে যাবে।

এদিকে ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজটিতে ২৩ জন নাবিক ও ক্রু রয়েছেন। জলদস্যুদের কবলে পড়া এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে ২৫ দিনের মতো খাবার রয়েছে। এ ছাড়া জাহাজটিতে বিশুদ্ধ পানি রয়েছে ২০০ টন।

জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন। যার নাম এমভি আবদুল্লাহ, পণ্যবাহী জাহাজটি কয়লা নিয়ে ভারত মহাসাগর হয়ে মোজাম্বিক থেকে আরব আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। গন্তব্য ছিল দুবাই। বুধবার (১৩ মার্চ) মালিকপক্ষ জিম্মি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাবিকদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান।

কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনার পর থেকে প্রথমে নাবিকদের সুরক্ষার বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। জলদস্যুরা নাবিকদের কোনো ক্ষতি করেনি। তারা সুস্থ আছেন। জাহাজে নাবিকদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আসলে এটি নিয়ে বিচলিত হওয়ারও কিছু নেই। এ রকম ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে। আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতাও আছে। আমরা আশা করছি, অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নাবিক ও জাহাজটি ফিরিয়ে আনতে পারবো।

এদিকে জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিকউল্লাহ খান এক অডিও বার্তায় মঙ্গলবারই জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের কর্মকর্তাদের কাছে কী পরিমাণ খাবার ও পানি আছে জাহাজে; এসব তথ্য জানিয়েছেন। জাহাজটি জলদস্যুরা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরপরই তাদের এ বার্তা পাঠান তিনি।

আতিকউল্লাহ খান অডিও বার্তায় বলেন, আমাদের জাহাজে ২০–২৫ দিনের রসদ (খাবার) আছে। ২০০ টন বিশুদ্ধ পানি আছে। আর জাহাজে রয়েছে ৫৫ হাজার টন কয়লা। রসদ যাতে দ্রুত ফুরিয়ে না যায়, সে জন্য অপ্রয়োজনে ব্যবহার না করার জন্য সবাইকে জানানো হয়েছে।

মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা।

জাহাজটির মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাহাজটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া কবির গ্রুপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এখনও জলদস্যুরা যোগাযোগ করেনি। এ হিসেবে মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত এই খাবার দিয়ে চলতে হবে জাহাজের নাবিক ও দস্যুদের।

ভুক্তভোগী পরিবাবের সদস্যরা জানিয়েছেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বস্ত করছে, কিন্তু আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না। তারা আমাদের কাছে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন।’

যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন (ইউকে এমটিও) তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে এ ঘটনা ঘটেছে। দুটি নৌযানে (একটি বড় এবং আরেকটি ছোট) চড়ে জাহাজটির কাছাকাছি এসে জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ইউকে এমটিও সমুদ্র চলাচলকারী অন্য জাহাজগুলোতে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতে বলেছে।

জানা গেছে, জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাঁচার আকুতি জানিয়ে এরইমধ্যে অডিও বার্তা দিয়েছেন তারা।

জিম্মি হওয়া ক্রুরা হলেন: ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ, চিফ অফিসার মোহাম্মদ আতিকুল্লাহ খান, দ্বিতীয় কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী, তৃতীয় কর্মকর্তা মো. তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী এএসএম সাইদুজ্জামান, দ্বিতীয় প্রকৌশলী মো. তৌফিকুল ইসলাম, তৃতীয় প্রকৌশলী মো. রোকন উদ্দিন, চতুর্থ প্রকৌশলী তানভীর আহমদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ, এ বি মো. আনোয়ারুল হক, এ বি মো. আসিফুর রহমান, এ বি সাজ্জাদ হোসেন, ও এস জয় মাহমুদ, ও এস মো. নাজমুল হক, ও এস আইনুল হক, অয়েলার মোহাম্মদ শামসউদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশারফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস মো. নূর উদ্দিন ও ফিটার মো. সালেহ আহমেদ। তাদের মধ্যে ১১ জন চট্টগ্রামের ও দুজন নোয়াখালীর। বাকিরা ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, খুলনা, নেত্রকোনা, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বরিশালের।

এর আগে ২০১০ সালে একই গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি জাহান মণি ছিনতাই হওয়ার তিন মাস পর মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছিল গ্রুপটি। আবার কোনো জাহাজ ছয় থেকে আট মাস পর মুক্ত হওয়ার নজির রয়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নাবিক,জলদস্যু
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close