সম্পাদকীয়

  ০৬ অক্টোবর, ২০১৮

নিষেধাজ্ঞার কথা

কক্সবাজার আশ্রয় শিবিরে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড হাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা

রোহিঙ্গা সংকট এখনো কাটেনি। সিন্দাবাদের ভূতের মতো এখনো তা বাংলাদেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসে আছে। মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সে দেশের সরকার।

বিশ্ব সম্প্রদায় তাদের এই নেতিবাচক পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে। এই সমালোচনায় চিঁড়ার একটি দানাও ভেজেনি। দেশের প্রধান নির্বাহী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মিয়ানমার শাসক গোষ্ঠীর এহেন আচরণে আশাহত হয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে মিয়ানমারের এ নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে। বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ প্রশ্নে সরব থাকলেও বাস্তবতা বলছে তাদের এ ভূমিকা পর্যাপ্ত নয়। ভূমিকায় ঘাটতি রয়েছে।

একই মত প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ সন্তোষজনক নয়। নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন তৈরির পথকে প্রশস্ত করার জন্য বিশ্বনেতাদের আরো জোরালো ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

তার মতে, রোহিঙ্গারা হচ্ছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ নির্যাতিত জাতি। দলমত নির্বিশেষে তাদের পাশে দাঁড়ানো আজ সবারই দায়িত্ব এবং কর্তব্যে পরিণত হয়েছে। এ জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তিনি চাপের মাত্রা বাড়িয়ে সমস্যা সমাধানের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের মাত্রা বাড়িয়ে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা নিশ্চিত করে অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই হবে বিশ্ব বিবেকের লক্ষ্য।

দেরিতে হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিছুটা হলেও ইতিবাচক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বলে অনুমিত হচ্ছে। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় মিয়ানমার সরকার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায়, দেশটির ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কথা ভাবছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ বাণিজ্য ব্লকে মিয়ানমার শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশের সুবিধা হারাবে। তবে এ নিষেধাজ্ঞা প্রক্রিয়ার গতি-প্রকৃতি মন্থর বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের আগে মিয়ানমারকে ছয় মাসের সময় দেওয়া হতে পারে। এর মধ্যে দেশটিকে মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণের বিষয়ে ইইউর দেওয়া কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।

তবে মিয়ানমার সেসব শর্তাবলিকে কতটুকু সম্মান জানাবে, এ মুহূর্তে বলা না গেলেও এটুকু বলা যায়, সম্ভাবনা খুবই কম। কেন না সমস্যার সূচনা থেকেই চীন মিয়ানমারের এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমর্থকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বিভিন্ন উদ্যোগের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে চীন। সম্পর্কের প্রশ্নে বাহ্যিকভাবে চীন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বন্ধু। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন সৎ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় আসার সুযোগ থাকার পরও দেশটি তা গ্রহণ করেনি। সংকটের উপস্থিতিই প্রমাণ করল দেশটির প্রকৃত বন্ধু কে!

আমরা মনে করি, এ মুহূর্তে বাংলাদেশকে নতুনভাবে তার কর্মপদ্ধতিকে সাজাতে হবে। যেখানে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরো জোরদার করার মধ্য দিয়ে মিয়ানমারকে ইতিবাচক সমাধানে এগিয়ে আসতে বাধ্য করা হবে। যার সূচনা হতে চলেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এ চাপ অব্যাহত থাকলে নিকট ভবিষ্যতে আমরা একটি সুন্দর সমাধানে পৌঁছাতে সক্ষম হব বলেই আমাদের বিশ্বাস।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রোহিঙ্গা,মিয়ানমার,রোহিঙ্গা ইস্যু,বিশ্ব সম্প্রদায়
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close