পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা

  ০১ জুন, ২০১৯

নতুন-পুরোনোয় আস্থা মোদির

ভোটযুদ্ধের সেনাপতির হাতে এবার দেশের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব। নির্বাচনে জেতার পর এবার অমিত শাহের হাতে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ভার দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রতিরক্ষা দফতর গেল রাজনাথ সিংয়ের কাঁধে। এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেছেন রাজনাথ। আর নরেন্দ্র মোদির প্রথম দফার কার্যকালে প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থাকা নির্মলা সীতারমনকে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব।

বিদেশ দফতর সামলাবেন দেশের সাবেক বিদেশ সচিব এস জয়শঙ্কর। সুষমা স্বরাজের উত্তরসূরি হলেন ড. এস জয়শঙ্কর। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকছে মহাকাশ, পরমাণু, কর্মীবর্গ, জন অভিযোগ। পেনশন, গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণের দায়িত্বেও তিনিই থাকবেন। অরুন জেটলি অসুস্থ, তিনি আর মন্ত্রি হতে চাননি, তাই নির্মলা সীতারমনকে দেওয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রক ও করপোরেট সংক্রান্ত মন্ত্রকের দায়িত্ব। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শপথগ্রহণের পর শুক্রবার দুপুরের মধ্যেই দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। আমেঠিতে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে হারিয়ে জায়ান্ট কিলার আখ্যা পাওয়া স্মৃতি জুবিন ইরানি পেয়েছেন, নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রক। আগের মন্ত্রিসভায় বস্ত্র মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন স্মৃতি জুবিন ইরানি। হর্ষ বর্ধনকে দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের দায়িত্ব।

এছাড়াও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ভূবিজ্ঞান দফতরের দায়িত্বও তার। প্রকাশ জাভড়েকর পেয়েছেন পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্ব। পীযুষ গয়াল আগের মতোই রেল মন্ত্রকের দায়িত্বে এলেন। সঙ্গে রয়েছে শিল্প-বাণিজ্যও। ধর্মেন্দ্র প্রধানের দায়িত্বে পেট্রলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের দায়িত্ব। ইস্পাত মন্ত্রকের দায়িত্বেও তিনি। মুখতার আব্বাস নকভী পেয়েছেন সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব। রবিশঙ্কর প্রসাদের দায়িত্বে আগের মতোই আইন মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হলো। সঙ্গে যোগাযোগ, বৈদ্যুতিক ও তথ্যপ্রযুক্তির দায়িত্ব।

মন্ত্রিসভার নতুন মুখ রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্ক পেলেন মানবসম্পদ উন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব। ঝাড়খন্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা পেয়েছেন আদিবাসীবিষয়ক মন্ত্রক। গিরিরাজ সিংহ, বেগুসরাই থেকে কানহাইয়া কুমারকে পরাজিত করেছেন তিনি। গিরিরাজ পেলেন পশুপালন, ডেইরি ও মৎস্য দফতরের দায়িত্ব। পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল থেকে দ্বিতীয়বার সংসদে নির্বাচিত গায়ক-নায়ক বাবুল সুপ্রিয় পেয়েছেন বন, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জ থেকে এবারই প্রথম সংসদে নির্বাচিত দেবশ্রী চৌধুরী পেয়েছেন নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। জিতেন্দ্র সিংহ উত্তর-পূর্ব ভারত উন্নয়ন, প্রধানমন্ত্রীর দফতর, কর্মীবর্গ, গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণ, মহাকাশ, পরমাণু দফতরের স্বাধীন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। আর উত্তর পূর্বের, কিরেন রিজিজু যুবকল্যাণ, ক্রীড়া, সংখ্যালঘু দফতরের স্বাধীন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের ১৮ জন সংসদ সদস্য। অথচ বাংলা থেকে মাত্র দুজনকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। পূর্ণমন্ত্রীও পায়নি পশ্চিমবঙ্গ। বাংলার সঙ্গে যে অবিচার করা হয়েছে তা কার্যত মেনে নিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তার কথায়, ১৮-এ মাত্র দুই কম মনে হয়েছে, দিল্লিতে শুনিয়ে এসেছেন। ২০২১ সালে বাংলা দখলের পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। অথচ সেই বাংলায় ১৮ জন বিজেপি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও মাত্র দুজনকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। এ নিয়ে এরই মধ্যে রাজ্য বিজেপির অন্দরে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। বাংলাকে বঞ্চনার অভিযোগও উঠেছে।

তবে আগামী দিনে মন্ত্রীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে, আশাবাদী দিলীপ ঘোষ। তার কথায়, বাবুল সুপ্রিয় ও দেবশ্রী চৌধুরীও শপথ নিয়েছেন। পরে আরো গুরুত্ব দেওয়া হবে বাংলাকে। হতাশ হওয়ার কারণ নেই।

আর এর মধ্যে দেশজুড়ে সংবাদ মাধ্যমে আলোচনায়, ওড়িশার মোদি, প্রতাপ চন্দ্র সারঙ্গী। মন্ত্রী বললে যেরকম মনে হয়, ঠিক তেমন নন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শপথগ্রহণে ৫৬ নম্বরে নাম ডাকা হয়েছে তার। শপথ নিয়েছেন প্রতাপ চন্দ্র। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পশুপালন, ডেইরি, মৎস্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী তিনি। সাদামাটা এই মানুষটি নতুন পাঞ্জাবি কিনেছিলেন শপথের জন্যই। তিনি মঞ্চে আসতেই দর্শকরা ফেটে পড়েছেন হাততালিতে। একেবারেই সরল সাদাসিধে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরা, মাথার চুল উসকো খুসকো, হাওয়ায় উড়ছে, অনেকেই অবাক চেয়েছিলেন বছর চৌষট্টির মানুষটির দিকে। প্রতাপ চন্দ্র সারঙ্গী, ওড়িশার বালেশ্বরের সংসদ সদস্য। বিজেডি প্রার্থী রবীন্দ্র কুমার জেনাকে ১২ হাজার ৯৫৬ ভোটে হারিয়েছেন। বালেশ্বরের এক খড়ের চালার বাড়িই তার স্থায়ী ঠিকানা। পোশাক-আশাক ও চলাফেরাও সাধারণ। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করলেও বাহন তার একমাত্র সাইকেল। প্রচারও চালিয়েছেন সাইকেলে চড়ে। তার রাজ্যের মানুষ তাকে ‘ওড়িশার মোদি’ হিসেবে সম্বোধন করেন।

ওড়িশা উপকূলের রাজনীতির মানুষ তিনি। গণশিক্ষা মন্দির যোজনার অধীনে ময়ূরভঞ্জ ও বালেশ্বরের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় দুস্থ শিশুদের জন্য অনেক স্কুলও গড়েছেন প্রতাপ চন্দ্র সারঙ্গী। পাড়ার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাই অবিবাহিত প্রতাপের দেখাশোনা করে। হলফনামায় জানিয়েছেন, কোনো ঋণ নেই তার। নেই কোনো গহনাও। সামান্য স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। একবার নির্বাচনের আগে প্রতাপ চন্দ্র সারঙ্গী বিজেপির দেওয়া মনোনয়নের নথিটি হারিয়ে ফেলেছিলেন। কারণ তিনি বেসরকারি বাসে যাতায়াত করেন। তাই শেষপর্যন্ত নির্দল প্রার্থী হিসেবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। পরে যোগ দেন বিজেপিতে। তাকে নিয়ে মিডিয়া থেকে সোশ্যাল মিডিয়া সব জায়গা সরগরম।

অন্যদিকে মন্ত্রিসভা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও উন্মাদনা সুষমা স্বরাজকে ঘিরেও। সদ্য সাবেক বিদেশমন্ত্রী সুষমা, স্বাস্থ্যের কারণেই আর মন্ত্রী হতে রাজি হননি। কিন্তু, কেন্দ্রের কোনো ক্যাবিনেট মন্ত্রী তার দফতর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন আর তা দেখে কার্যত শোকস্তব্ধ হয়ে গিয়েছেন নেটিজেনরা। স্বজনকে আর হাতের কাছে না পাওয়ার যন্ত্রণা, নেটিজেনদের বিঁধছে প্রতি মুহূর্তেই। প্রথম মোদি সরকারের বিদেশমন্ত্রী হয়ে সুষমা স্বরাজ ভারতীয়দের কাছে হয়ে উঠেছিলেন কার্যত নয়নের মণি। নেটিজেনরা সুষমা সুষমাকে লিখেছেন, আপনাকে মিস করব।

টুইটে সাবলীল, স্বচ্ছন্দ সুষমাই সরকারকে আক্ষরিক অর্থে পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন আমজনতার হাতে। যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে, টুইট করতে দ্বিধা করতেন না। কোনো সমস্যায় পড়ে গত পাঁচ বছরে যখনই বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে কোনো ভারতীয় টুইট করেছেন, আলোর গতিতে তার জবাব দিয়েছেন সুষমা স্বরাজ। দাঁড়িয়েছেন ত্রাতার ভূমিকায়। বিপন্নের পাশে দাঁড়াতে বিন্দুমাত্র দেরি হয়নি তার। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে সুষমা স্বরাজ কার্পণ্য করেননি কখনো।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মোদির মন্ত্রিসভা,নরেন্দ্র মোদি,ভারত,রাজনাথ সিং
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close