ভ্যাট হার ১২ শতাংশ করার দাবি
আসন্ন বাজেটে নতুন ভ্যাট হার ১২ শতাংশ নির্ধারণ করা যুক্তিযুক্ত হবে বলে দাবি করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। আগামী অর্থবছরের বাজেটে উৎপাদক ও ভোক্তার ওপর চাপ কমাতে ভ্যাট আইনে নতুন হার দাবি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের ন্যুনতম কর ৭ শতাংশ নির্ধারণ করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া সংস্থাটি বলছে, চলতি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে সরকার ৭.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে দাবি করছে, বাস্তবতার সঙ্গে সেটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আজ শনিবার রাজধানীর ব্রাক সেন্টারে আয়োজিত 'বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০১৬-১৭: তৃতীয় অন্তবর্তীকালীন পর্যালোচনা' শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা জানায় গবেষণা সংস্থাটি। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও মোস্তাফিজুর রহমান। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির পরিচালক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ।
সিপিডির পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে দরকার পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান। কিন্তু অর্থনীতিতে সেই কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে হচ্ছে না। তাদের পর্যালোচনায় বলা হয়, সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা এখন ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। কমেছে রেমিটেন্স। পূরণ হওয়ার নয় রফতানি লক্ষ্যমাত্রা। রাজস্ব আয়ে বিরাট ঘাটতি তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও ভোগ সংকুচিত হচ্ছে। অন্যদিকে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা শৃংখলা রক্ষার জায়গাটি আগের চেয়ে অবনতি ঘটেছে। এর বিষক্রিয়া গোটা অর্থনীতিতে ছড়িয়ে পড়েছে পর্যালোচনায় দাবি করা হয়। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতিকে অতিমাত্রায় প্রবৃদ্ধিনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখাটা একটা খ-িত ও অসম্পূর্ণ চিত্র বলেও দাবি সিপিডির।
অনুষ্ঠানে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভ্যাট আইনে নতুন হার ১২ শতাংশে নামানো উচিত। এটা একবারে না হলেও ধাপে ধাপে ভ্যাট কমিয়ে আনা যেতে পারে। নতুবা এই নতুন ভ্যাট আইন উৎপাদক ও ভোক্তার ওপর চাপ বাড়াবে। আবার ১৫ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনার ফলে রাজস্বে যে ঘাটতি তৈরি হবে সেটা পূরণে পেট্রোলিয়াম পণ্য, সিমেন্ট ও মোবাইল ফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক না বসানোরও পরামর্শ রাখেন তিনি।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, শিল্পের উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু সেভাবে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। এটা নিয়ে একটা বিতর্কের মধ্যে আছি আমরা। এ বিতর্ক উঠা অবান্তর নয়। কারণ বিদ্যমান অর্থনীতিকে তিনি স্বাস্থ্যকর বলে মনে করেন না। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি নির্ভর এই অর্থনীতি অনেক কিছুরই জবাব দিতে পারছে না। তাই ৭.২ বা ৭.৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির দাবিও অর্থহীন।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংকিংখাত অর্থনীতিতে চরম নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। এটা আগের চেয়ে আরও অবনতি হয়েছে। খেলাপি ঋণের কারণে সুশাসনের অভাবে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতিতে আছে। সরকার সেটা জনগণের করের টাকায় তা পূরণ করছে। কোনো রকম জবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে না। একই অবস্থা বেসরকারি ব্যাংকেরও। তিনি বলেন, গত চার বছর পর্যন্ত সিপিডির পক্ষ থেকে ব্যাংকিংখাতের দুর্বলতা নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। এখাতের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াতে একটি কমিশন গঠন জরুরি। আমরা আশা করবো সরকার এর একটা পদক্ষেপ নেবে।
চলতি অর্থবছরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ (তৃতীয় সংস্করণ) সংক্রান্ত মূল প্রবন্ধে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, এনবিআরের রাজস্ব আয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকতে পারে। তিনি বলেন, যদিও রাজস্ব আদায়ের পরিস্থিতি ক্রমে ভালো হচ্ছে। তবে মোট দেশজ উৎপাদনের বিপরীতে রাজস্ব আদায় সাড়ে ৯ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যেই আটকে আছে।
পিডিএসও/মুস্তাফিজ