মিজানুর রহমান সবুজ, শিক্ষার্থী

  ৩১ জুলাই, ২০১৮

‘সাগরের বিশালতার কাছে নিজেদের তুচ্ছ মনে হচ্ছিল’

কক্সবাজার ট্যুরে যাওয়ার ইচ্ছেটা বহুদিনের, কিন্তু সময় আর সুযোগের সঠিক মেলবন্ধনটা ঠিক কেন জানি হচ্ছিল না আমাদের। অবশেষে যখন আসলো সেই কাঙ্খিত সুযোগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আর পায় কে! দিনটি ছিলো বৃহস্পতিবার। রাত ৮টায় আমরা ২৫ জন বন্ধু বান্ধুবী মিলে দুই দিনের সফরে যাত্রা শুরু করলাম কক্সবাজারের উদ্দেশে।

বাসে উঠেই যেন সবার প্রাণ চাঞ্চল্য আরো কয়েকগুন বেড়ে গেলো। গান-গল্প, হৈ-হুল্লোর করে আর দুই দফা যাত্রাবিরতি শেষে যখন আমরা কক্সবাজার পৌঁছালাম, সূ্য্যিমামা তখন ঠিক উঠি উঠি করছে। বাস থেকে নেমেই আগে থেকে ঠিক করে রাখা হোটেলে চলে গেলাম সবাই। খানিকটা বিশ্রাম আর ভ্রমনক্লান্তি দূর করে, সকালের নাস্তা সেরেই চলে গেলাম পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে। উপভোগ করলাম সাগরের ভয়ংকর সৌন্দর্য। সাগরের বিশালতার কাছে নিজেদেরকে খুবই তুচ্ছ মনে হচ্ছিল তখন।

‘সূর্যের চেয়ে বালি গরম গরম’ প্রবাদটার যথার্থতা খুঁজে পেলাম সৈকতের গরম বালিতে হাঁটতে গিয়ে! কিছুক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে দল বেঁধে সবাই নেমে পড়লাম সমুদ্রস্নানে। সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে থাকলো আমাদের দূরন্তপনা। এরই ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকলো দলবেঁধে ছবি তোলার কাজ। কখন যে দুপুর গড়িয়ে গেলো টেরই পেলাম না! এরপর আবার চললাম সমুদ্র থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটা দুরত্বে আমাদের হোটেলে। কিন্তু সমুদ্রের এতো কাছে এসে কারই বা মন টিকে হোটেলে। তাইতো বিকেলবেলা আবার দলবেঁধে ছুটলাম সমুদ্রপানে সূর্যাস্ত আর রাতের সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখবো বলে।

সন্ধ্যার পর দলবেধে ছুটলাম ঝিনুক মার্কেটে। টুকটাক কেনাকাটা যা একটু বান্ধুবীরাই করল, আমরা বন্ধুরা শুধু সঙ্গই দিলাম তাদের! এরপর রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরলাম সবাই। পরবর্তী দিনের কর্ম পরিকল্পনার জন্য ছোটো খাটো টিম মিটিং করে এবং পরবর্তী সকালে ঠিক সময়ে উঠতে পারবো কি না এই টেনশন নিয়ে ঘুমাতে গেলাম সবাই। কিন্তু ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ (সি, আর) মোহসিনা লিসা সকল জায়গাতেই শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতার জীবন্ত উদাহরণ! তাইতো সকালবেলা ঠিক সময়ে সবার ঘুম ভাঙানোর কাজটা ভালোভাবেই করলো সে। আমরাও সবাই মুখ হাত ধুয়ে প্রস্তুত হলাম একটি ব্যস্তময় দিনের জন্য।

তাড়াতাড়ি সকালের নাস্তা সেরে সবাই চড়ে বসলাম সারাদিনের জন্য ভাড়া করা দুইটি চাঁন্দের গাড়িতে। দিনের প্রথম গন্তব্য রামু বৌদ্ধ মন্দিরে যাওয়ার পথে আকাশে রোদ আর মেঘের খেলায় রোদই জয়ী হলো। আমরাও সারাদিন ঘুরতে পারলাম মনের আনন্দে। রামু বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে আমরা জানতে পারলাম বৌদ্ধ ধর্মের নানা ইতিহাস। রামুতে নিজ চোখে দেখলাম হাজার বছর পুরাতন নানা মুর্তি আর নিদর্শন। এরপরই আমরা রওনা হলাম হিমছড়ির পথে। চলতি পথে নিজস্ব সুর ও ঢঙে বাংলা চলচ্চিত্রের বিখ্যাত সব গান গেয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখলো বন্ধুবর মনির। রাস্তার একপাশে সৈকত আর অপর পাশে পাহাড় যেন সৈকত আর পাহাড়ের গভীর মিতালীর কথা মনে করে দেয়। হিমছড়ি পাহাড় থেকে উত্তাল সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আমাদের মুক্ত বিহঙ্গের মত ডানা মেলে ওড়ার সাধ জাগে! হিমছড়ির পাহাড়ের হিম শীতল ঝরণাও বেশ আকর্ষণীয় বলে শুনেছিলাম যদিও ঝর্না দেখে হয়তো মন ভরে নাই আমাদের অনেকেরই। তারপর ও ছবি তোলা কম হয়নি কারো!

এরপরে হিমছড়ির নিকটেই হোটেলে দুপুরের খাবার সেরে আমরা রওনা হলাম ইনানী সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্য। চলতি পথের প্রাকৃতিক দৃশ্যও আমাদের মনে যথেষ্ট দোলা দিল। ইনানীর বিস্তীর্ণ পাথুরে সৈকতের অপূর্বরূপে বিমোহিত হলাম। সবাই মনের আনন্দে ছোটাছুটি, হৈ-হুল্লোর করলাম সৈকতের তীরে। মনের মানুষের স্মরণে সৈকতের বালুতে স্মৃতিচিহ্ন আঁকলো কেউ কেউ! দলবেঁধে পা ভিজালাম অশান্ত সমুদ্রের নীলাভ ফেনার জলে। সৈকত তীরে পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত বেঞ্চে শুয়ে বসে আমরা দেখলাম সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য। সন্ধ্যার পর ফিরে আসলাম আমাদের হোটেলে। রাতের খাবার শেষে হোটেল রুমে চললো সুদীর্ঘ আড্ডা। গান আর গল্পে যখন পার হলো মধ্যরাত আমরাও তখন খানিকক্ষণ ঘুমিয়ে নিলাম যার যার রুমে। সকালে উঠেই আমরা রওনা হলাম আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে।

পিডিএস/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সাগর,বিশালতা,তুচ্ছ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist