তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি

  ২৭ মার্চ, ২০২০

বরগুনায় গৃহহীনদের দুর্যোগ সহনীয় ঘর পেল স্বচ্ছল ব্যক্তি

বরগুনায় তালতলীতে গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তালতলী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচির আওতায় গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় ৪৩টি ঘর নির্মাণ করছে সরকার। ২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে প্রতিটি ঘর।

স্থানীয় ভূমি অফিসের মাধ্যমে তদন্ত করে সঠিক গৃহহীনদের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে তালিকায় নাম তুলতে টাকা নেয়া ও স্বচ্ছল ব্যক্তির নামে ঘর বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্বচ্ছল ও ইউপি সদস্যদের আত্মীয়দের নামও রয়েছে তালিকায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার পচাঁকোড়ালিয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের আবদুল হাই এর ছেলে শহিদুল ইসলাম নিজের নামে কোনো জমাজমি না থাকায় তার বাবার প্রায় ৩ বিগা (৯৯ শতাংশ) জমি থাকায় ছেলে নামে মৌখিকভাবে ১০ শতাংশ জমি দিয়ে এই ঘর পাইয়ে দিয়েছে স্থানীয় ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন নসা মিয়া। শহিদুল ইসলাম একজন স্বচ্ছল ও ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিনের আত্মীয় হওয়ার এই ঘর পেয়েছে। শহিদুল ইসলাম বাড়িতে হাঁস-মুরগি গরু পালনের পাশাপাশি নিজের পুকুরে মাছও চাষ করেন। সব মিলিয়ে আর্থিকভাবে সচ্ছল জীবনযাপন করেন তিনি। এছাড়া তার ঘর নির্মাণে সরকারি নকশা পরিবর্তন করে নিজেদের মনগড়াভাবে ঘর তৈরি করছেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্ত একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, রাজনৈতিক বিবেচনায়, জনপ্রতিনিধিদের কাছের মানুষ হওয়ায় স্বজনপ্রীতি ও টাকার বিনিময়ে ঘর পেয়েছেন তারা। স্বজনপ্রীতি করার কারণে অনেক গৃহহীনই সরকারের বড় এ উদ্যোগের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আসল গৃহহীনরা। বিশেষ করে সঠিকভাবে তদন্ত না করার কারণেই এ অনিয়ম হয়েছে।

শুক্রবার পচাঁকোড়ালিয়া ইউনিয়নের হুলাটানা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহিদুল ইসলাম একজন স্বচ্ছল ব্যক্তি আর তার গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বরাদ্দ ঘরটি তৈরিতে বেশি কিছু নশকা পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে এলাকার সাধারণ মানুষদের অভিযোগ রয়েছে, সঠিকভাবে সুবিধাভোগী নির্বাচন করা হয়নি। এর উদাহরণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন শহিদুল ইসলামকে।

এ বিষয়ে ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন নাসা মিয়া বলেন, বরগুনা ১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য সুপারিশের কারণে শহিদুলকে ঘরটি দেওয়া হয়েছে। আর আমি ঘর পাইয়ে দেওয়ার জন্য কোনো টাকা নেইনি। তার ঘরের কাগজপত্র নিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে দিয়েছি। আর কিছু জানি না।

পচাঁকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজির হোসেন পাটোয়ারীকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পচাঁকোড়ালিয়া ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র শীল বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কোনো দ্বায়িত্ব দেয়নি। এবার এগুলো চেয়ারম্যান ও মেম্বার কি করছে তা আমি জানি না।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রানু বেগম বলেন, আমি গত ৭-৮দিন আগে যোগদান করেছি। এই ঘর যখন বরাদ্দ করা হয়েছে তখনকার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ছিলো মহসিন উল হাসান। আপনারা সহকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাহিদের কাছে জেনে নিন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভারপ্রাপ্ত মো. সেলিম মিঞা জানান, অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বরগুনা,গৃহহীনদের ঘর,দুর্যোগ,অনিয়ম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close