নিজস্ব প্রতিবেদক
গৃহঋণের টাকাও যাচ্ছে বিদেশে
সব ঋণের চেয়ে গৃহঋণে খেলাপি সবচেয়ে কম। তবে ঋণের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। গত এক যুগে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলে ৫৬ হাজার কোটি টাকার বেশি গৃহঋণ বিতরণ করেছে।
তবে মোট গৃহঋণের প্রায় ৮৪ শতাংশ পায় শহরের গ্রাহক আর মাত্র ১৬ শতাংশ পায় গ্রামের গ্রাহক। এই বৈষম্য কমাতে গ্রামের গ্রাহকদের ঋণ বাড়িয়ে দিতে বিভিন্ন সময় ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিভিন্ন সংস্থা।
মূল্যস্ফীতি কমাতে আবাসন খাতে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করায় ২০১১ সালের পর দেশে গৃহঋণ বিতরণের হার কমে যায়। তবে সুদের হার কমে যাওয়ায় ২০১৪ সালের পর থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করে।
এদিকে গৃহঋণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ হচ্ছে, গৃহঋণের টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায়ও এমন অভিযোগ উঠে এসেছে।
আলোচনায় বলা হয়, আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মালয়েশিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে অট্টালিকায় বসবাস করছেন। ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানতের অর্থ নানা কৌশলে তারা বিদেশে পাচার করে সেখানে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলছেন।
বিআইবিএম আয়োজিত ‘হোমলোন অব ব্যাংকস: ট্রেন্ড অ্যান্ড ইমপ্যাক্ট’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল বৈঠকে বিআইবিএমের সুপারনিউমারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী এসব কথা বলেন। বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক মহিউদ্দিন সিদ্দিক; সহযোগী অধ্যাপক মো. আলমগীর ও ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
প্রবন্ধসূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের রেশিও ছিল ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। তখন গৃহঋণে খেলাপি ছিল এক দশমিক ৫৭ শতাংশ। ২০১৬ সালে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। এ সময় গৃহঋণে খেলাপির হার ৩ দশমিক ১২ শতাংশ।
বিআইবিএমের ওই বৈঠকে উঠে আসে গৃহঋণখাতের আরো অসঙ্গতির কথা। বক্তারা জানান, অসাধু আবাসন ব্যবসায়ীদের অনেকে ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট তৈরি করে বিক্রি করেছে; কিন্তু তার রেজিস্ট্রেশন দেয়নি গ্রাহকদের। এর কারণ হচ্ছে, তারা লোন পরিশোধ করছে না। তাই ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন দিতে পারছে না। তাই গ্রাহকরা ফ্ল্যাট কিনেও রেজিস্ট্রেশন পাচ্ছেন না।
বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস. কে. সুর চৌধুরী। তিনি বলেন, মানুষ যাতে সহজে গৃহনির্মাণে ঋণ পেতে পারে সে ব্যাপারে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। যাতে মধ্যবিত্তের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় সে কারণে সহজ শর্তে ও স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, গৃহঋণের নানা দিক বিশ্লেষণ করে নীতিমালা প্রণয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। আশা করা যায়, এই নীতিমালা হলে গ্রাহকরা সহজে ঋণ পাবেন।
বৈঠকে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, ঋণ যাতে গ্রামের মানুষও পায়-তার ব্যবস্থা করতে হবে। গৃহঋণের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলোও সমাধান প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের কান্ট্রি হেড আব্রার আনোয়ার বলেন, গৃহঋণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে উচ্চ সুদ বড় বাধা। আগামীতে গৃহঋণে সুদহার কমিয়ে আনতে হবে। একইসঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিদের গৃহঋণের সুযোগ দিতে হবে।
"