আমির হোসেন

  ১৪ জুন, ২০১৮

মুসলিম দেশের সাত প্রতিনিধি

পৃথিবীতে মোট রাষ্ট্রের চেয়েও বেশি দেশ ফুটবল খেলে। পৃথিবীর এখন কোনো গলি-ঘুঁজি নেই যেখানে ফুটবলে কেউ লাথি মারে না। ফুটবল পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। পৃথিবীজোড়া ভক্ত তার। সংখ্যায় যা প্রায় ৪ বিলিয়ন। বিশ্বে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম দেশ ফুটবল খেলে। তারা নিজেদের শক্তিমত্তার প্রমাণ দিয়ে বিশ্বকাপেও খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে সাত-সাতটি মুসলিম দেশ এবারের বিশ্বকাপে স্থান করে নিয়েছে।

তার মধ্যে চারটি আরব দেশও রয়েছে। সেগুলো হলো সৌদি আরব, মিসর, তিউনিশিয়া ও মরক্কো। এছাড়াও রয়েছে ইরান, নাইজেরিয়া ও সেনেগাল। এবারের বিশ্বকাপে সৌদি আরব ও মিসর রয়েছে ‘এ’ গ্রুপে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক রাশিয়া ও উরুগুয়ে। মরক্কো আর ইরান রয়েছে ‘বি’ গ্রুপে। এই গ্রুপে তাদের অপর দুই প্রতিপক্ষ স্পেন ও পর্তুগাল। নাইজেরিয়া রয়েছে ‘ডি’ গ্রুপে। আফ্রিকান মুসলিম দেশটি প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে আর্জেন্টিনা, ক্রেয়েশিয়া ও আইসল্যান্ডকে। ‘জি’ গ্রুপে রয়েছে তিউনিশিয়া। তাদের প্রতিপক্ষ পানামা, বেলজিয়াম ও ইংল্যান্ড। আর ‘এইচ’ গ্রুপে রয়েছে আরেক মুসলিম দেশ সেনেগাল। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া, জাপান ও পোল্যান্ড। গ্রুপ বিশ্লেষণ করলে

দেখা যাবে মুসলিম দেশগুলোকে কেউ ফেভারিটের কাতারে রাখবে না। কারণ তারা আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিলের মতো ছান্দসিক ফুটবল খেলতে পারবে না। হয়তো জার্মানির মতো গতিময় ফুটবলেরও প্রদর্শন করতে পারবে না। তাদের দলে হয়তো মেসি, নেইমার, রাশফোর্ড, গ্রিজমান, রোনালদো, রদ্রিগেজ, লেভানডোস্কিদের মতো তারকা নেই। বড় দলগুলোর বিপক্ষে তারা জয় পেলে সেটাকে অঘটন হিসেবে শিরোনাম হয়ে আসবে। তারপরও এসব দলে সালাহ, বেনেশিয়া, সাদিও মানেদের মতো ফুটবলাররা আছেন। তারা সেরাটা দিয়ে দলকে জয় উপহার দিতে চেষ্টা করবেন। আবেগ আর ভালোবাসা মিশ্রিত তাদের সেই পারফরম্যান্স দেখতে মুখিয়ে থাকবে মুসলিম দেশগুলো। চলুন সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক রাশিয়া বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাওয়া সাত মুসলিম দেশ সম্পর্কে।

সৌদি আরব : ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপে অভিষেক হয়েছিল সৌদি আরবের। তারপর আরো তিনবার বিশ্বকাপে খেলেছে তারা। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছে সৌদি আরব। ১২ বছর পর বিশ্বকাপে আসা সৌদি আরব ১৪ জুন বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে রাশিয়ার মুখোমুখি হবে। বিশ্বকাপে তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য শেষ ষোলো। ১৯৯৪ সালে গ্রুপপর্বে নেদারল্যান্ডস ও মরক্কোকে হারিয়ে শেষ ষোলোতে জায়গা করে নিয়েছিল।

মিসর : ‘দ্য ফারাও’ খ্যাত মিসর এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে। ১৯৩৪ সালে প্রথম ও ১৯৯০ সালে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে খেলেছিল তারা। ২৮ বছর পর সালাহদের পারফরম্যান্সে ভর করে আবার বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছে নীল নদ আর পিরামিডের দেশটি। গ্রুপপর্বে তারা পেয়েছে রাশিয়া, উরুগুয়ে ও সৌদি আরবকে। বর্তমানে অবশ্য মিসর দলে বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলার রয়েছেন। যারা ইউরোপসহ ঘরোয়া লিগে ভালো করছেন। সেই তালিকায় আছেন সালাহ, সাঈদ, আহমেদ হাসান ও মাহমুদ।

নাইজেরিয়া : ১৯৯৪ সালে নাইজেরিয়া প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলে। সেবার গ্রুপপর্বে তিন ম্যাচের দুইটিতেই জিতে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ছিল। কিন্তু নকআউট পর্বে গিয়ে বাদ পড়েছিল। ১৯৯৮ বিশ্বকাপেও তারা নকআউট পর্বে উঠেছিল। শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়েছিল। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপেও ভাগ্যের সিকে ছিঁড়েনি নাইজেরিয়ার। এবারও তারা গ্রুপপর্ব পেরিয়ে এলেও শেষ ষোলোর গ-ি ভাঙতে পারেনি। রাশিয়ায় এবার পারবে কী?

ইরান : ইরান এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে। ১৯৭৮, ১৯৯৮, ২০০৬ ও ২০১৪ বিশ্বকাপে তারা খেলেছে। কিন্তু তারা একবারও গ্রুপপর্বের গ-ি পেরুতে পারেনি। ২০১৪ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে দারুণ খেলেছিল তারা। মেসির করা অন্তিম মুহূর্তের গোলে হার মেনেছিল তারা। নাইজেরিয়ার সঙ্গে করেছিল গোলশূন্য ড্র। কিন্তু শেষ ম্যাচে বসনিয়া হার্জেগোভিনার কাছে ৩-১ ব্যবধানে হেরে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নেয় তারা। এবার ভালো কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে রাশিয়া গিয়েছে তারা।

তিউনিশিয়া : তিউনিশিয়াও এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলছে। এর আগে তারা ১৯৭৮, ১৯৯৮, ২০০২ ও ২০০৬ বিশ্বকাপে খেলেছে। বিশ্বকাপে দলটির সেরা সাফল্য মেক্সিকোর বিপক্ষে ৩-১ ব্যবধানে জয়। সেটাও তারা পেয়েছিল ৪০ বছর আগে ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে। আর পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে করেছিল গোলশূন্য ড্র। এক জয় ও এক ড্রয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের তিনে থেকে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল। সেবার তারা ১৬ দলের মধ্যে নবম হয়েছিল। রাশিয়া বিশ্বকাপে ‘জি’ গ্রুপে তাদের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম ও পানামার মতো দল। এবার আফ্রিকান এই দেশটি কত দূর যেতে পারে দেখার বিষয়।

মরক্কো : ইরান ও তিউনিশিয়ার মতো মরক্কোও এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলছে। ১৯৭০ সালে বিশ্বকাপে অভিষেক হয় মরক্কোর। এরপর ১৯৮৬, ১৯৯৪ ও ১৯৯৮ বিশ্বকাপে খেলেছে লায়ন্স অব দ্য আটলাস খ্যাত মরক্কো। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে তারা স্কটল্যান্ডকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল। নরওয়ের সঙ্গে ২-২ গোলে করেছিল ড্র। আর ব্রাজিলের কাছে হেরেছিল ৩-০ ব্যবধানে। দুই দশক পর আবারো তারা বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ করে নিয়েছে। এবার তারা রয়েছে ‘বি’ গ্রুপে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ স্পেন, পর্তুগাল ও ইরান।

সেনেগাল : ২০০২ সালের পর আবারো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে সেনেগাল। বিশ্বকাপে নিজেদের আগমনের জানান ভালোভাবেই দিয়েছিল সেনেগাল। অভিষেকেই তারা পৌঁছে গিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। গ্রুপপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফ্রান্সকে ১-০ গোলে হারিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল তারা। পরের ম্যাচে ডেনমার্কের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে পরের রাউন্ডে যাওয়ার পথ সুগম করে। আর শেষ ম্যাচে উরুগুয়ের সঙ্গে ৩-৩ গোলে ড্র করে শেষ ষোলোতে জায়গা করে নেয়। শেষ ষোলোতে সুইডেনকে ২-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে। শেষ আটে গিয়ে তারা তুরস্কের কাছে অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে ১-০ ব্যবধানে হেরে যায়। ১৬ বছর পর আবার তারা বিশ্বকাপে। রাশিয়া বিশ্বকাপে সেনেগাল রয়েছে ‘এইচ’ গ্রুপে। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া, জাপান ও পোল্যান্ড। এবারও কী চমক দেখিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে পারবে তেরাঙ্গার সিংহরা?

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist