লে. কর্নেল নাজমুল হুদা খান

  ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

বিল্লিদের বাঁশিওয়ালা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

মধ্যপ্রাচ্যের আয়তনে ছোট কিন্তু তেল সমৃদ্ধ দেশ কুয়েতে আছি গত ছ’মাস। কুয়েতের অন্যতম প্রাচীন শহর খাইতানে বসবাস করছি। এখন শীতকাল চলছে। মাঝে মধ্যেই মুষলধারে বৃষ্টি। তাই অধিকাংশ আবাসিক এলাকা ও রাস্তার দু’পাশে গাঢ় সবুজ, এমনকি মরুভূমিতেও মৃতপ্রায় লতাগুল্মেরা আড়মোড়া ভেঙে সবুজ পাতা মেলে ধরছে; ফোটাচ্ছে নানা রঙের ফুলও। এখন কেউ বেড়াতে আসলে বুঝতেই পারবেনা যে, এখানে গ্রীষ্মে গায়ের চামড়া পুড়ে যাওয়া তাপদাহ বিরাজ করে।

মনোমুগ্ধকর আবহাওয়ার বদৌলতে প্রতিদিনের মত গতকালও বিকেলে জগিং করতে গিয়ে আমার বাসস্থান এলাকার অলিগলিতে বিড়াল মশাইদের দৌড়ঝাঁপ নজরে পড়ল। কৌতূহলবশত: দাঁড়িয়ে পড়ি বিষয়টি বুঝার জন্য।

বিভিন্ন রং ও বর্ণের বিড়ালরা এক ব্যক্তির পেছনে ছুটছে। আমি না ছুটলেও একটু দাঁড়িয়ে পড়ি, দূর থেকে কি হচ্ছে দেখতে। সকল বিড়াল ছুটছে এক ব্যক্তির পেছনে। তার হাতে সাদা রংয়ের বেশ ক’টি ডিসপোজেবল বক্স। তিনি কতক জায়গায় বক্সের মুখ খুলে সযত্নে রেখে যাচ্ছেন এবং একদল বিড়াল মহাসুখে ভোজন সেরে নিচ্ছে। এমন বেশ ক’টি স্থানে তিনি একই কাজ করলেন এবং অতিথি বিড়ালের দল নেমন্তন্নে অংশ নিলেন। লক্ষ্য করলাম চিকেন, অমলেট, নুডুলস, ছোলাভূনা ও রাইসসহ বিড়ালদের জন্য সুস্বাদু নানা খাবার রয়েছে বক্সগুলোতে। কখনো তিনি খালি হাতে এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাচ্ছেন; খেয়াল করি তখনও বিড়ালেরা তাকে ঘিরে এগুচ্ছে, খুনসুটিতে মত্ত থাকছে। কোনটি পায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছে, কোনটি লাফ দিয়ে হাত বা কাঁধের উপর চড়ে বসছে। হাতে থাকা মোবাইলে ছবি তুলতে গেলে তিনি অনুরোধ করলেন, তার ছবি না তুলতে; তবে বিড়ালদের ছবি তুলতে আপত্তি করলেন না।

জিজ্ঞেস করলাম, কতদিন যাবৎ এ কাজ করছেন তিনি? তিনি জানালেন, প্রতিদিন বিকেলে এ কাজ করেন। প্রায় পাঁচ বছর হলো এ এলাকার বিড়ালদের খাবার দিচ্ছেন। কেমন খরচ হয় জিজ্ঞেস করলে বিব্রত বোধ করলেও, জানালেন ৫০ প্যাকেট খাবার বাবদ খরচ হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। প্রতিদিন বিকেলে খাইতান শহরের বিভিন্ন ব্লকে এ কাজটি তিনি করে থাকেন। কেন করেন এ কাজ, জানতে চাইলে বলতে চাইছিলেন না। তবে আমি ডাক্তার পরিচয় জানালে একটু খাতির করে বললেন, এ বিড়ালদের দেখার কেউ নেই। রাস্তার ডাস্টবিনের খাবারেই এদের বেড়ে ওঠা। অনেক সময় পছন্দসই খাবার না পেলে অভুক্তই থাকতে হয়; অনেক বিড়াল নানা অসুখ-বিসুখেও ভুগতে দেখা যায়। তাই, ওদের পাশে দাঁড়াতেই সামান্য এ প্রচেষ্টা।

বাসায় বিড়াল রাখেন- এ প্রশ্নের ‘না’ বাচক উত্তর। বিড়ালের যত্নটি বেশ সময়সাপেক্ষ, প্রাত্যহিক কাজের চাপে সে সময় সংকুলান সম্ভব হয়না বলে রাখা হয়ে উঠছেনা।

ছোটবেলা পাঠ্য বইয়ে ‘হ্যামিলনের বাশিওয়ালা’ গল্পে প্রথমে ইদুর, পরে ছোট ছেলেমেয়েদের সেই বাশিওয়ালার পিছু নেয়া গল্পের পটভূমি ভিন্ন হলেও দলবেধে এ বিল্লিদের ঐ সহৃদয় ব্যক্তির পিছু নেয়া নি:সন্দেহে প্রাণীবান্ধব।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিড়াল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close