মো. মোহাইমিনুল

  ০৮ মে, ২০২১

বন্ধু নির্বাচনে আমরা কতটা সচেতন?

‘আমরা বন্ধুর কাছ থেকে মমতা চাই, সমবেদনা চাই, সাহায্য চাই ও সেই জন্যই বন্ধুকে চাই।’-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আমরা পরিবারে জন্মগ্রহণ করি, বেড়ে উঠি সমাজে। বয়সের সাথে সাথে আমাদের চলাচলের পথের প্রশস্ততা বৃদ্ধি পেতে থাকে। পথ চলা তখনই সহজ হবে যখন একজন বন্ধু হিসেবে পাশে থাকবে আমাদের। বন্ধু শব্দটির ব্যাপ্তি শিশুকাল থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। সমাজে আমরা কখনোই একা চলতে পারি না। নিত্য ওঠাবসা করতে হয় নানা শ্রেণির মানুষের সঙ্গে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে পরিচিত হতে হয় মানুষের সঙ্গে। কিন্তু, একটি বিশ্বস্ত হাতের ছোঁয়া সবসময় সকলের সাথে থাকা একটি বিরাট আশীর্বাদ স্বরূপ। একজন প্রকৃত বন্ধুই সেই বিশ্বস্ত হাতের ছোঁয়া দেয় আমাদের। সময়-অসময়ে যে ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসবে সে-ই প্রকৃত বন্ধু। বন্ধুত্বটা হওয়া প্রয়োজন নিঃস্বার্থভাবে। যেখানে, হুটহাট কোনো সাধারণ কারণে সৃষ্টি হবে না কোনো দূরত্বের; টান পড়বে না বন্ধুত্বের সুতোয়।

আমরা প্রায়ই কিছু না ভেবেই এর-ওর সাথে মিশে বখে যাওয়া মানুষের দেখা পাই। হয়তবা, সৎসঙ্গের ঠিকানা পেলে সে আজ এই বিপথে আসতো না। মনে রাখতে হবে ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।’ বন্ধুত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা যদি সৎ, ন্যায়পরায়নতা লক্ষ্য রাখি তাহলে অবশ্যই এরকম বন্ধুত্ব আমাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে না। ঠিক তেমনি, এর উল্টোটা হলে বিপথগামী হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। যে বন্ধু আপনাকে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলার পরামর্শ দিবে, ছাত্রজীবনে পড়ালেখার গুরুত্ব অনুধাবনে সহায়তা করবে, কীভাবে মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ গুণগুলো অর্জন করতে হয় সেসব নিয়ে পরামর্শ দিবে, তারা অবশ্যই যেকারোই জীবনে আশীর্বাদ হয়ে আসবে। অপরদিকে, যে নৈতিকতার যুক্তিগত দিকগুলো তুলে ধরবে না, নিষিদ্ধ কাজে আকৃষ্ট করতে চেষ্টা করবে, সময়ের অপচয়ের কুফল সম্পর্কে সচেতন হতে না বলে আড্ডায় মাতিয়ে রাখবে এরা কখনোই ভালো কিছু বয়ে আনতে সহয়তা করতে পারে না। দুঃখ কষ্টে বন্ধুর বাড়িয়ে দেয়া হাত যেমন আমাদের পরিস্থিতি সামলে নিতে সহায়তা করে ঠিক তেমনি মধুর সময়গুলোও যেন বন্ধু ছাড়া অপরিপূর্ণ থেকে যায়!

বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার নির্দিষ্ট কোনে বয়স নেই। নেই তেমন বয়সের বাঁধাধরা নিয়মও। কতটুকু মানিয়ে চলতে পারবে আমরা তার উপর নির্ভর করে গড়ে উঠে আমাদের বন্ধুত্ব। মানুষ সচরাচর তার নিজগুণ যে মানুষের ভেতর বৃদ্ধিমান থাকে বলে মনে করে তাকেই বন্ধু হিসেবে পেতে চায়। চিন্তাধারার মিল না হলে অতি সহজেই ফাটল ধরে বন্ধুত্বের মাঝে। বাধা বিপত্তি আর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভবপর হয়ে ওঠে না একসাথে। নিজস্ব এলাকায় যাদের সাথে চলাফেরা তাদের সাথে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এখান থেকেই শুরু। ধীরে ধীরে স্কুল-কলেজের সীমানা পারে হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে করতে নানান মানুষের সাথে পরিচয় হয়ে ওঠে। হারিয়ে যায় অনেকে জীবনের ডায়েরি থেকে, কেউ বা সেখানে যোগ হয় নতুন কোনো রূপে। চাকরি জীবনে এসে নতুন আর এক পরিস্থিতিতে পড়ি আমরা। তবে, সচরাচর মনে করা হয়-এই সময়ে যে বন্ধুত্বগুলো গড়ে ওঠে তা কেবলই ভদ্রতা বজায় রাখার জন্যই। দীর্ঘ শিক্ষাজীবনে যাদের সাথে শৈশব, কৈশোরের সোনালি দিনগুলো কেটেছে তাদের চেয়ে আপন করে তো একে অন্যকে চেনা সম্ভব নয়।

একাকীত্ব বরণ করে কেউ নিতে চায় না। সবাই সামাজিক জীব হিসেবে বন্ধুত্বের বাঁধনে আটকে পড়ে ইচ্ছা-অনিচ্ছায়। ঘাত-প্রতিঘাতময় সময়ে আমাদের বন্ধুত্বের শক্ত হাতের স্পর্শ একটা ‘আমি তো আছি’ ভাবের যোগান দেয়, যেটা বেশ প্রয়োজন সকলের। হাসিমুখে বরণ করে নেয়ার মুহুর্তগুলোতেও বন্ধুদের প্রয়োজন। বন্ধুত্বের শিকলে পরিবারের মানুষজনও যুক্ত হতে পারে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সকলের মাঝে সৃষ্টি হলে দুরত্বটা ক্রমশই কমতে থাকে। তাই, আমাদের সকলের বন্ধু নির্বাচনে অবশ্যই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। নিজের দ্বারা যেন, দেশ ও জাতির কল্যাণ হয় সেদিক মাথায় রাখতে হবে আমাদের সবসময়। পৃথিবী হয়ে উঠুক বন্ধুময়!

লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

পিডিএসও/ জিজাক

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বন্ধু,দেশ,সৎ,সহপাঠী
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close