হাসান শান্তনু

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

সময়মতো পাঠ্যবই না পৌঁছানোর শঙ্কা

এনসিটিবির অনিয়মে ছাপার কাজে ধীরগতি

পাঠ্যবই ছাপানোর প্রক্রিয়ায় চলছে অনিয়ম। বেড়েছে কাগজের দাম। অনেক প্রকাশক বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ছাপার কাজে দেরি করছেন। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) নানা জটিলতা ও গড়িমসি রয়েছে। ফলে বিনামূল্যের পাঠ্যবই নিয়ে নতুন করে সংকট তৈরি হচ্ছে। বই ছাপার কাজ চলছে ধীরগতিতে। বছরের প্রথম দিন একযোগে সারা দেশের সব শিক্ষার্থীর কাছে নতুন বই পাঠানো নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ছাপাখানার মালিকরা।

তিন মাস পর আগামী শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত অর্ধেকের বেশি বই ছাপানোর দরপত্র প্রক্রিয়াই শেষ হয়নি। এখনো চলছে বই লেখা, সংশোধন ও সিডি তৈরির কাজ। এ পর্যন্ত ছাপা হয়েছে এনসিটিবির চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ বই। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাকি বই ছাপানো সম্ভব হবে না বলে মনে করেন অনেক প্রকাশক। নতুন বছরে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৮৫ হাজার পাঠ্যবই বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। ২৫০টি ছাপাখানায় চলছে বই ছাপার কাজ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রাথমিকের বই ছাপানো নিয়ে ব্যাপক কেলেঙ্কারি হয়েছে। ৯৮টির মধ্যে ৯৬ লটের কাজ ৪২ দিনে শেষ করার কার্যাদেশ দিয়ে বইয়ের সিডি মুদ্রাকরদের সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ছাপাখানায় গিয়ে সিডি খুলে দেখা যায়, সেগুলো প্রাথমিকের, ইবতেদায়ি স্তরের বইয়ের সিডি। এরপর এনসিটিবি ভুল সিডি ফেরত নেয়। ফলে এখনো প্রাথমিকের বই ছাপা শুরু হয়নি। প্রাক-প্রাথমিক ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় পড়ার বইয়ের দরপত্র প্রক্রিয়া এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বইয়ের চাহিদা চূড়ান্ত হয়নি বলে ছাপার প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না। এসব কাজ শেষ হলেই দরপত্রের কাজ শুরু হবে বলে জানায় এনসিটিবি।

সবচেয়ে জটিল অবস্থায় আছে ‘সুখপাঠ্যকরণ’ বইগুলো। চলতি বছর থেকে নবম শ্রেণির ১২টি পাঠ্যবই ‘সুখপাঠ্যকরণ’ নাম দিয়ে সংশোধন করে নতুনরূপে তৈরি করা হয়েছে। এসব বই ছাপাতে দরপত্র প্রক্রিয়া এখনো শুরু করতে পারেনি এনসিটিবি। ফলে আগামী এক মাসেও এগুলো ছাপা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। মাত্র পাঁচ দিন আগে অর্থাৎ গত ১২ সেপ্টেম্বর নবম ও দশম শ্রেণির ছয়টি পাঠ্যবইয়ের পরিমার্জিত কপি শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন টিমের সদস্যরা হস্তান্তর করেন। এর আগে পাঁচটি বই পরিমার্জন করা হয়েছে। বইগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, পদার্থ, রসায়ন, জীববিদ্যা, উচ্চতর গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশের ইতিহাস ও সভ্যতা, অর্থনীতি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, হিসাববিজ্ঞান ইত্যাদি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার আশঙ্কা, কয়েক বছর ধরে নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যবই ছাপাতে ব্যর্থ হয় এনসিটিবি। ফলে বছরের প্রথম দিন বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এবারো এর পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তারা জানান, পূর্বঘোষণা ছাড়া গত ৩১ জুলাই বিকেলে এনসিটিবির কার্যালয় আকস্মিকভাবে পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি পরিদর্শন শেষে এনসিটিবিকে যথাসময়ে ২০১৮ সালের পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ শেষ করা ও বিতরণের নির্দেশ দেন। মন্ত্রীর নির্দেশও অনেকটা উপেক্ষিত থাকছে বলে মনে করে মন্ত্রণালয় সূত্র।

শিক্ষামন্ত্রী বিদেশে থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তিনি ‘সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন ওপেন এডুকেশনাল রিসোর্সেস’ (ওইআর) সম্মেলনে যোগ দিতে স্লোভেনিয়ার উদ্দেশে গত রোববার রাতে ঢাকা ত্যাগ করেন। আগামী বৃহস্পতিবার তিনি দেশে ফিরবেন। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘দুই বা একটি টেন্ডার বিলম্ব হয়েছে। কিন্তু এ কারণে বই ছাপা ও পৌঁছাতে বিলম্ব হবে না। আমাদের তদারকি কমিটি ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। তারা কাজ তুলে আনবে। সময়মতো সারা দেশে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে। বছরের প্রথম দিনেই বই হাতে পাবে দেশের সব প্রান্তের শিক্ষার্থী।’ পাঠ্যবইয়ে বানান ও বাক্যে যেসব ভুলত্রুটি ছিল, সেগুলো সংশোধন করা হলেও বিতর্কিত বিষয়বস্তু বদলানো হয়নি বলেও জানান তিনি।

প্রকাশকরা জানান, কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রেস মালিকরা পড়ছেন বিপাকে। প্রতি টন কাগজে তাদের গুনতে হবে বাড়তি ৬-৭ হাজার টাকা। কাগজের বাড়তি মূল্য না দেওয়ায় মিল মালিকরা কাগজ সরবরাহ করছেন না। ফলে বই ছাপতে বিলম্ব হচ্ছে। এ বছর কাগজ দিতে দেরিসহ নানা জটিলতায় বই ছাপার কাজ গত বছরের চেয়ে পিছিয়ে আছে। ফলে নতুন বছরের প্রথম দিন দেশের সব জেলায় একযোগ বই বিতরণ নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

জানতে চাইলে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ ছাপা দেরি হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি জানান, ‘সুখপাঠ্যকরণ বইগুলো ছাপানোর দায়িত্ব কোন প্রতিষ্ঠান পাবে, তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত কখন হবে, কখন ছাপার কাজ শুরু হবে-প্রকাশকরা জানেন না। ফলে বইগুলো ছাপাতে বিলম্ব হওয়াই স্বাভাবিক।’

এনসিটিবি সূত্র জানায়, নতুন বছরে প্রাক-প্রাথমিকে ৬৮ কোটি ২৩ লাখ ৬৪৮, প্রাথমিকে ১০ কোটি ৩৬ লাখ, ২৪ হাজার ৪০৫, মাধ্যমিকে ২৪ কোটি ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ১১ লাখ ৩৫ হাজার এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সাড়ে ৮ হাজার বই বিতরণ করা হবে। ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন পাঠ্যপুস্তক উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দিয়ে আসছে সরকার।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পাঠ্যবই,এনসিটিবি,অনিয়ম,মুদ্রণ শিল্প সমিতি,সুখপাঠ্যকরণ,জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist