সেই বিচারকের ৮ মাসের ভাড়া বকেয়া
বরিশালের জেলা সার্কিট হাউসে দীর্ঘ আট মাসের ৯৩ হাজার ৯৫০ টাকা ভাড়া পরিশোধ না করার অভিযোগ উঠেছে বরিশালের মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আলী হোসাইনের বিরুদ্ধে।
আলী হোসাইন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ‘বিকৃতির’ অভিযোগে বরিশালের আগৈলঝাড়ার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী তারিক সালমনের মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারের আদেশ দিয়ে আলোচিত হয়েছেন। মামলাটি তার আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। গাজী তারিক সালমন বর্তমানে বরগুনা উপজেলার ইউএনও হিসেবে কর্মরত।
বরিশালের জেলা প্রশাসক (ডিসি) গাজী মো. সাইফুজ্জামান গণমাধ্যমকে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সিএমএম আলী হোসাইন আট মাস বরিশাল সার্কিট হাউসে থেকেছেন। এর মধ্যে চার দিনের মোট ৩৯০ টাকা ভাড়া পরিশোধ করেছেন। টাকা পরিশোধের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে চিঠি পাঠানো হলেও তিনি তাতে সাড়া দেননি।’
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ‘আমি ২০১৫ সালে যোগদানের আগে থেকেই সিএমএম আলী হোসাইন সার্কিট হাউসে থাকতেন। দীর্ঘদিন এখানে থাকায় রেজিস্ট্রি এন্ট্রি অনুযায়ী তার কাছ থেকে প্রায় ৯৩ হাজার টাকা ভাড়া পাওনা ছিল। বিষয়টি অনেক আগেই তাকে জানানো হয়। কিন্তু তিনি কোনো সদুত্তর দেননি। পরে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। একদিন জানতে পারি, তিনি হঠাৎ করে সার্কিট হাউস ছেড়ে চলে গেছেন।’
ডিসি বলেন, ‘সিএমএম আলী হোসাইন যে সার্কিট হাউস থেকে চলে গেছেন, সে বিষয়টিও তিনি আমাকে জানাননি।’ সিএমএস আলী হোসাইনকে দেওয়া চিঠিতে দেখা যায়, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, জেলা সার্কিট হাউসের ৭ নম্বর কক্ষে এক থেকে তিন দিন পর্যন্ত প্রতি দিন ৯০ টাকা করে এবং চার থেকে সাত দিন পর্যন্ত ১২০ টাকা করে এবং সাত দিনের ঊর্ধ্বে প্রতিদিনের জন্য চারশ’ টাকা করে ভাড়া দিতে হবে। এ হিসাবে সিএমএম আলী হোসাইনের কাছে মোট পাওনা হয়েছে ৯৩ হাজার ৯৫০ টাকা।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সিএমএম আলী হোসাইনের মোবাইল নম্বরে একাধিক বার কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
গাজী তারিক সালমন বরিশালের আগৈলঝাড়ার ইউএনও থাকাকালে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। তিনি ঘোষণা দেন, প্রথম ও দ্বিতীয় হওয়া ছবি দিয়ে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রশাসনের আমন্ত্রণপত্র ছাপা হবে। সে অনুযায়ী আমন্ত্রণপত্রে দুটি ছবি ব্যবহার করা হয়। আর আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধুর ‘বিকৃত’ ছবি ছাপানোর অভিযোগ এনে এর দুই মাসেরও বেশি সময় পর ৭ জুন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ ওবায়েদুল্লাহ সাজু মামলাটি করেন।
ওই সময় বরগুনা সদর উপজেলায় ইউএনও হিসেবে তাকে বদলি করা হয়। বরিশাল মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক পাঁচ কোটি টাকার মানহানির মামলাটি আমলে নিয়ে ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে তারিক সালমনকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী তিনি ১৯ জুলাই আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। অবশ্য এর দুই ঘণ্টা পর আবার তার জামিন দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ ঘটনার নিন্দা জানান। এ ছাড়া বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে অ্যাডভোকেট সৈয়দ ওবায়েদুল্লাহ সাজুকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
পিডিএসও/রিহাব