শাহজাহান সাজু

  ০৭ জানুয়ারি, ২০২০

অর্থনীতিতে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ

উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত

বাংলাদেশ এখন অনেক দেশেরই উন্নয়নের রোল মডেল। অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলছে দেশের অর্থনীতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বর্তমানে দেশের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, বাড়ছে গড় আয়ু। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি বাড়ছে কৃষি উৎপাদন। কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি অর্থনীতির আকার বাড়ছে। বাড়ছে বাজেটের আকার। তবে বাজেট বাস্তবায়নে কমছে পরনির্ভরতা।

বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। টাকার অঙ্কে জিডিপির আকার ২৫ লাখ ৪২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। মাথাপিছু জাতীয় আয় হয়েছে ১৯০৯ ডলার। বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা ২০২৩-২৪ সালে এই প্রবৃদ্ধির হারকে ডাবল ডিজিটে নিয়ে যাওয়া। অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণ ঘটেছে।

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের পাশাপাশি প্রায় ১২ হাজার ২১৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে রেকর্ড গড়েছে শেখ হাসিনার সরকার। অব্যাহত অবকাঠামো নির্মাণ ও বড় আকারের প্রকল্প বাস্তবায়নেও সক্ষমতা দেখিয়েছে বর্তমান সরকার। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন এখন বাস্তবতা।

‘দ্য স্পেক্টেটর ইনডেক্সে’ প্রকাশিত বিশ্বের ২৬টি শীর্ষ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায়, জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) বাংলাদেশ অর্জন করেছে বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। ২০০৯ থেকে শুরু করে ২০১৯ পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি পুরো বিশ্বের সবার ওপরে। এ সময় বাংলাদেশের জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১৮৮ শতাংশ। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন ও ভারতের চেয়েও বেশি। চীনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭৭ শতাংশ ও ভারতের ১১৭ শতাংশ। অন্যান্য দেশের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া ৯০, মালয়েশিয়া ৭৮, অস্ট্রেলিয়া ৪১, মেক্সিকো ৩৭, ইতালি ৮, জার্মানি ১৫, মিসর ৫১ এবং ব্রাজিল ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, সামষ্টিক অর্থনীতি বিশেষ করে রফতানি, বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে অবস্থা ভালো থাকায় উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন সহজ হয়েছে। আগামী চার বছরে প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাবে বলে প্রত্যাশা অর্থমন্ত্রীর।

তিনি আরো বলেছেন, বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সরকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, যাতে বিনিয়োগকারীরা অধিকতর বিনিয়োগে উৎসাহী হন। সরকারের ১০০টি অর্থনৈতিক জোনের অধিকাংশের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা পালন করছে বলে জানান তিনি।

জানা যায়, বাংলাদেশ এখন এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ১৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকারে গত দুই যুগে সিঙ্গাপুর ও হংকংকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ এই অবস্থানে উঠে এসেছে। এই অঞ্চলের দেশগুলোর মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সমতা (পিপিপি) বিবেচনা করে প্রতিটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কত হয়েছে, সেই হিসাব করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ওই হিসাবে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে মোট ৭০ হাজার ৪১৬ কোটি ডলারের সমপরিমাণ পণ্য উৎপাদন ও সেবা সৃষ্টি হয়েছে। এডিবির ‘কি ইনডিকেটরস ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এই চিত্র উঠে এসেছে। ক্রয়ক্ষমতার সমতা (পিপিপি) অনুসারে হিসাব করলে বিভিন্ন দেশের আর্থিক সক্ষমতার তুলনামূলক প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়।

এডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০০ সালে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ছিল সিঙ্গাপুর। ওই বছর বাংলাদেশে মাত্র ১৫ হাজার ১৮০ কোটি ডলারের পণ্য উৎপাদন ও সেবা সৃষ্টি হয়েছিল। তখন সিঙ্গাপুরে সৃষ্টি হয়েছিল ১৬ হাজার ৭১৮ কোটি ডলারের পণ্য উৎপাদন ও সেবা। এরপর বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে। পরের ১০ বছরেই সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। ২০১০ সালে বাংলাদেশের জিডিপির আকার দাঁড়ায় ৩৬ হাজার ৪০৫ কোটি ডলার। ওই বছরই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে পড়ে সিঙ্গাপুর। তখন সিঙ্গাপুরে পণ্য উৎপাদন ও সেবা সৃষ্টির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৬ হাজার ৩৩২ কোটি ডলার। ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরের চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ শতাংশ বেশি। একইভাবে হংকংকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। হংকং ২০০০ সালে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ছিল। তবে ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো হংকংকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ। গত বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বেড়ে হংকংয়ের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি হয়েছে।

জানা যায়, বাংলাদেশে এখন রফতানিনির্ভর প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ চাহিদানির্ভর প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তার প্রধান কারণ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ধান উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। দেশের যোগাযোগ, পরিবহন ও বিদ্যুত খাতে ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে। এসব কাজে নিয়োজিত রয়েছে অসংখ্য মানুষ, যা দারিদ্র্যবিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের শিল্প-অবকাঠামো দুর্বল হলেও এখানে দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা অঢেল এবং মজুরিও সস্তা। এ দেশের অর্থনীতি এখন কৃষিনির্ভর নয় শিল্পনির্ভর। শিল্প খাতে এসব দক্ষ শ্রমিকের কাজে লাগালে প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে বলে আশা করা যায়। যেসব শিল্প খাত দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তৈরি পোশাকশিল্প, ওষুধশিল্প, জাহাজভাঙ্গা-শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়াশিল্প, স্টিল শিল্প ইত্যাদি। এসব শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে শেখ হাসিনার সরকার ইতিমধ্যে অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে।

সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২৪ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার প্রক্ষেপণ করেছে। সেই আলোকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের বিশ্লেষণে বলেছে, আগামী অর্থবছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে দশমিক ৯ শতাংশ অবদান রাখবে বাংলাদেশের অর্থনীতি। একই পরিমাণ অবদান রাখবে কানাডা। এরপরই অবদান রাখবে ফিলিপাইন্স, থাইল্যান্ড ও সৌদি আরব। আগামী ২০২৪ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের এই অবদান অব্যাহত থাকবে।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু : দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ সেতুর মোট ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ৩৬টি পিয়ারের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে ৬টি পিয়ার (৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭, এবং ২৯)। এসব পিয়ারের কাজ এপ্রিলে পুরোপুরি শেষ হবে। সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ২০টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে। চলতি মাস থেকে প্রতি মাসে ৩টি করে স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

মেট্রোরেলের নির্মাণ : পুরোদমে এগিয়ে চলছে মেট্রোরেল নির্মাণকাজ উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের প্রথম এলিভেটেড মেট্রোরেলের সার্বিক নির্মাণকাজ ২০২২ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে নির্মাণকারী সংস্থা। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী জাপান সরকারের দাতা সংস্থা জাইকা জানিয়েছে, ২০২২ সালের মধ্যে ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রকল্প,প্রবৃদ্ধি,অর্থনীতি,জিডিপি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close