শাহ্জাহান সাজু
শিগগিরই উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশ
বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার সুখবর আসছে শিগগিরই। চলতি মার্চেই ঘোষণাটি আসছে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে যোগ্যতা অর্জনের বিষয়টি মূল্যায়ন করে জানাবে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)। আগামী ১২ থেকে ১৬ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সিডিপির ২০তম অধিবেশন বসছে। ওই অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে এলডিসিগুলোর গত তিন বছরে আর্থসামাজিক খাতের অগ্রগতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। কাঙ্ক্ষিত ওই প্রতিবেদনেই বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের ঘোষণাটি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, যদি এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে; তাহলে বিষয়টি ২২ মার্চের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে জানাবে। তবে তার আগেই ওই প্রতিবেদনের মূল্যায়ন জানা যাবে।
জানা যায়, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার অর্জনটি উদ্যাপনের জন্য ইতোমধ্যেই সরকারের তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হওয়ার সুখবর পেলে আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়া হতে পারে। ওইদিন আতশবাজি পোড়ানো হবে। রাজধানীর সড়কগুলো আলোকমালায় সাজানো হবে, সড়ক ও স্থাপনাগুলো সাজনো হবে লাল-সবুজের পতাকায়। এর পাশাপাশি মন্ত্রণালয়গুলোর পক্ষ থেকেও আলাদাভাবে নানা কর্মসূচির নেওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, উন্নয়ন টেকসই করতে মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি সামাজিক বিষয়গুলো বিবেচনা করে সদস্যদেশগুলোকে তিন ভাগে বিভক্ত করে জাতিসংঘের সিডিপি। স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল, উন্নত দেশ—এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করে সিডিপি। বাংলাদেশসহ প্রায় ৪৭টি দেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় রয়েছে। প্রতি তিন বছর পর জাতিসংঘের সিডিপি এ তালিকায় থাকা দেশগুলোর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে থাকে। তিনটি সূচকের ভিত্তিতে এই পর্যালোচনা করা হয়। এগুলো হলো—মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচক। এলডিসি থেকে বের হতে কমপক্ষে দুটিতে যোগ্যতা নির্ধারিত মান অর্জন করতে হয়। তবে অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে এবার বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ তিনটি সূচকেই নির্ধারিত মান অর্জনে সক্ষম। জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসে সিডিপির প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে অর্থনীতির হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গেছেন। ওই সফরে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে উভয় পক্ষের ভিন্নমতগুলো নিরসন করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, যদি বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে, তাহলে সেই কাঙ্ক্ষিত সুখবরটি জানাবেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। কারণ, তিনি বাংলাদেশের পক্ষে কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) সভায় অংশগ্রহণ করবেন। তবে ৯ মার্চ নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় সিডিপির সাব-গ্রুপ সভায় এলডিসি দেশগুলোর সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হবে। সেদিনই বাংলাদেশের উন্নয়শীল দেশে উন্নীত হওয়ার বিষয়ে আভাস পাওয়া যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সিডিপির হিসাবে ২০১৭ সালের অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৪ দশমিক ৯ পয়েন্ট। নিয়ম অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশ হতে হলে এ সূচকের মান ৩২ পয়েন্টের নিচে থাকতে হবে। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ বা এর বেশি পয়েন্ট পেতে হবে। এ সূচকে বাংলাদেশের অর্জন ৭২ দশমিক ৮ পয়েন্ট। অন্যদিকে, মাথাপিছু আয় সূচকে এক হাজার ২৪২ মার্কিন ডলার থাকতে হবে। ২০১৭ সালের হিসাবে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এক হাজার ২৭২ ডলার।
জানা গেছে, জাতিসংঘ থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জনের ঘোষণা আসলে পরের তিন বছর নির্ধারিত সূচকগুলোর ওই অবস্থান বজায় রাখতে হবে। এরপর উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ করবে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল (ইকোসোক)। এরপর আগামী ২০২৪ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছবে। ২০২৭ সাল নাগাদ সব সুবিধা বহাল থাকবে। পরের বছর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। কারণ ২০২৭ সালের পর বাংলাদেশ নিজেই একটি বিনিয়োগকারী দেশে পরিণত হবে। ফলে বাংলাদেশের আর বৈদেশিক সাহায্য প্রয়োজন পড়বে না। সে জন্য হাতে এখনো যতটুকু সময় আছে, ওই সময়ের মধ্যে সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলমের সঙ্গে গতকাল কথা বলতে চাইলে তিনি অন্য একটি অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকায় তা সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, সিডিপি এ-সংক্রান্ত সব তথ্য নিয়ে গেছে। প্রায় সব তথ্যেই তারা বাংলাদেশের সঙ্গে একমত। এক্ষেত্রে এবার তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ যোগ্যতা নির্ধারিত মান অর্জন করবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
পিডিএসও/হেলাল