বার্ট্রান্ড রাসু, জাবি শিক্ষার্থী

  ১৬ আগস্ট, ২০১৮

বৃষ্টি, ভাবনার মেঘমালা

ইদানিং বেশ রাত করে ঘুমায় আসিফ। অবশ্য আগে এমন হতো না। এখন রাত তার খুবই পছন্দের। রাতের রঙ কালো হয়। অবশ্য এ পছন্দটা একেবারেই সাম্প্রতিক কালের। বৃষ্টিতে কান্না করলেও নাকি চোখের জল বোঝা যায় না তথাপি বৃষ্টি'ই আসিফের কান্নার কারণ। শেষ রাতে ঘুমাতে যাবার কারণ। আসিফ, আসিফের যাপিত জীবন আর রাত, রাতের গূঢ় অন্ধকার যেন সমার্থক। তাদের পথচলা একই সমান্তরালে।

বৃষ্টি আর বৃষ্টিতে বৈপরীত্য লক্ষ্য করে আসিফ। এইতো বছর বারো-তেরো হবে। আসিফ তখন সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হলো। একদিন ক্লাস চলাকালে সে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলো। তার চোখ ঝলসে যাচ্ছিলো। এতোটা রুপ-লাবণ্য সে আগে দেখেনি কখনো। স্যারের বকাবকিতেও সে পরোয়া করেনি। দৌড়ে এসে দাঁড়াল করিডোরে। আর্টস গ্রুপের করিডোরে। চোখ নামাচ্ছিল না। সে দেখা নিষ্পলক। তাতে ছিল না কোনো কামুকতা কিংবা আদিম কোনো বাসনা।

চেয়ে থেকেও যে কথা বলা যায় এতোকাল জানা ছিল না আসিফের। সে কথা মুখে নয়, সে কথা হয় মনে মনে। মেয়েটি আপাত দৃষ্টিতে কোনো কথা বলেনি। কিন্তু আসিফ ভাবছে ভিন্ন কিছু। তার ভাবনায় শুধুই মেয়েটি। মেয়েটির চুল, কান, নাক, মুখ, ঠোঁট, ঠোঁটের বা পাশে অতি সুক্ষ্ণ একটা তিল। এটুকুই তার দেখা। যার নাম অজানা।

সেদিন রাতে সকাল সকাল ঘুমায় আসিফ। মধ্যরাত পেরিয়ে তখন শেষরাত। ঘুমেও সে দেখে নাম না জানা সেই অনামিকা'কে। এ দেখা স্বপ্নের।

মেয়েটি ঠিক আসিফের মতোই ক্লাস শেষ না করে করিডোরে দাঁড়ালো। আর আসিফ লেট করে কলেজে এলো। আশপাশ দেখছে না সে। হন্যে হয়ে ঢুকে পড়ছে ক্লাসে। ঠিক এমন সময় তার কানে এলো একটা শব্দ। হাসির শব্দ। থমকে দাঁড়ালো আসিফ। এ যেন হঠাৎ বৃষ্টি, মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।

আসিফ পা বাড়াচ্ছে সামনে। কিন্তু ফিরে তাকালো পিছনে। "আমি বৃষ্টি। আমার সাথেই পড় তুমি। আমি তোমার নামও জানি। তুমি আসিফ।" মেয়েটি বললো।

সুখ স্মৃতি মিলিয়ে যায় শুভ্রাকাশে কখনো বা নীলাকাশে। রয়ে যায় দুঃখ স্মৃতি, বিস্মৃতি যেমন রাতের গায়ে লেপ্টে থাকে নিগূঢ় আঁধার।

বৃষ্টি আসিফকে আর আসিফ বৃষ্টিকে ভালোবাসে। তারা প্রেম করছে। স্বপ্ন বুনছে। তাদের বাস ছিল স্বপ্নে। স্বপ্ন ভেঙে যায় যেমন ভাঙে ঘুম। দেখবো, আরো দেখতে চাই বলেই মানুষেরা ঘুম ভাঙে। আসিফের ভোর দেখা হয়নি।

বৃষ্টি চায়ের কাপ হাতে ডাকছে তার স্বামীকে। আবির উঠ, উঠতো। কতবেলা হলো। অফিসে যাবে, রেডি হও।

আসিফ এখন শাহবাগ মোড়ে একটা ফুলের দোকানের মালিক। গোলাপ ফুলের দোকান। শুধু লাল গোলাপের দোকান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী একজন লাল গোলাপ ব্যবসায়ী। অবশ্য চতুর্থ বারে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছিল সে। যোগদান করেনি। দ্বিতীয় বারে ক্যাডার হতে পারলে আজ তাকে বৃষ্টি'হীন নিঃসঙ্গ হতে হতো না।

বারো বছর আগে আসিফ একটা ফুল পেয়েছিল। গোলাপ ফুল। ভালোবাসার লাল গোলাপ।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বৃষ্টি,ভাবনা,মেঘমালা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close