নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ আগস্ট, ২০২০

রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া

সৌদি থেকে এসেছে দ্বিগুণ

মহামারি কোভিড-১৯-এর মধ্যেও দেশে রেমিট্যান্স আহরণে একের পর এক রেকর্ড তৈরি হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ফলে অর্থনীতির অধিকাংশ সূচক নি¤œমুখী হলেও প্রতি মাসেই বেড়ে চলেছে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ। রেকর্ড ভেঙে তৈরি হচ্ছে নতুন রেকর্ড। বাংলাদেশের এই রেকর্ড তৈরিতে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব থেকে দ্বিগুণ হারে রেমিট্যান্স আসা শুরু করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনার উদ্যোগ হুন্ডি ব্যবসাকে উৎখাত করে চলেছে। পাশাপাশি প্রবাসীদের করোনা কেন্দ্রিক কিছু উদ্যোগের কারণেও রেমিট্যান্স বাড়ছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রায় ২৬০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। এদিকে জুলাইয়ে মোট আহরিত রেমিট্যান্সের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের ৭টি দেশ থেকে এসেছে ১৪৮ কোটি ডলার। এর মধ্যে শুধু সৌদি আরবের প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৬৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার। যা গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ৯১ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাসে সৌদি থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩৩ কোটি ১২ লাখ ডলার। এছাড়া জুলাইয়ে দেশে আসা মোট রেমিট্যান্সের ২৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ পাঠিয়েঠেন সৌদি প্রবাসীরা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, মহামারির কারণে অবৈধপথ (হুন্ডি) রেমিট্যান্স আসা কমে যাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো বেড়েছে। এছাড়া সরকার গত অর্থবছর থেকে রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ায় বৈধ পথে বেড়েছে প্রবাসী আয়।

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী লকডাউনের ফলে অনেক প্রবাসী বেতন-ভাতা পাননি। অনেকে কর্মহীন হয়ে যান। ফলে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস তেমন রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেননি প্রবাসীরা। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে মে মাস থেকে আবারও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। তবে অনেকে চাকরি হারিয়ে বা ব্যবসা গুটিয়ে নিয়ে দেশে ফিরতে জমানো সব অর্থ দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এসব কারণে বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের মধ্যেও বেড়েছে রেমিট্যান্স।

বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের বড় বাজার সৌদি আরব। বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজারের মতো মানুষ বিদেশে কাজ করতে যান। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ যায় সৌদি আরবে। দেশটিতে জানুয়ারি মাসে গেছেন ৫২ হাজার মানুষ, ফেব্রুয়ারি মাসে গেছেন ৪৪ হাজার মানুষ, আর মার্চে ফ্লাইট বন্ধের আগ পর্যন্ত ৩৮ হাজার বাংলাদেশি গেছেন। বর্তমানে ২২ লাখের মতো বাংলাদেশি অভিবাসী সৌদি আরবে আছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গেল অর্থবছরে রেমিট্যান্স পাঠানোয় শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে সৌদি আরব ছাড়া অন্য দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, সিঙ্গাপুর ও ইতালি।

জুলাইয়ে রেমিট্যান্স আহরণের দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৪ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। গত বছর একই সময়ে ছিল ১৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। তৃতীয় অবস্থানে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ২৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাইয়ে এসেছিল ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। চতুর্থে থাকা মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ২৩ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, আগের বছর যা ছিল ১১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার।

পঞ্চম অবস্থানে থাকা ওমান থেকে এসেছে ১৯ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। আগের বছর জুলাইয়ে দেশটি থেকে এসেছিল ১০ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। এছাড়া জুলাই মাসে যুক্তরাজ্য থেকে পঠিয়েছে ১৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। কুয়েত থেকে ১৭ কোটি ডলার, কাতার থেকে পাঠিয়েছে ১২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার, সিঙ্গাপুর থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৮ কোটি ২৮ লাখ ডলার এবং ইতালি থেকে এসেছে ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট ১ হাজার ৮২০ কোটি ৪৯ লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত অর্থ দেশে আসেনি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। সেই হিসাবে আগের অর্থবছরের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার বা ১৫ হাজার কোটি টাকা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close