এখলাসুর রহমান

  ০৬ এপ্রিল, ২০১৮

পরীস্থান

আমি প্রতি রাতেই ঘরে ফিরে অবাক হই। কে যেন আমার বিছানা-পত্তর ঠিকঠাক করে রেখেছে। ছড়ানো-ছিটানো কাপড়গুলো সাজিয়ে আলনায় রেখে গেছে। আমার ঘরে আমি ছাড়া আর কেউ থাকে না। অনেক রাতে তালা খুলে ভেতরে ঢুকি। বাতি জ্বালাই। মনে হয়, কে যেন এইমাত্র বেরিয়ে গেছে। এক অদ্ভুত মাদকতাময় সুগন্ধে ঘরটা মৌ মৌ করছে। আমি মোহগ্রস্ত হয়ে বাইরে বেরিয়ে তাকে খুঁজতে থাকি। জঙ্গলের পথ ধরে হাঁটতে থাকি। দেখি, সামনে একটা আলো জ্বলছে। ভাবি, হয়তো এখানেই আছে। কিন্তু যতই হাঁটছি আলোটার কাছে যেতে পারছি না। দূরত্বটা মোটেই কমছে না। শুরুতে যা ছিল তা-ই। প্রতি রাতেই আমার এমনটি ঘটছে। ঘর ছেড়ে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হাঁটছি। নদীর পাড় বেয়ে হাঁটছি। কে এই রহস্যময়ী? কী তার পরিচয়? যে প্রতিরাতেই আমার ঘর গুছিয়ে যায় ও সুগন্ধি আতর ছিটিয়ে যায়। এই রহস্যটা তখনই উদ্ঘাটিত হলো যখন আর মনের মধ্যে চেপে রাখতে পারছিলাম না। হয়তো কারো কাছে বলেই ফেলব, এমনই মনে হয়েছিল সেদিন। গভীর রাতে ধড়মড় করে ঘুম থেকে জেগে উঠি। টের পাই, ঘরের চালে কে যেন হাঁটছে। কাপড়ের খসখস শব্দ শুনতে পাই। কোমল মিহি কণ্ঠে আমাকে ডাকল, বোরহান! আমি সাজিদা পরী। তোমাকে নিয়ে পরীস্থানে যাব। বাইরে আস।

ঘরের ভেতর বাতি নিভানো ছিল। অথচ, ঘরজুড়ে উজ্জ্বল আলো বইছে। সাজিদার কণ্ঠে এ কোন আলোর দ্যুতি, যা কোনদিন দেখিনি! আমি জামা পরে রেডি হচ্ছিলাম। সাজিদা টিনের চাল হতে বেড়ার ফাঁকে মুখ রেখে বলল, এই জামা পরে পরীস্থানে যাওয়া যাবে না। আমি তোমার জন্য পোশাক এনেছি।

আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো ঘর হতে বের হই। ততক্ষণে সাজিদার শরীর ঠাসা সুগন্ধে বুঁদ হয়ে গেছি। উন্মাতাল পুলকের ফাগুন হাওয়ায় দুলছি। সাজিদা আমার হাত ধরে বলল, চলো।

বেরিয়ে টের পাই লেপ্টালেপ্টিভাবে মিশে গেছি সাজিদার শরীরের সঙ্গে। স্পর্শের পুলকে আচ্ছন্ন হতে হতে শূন্যে উড়ছি। উড়ে যেতে যেতে হঠাৎ থেমে যাই। নিজেকে আবিষ্কার করি এক অচেনা জঙ্গলে। দেখি হরেক রকমের গাছগাছালি। পাতাগুলো চিকচিক করছে। পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুল-ফল।

সাজিদা বলল, এটাই পরীস্থান। আমার বাবা-মা ও ভাইয়েরা তোমারে দেখবে। তুমি বসো।

আমি মসৃণ দূর্বাপাতার ওপর দাঁড়িয়েছিলাম। বসতে গিয়ে টের পাই, বসেছি দূর্বাপাতার ওপরে নয় হাতাওয়ালা চেয়ারে। সাজিদাও আমার পাশে বসল। আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমিও তাকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার এতদিনের সমস্ত ক্লান্তি, অবসাদ যেন এক এক করে খসে যাচ্ছিল সব। জীবনের রুক্ষতা ঢেকে গেল এক অপূর্ব কোমলতায়। আমি কোথায় ছিলাম? আমি মানুষ। আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আমার ঘর, আমার কবিতা, আমার জীবন যন্ত্রণা, হতাশা ও ক্লান্তি মুহূর্তে উধাও হয়ে গেছে। আমার ভাবনায়, আমার স্মরণে ও আমার অনুভূতিতে সাজিদা ছাড়া আর কোনো সত্য নেই। সাজিদার আঁচলে মুখ লাগিয়ে আমি এক পরম শান্তির সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছি। অথচ, সাজিদাকে আমি দেখছি না। হঠাৎ একটি পুরুষ কণ্ঠে চমকে উঠি, সাজিদা, বোরহান বাবাজীকে কিছু ফলমূল ও মিষ্টি দাও।

সাজিদা আমাকে তার আঁচলের স্পর্শ হতে সরিয়ে বলল, দিচ্ছি বাবা। তবে এখানে দেব, নাকি তোমার ঘরে নিয়ে আসব?

সাজিদার বাবা সিদরাতুল কুবুরিয়া বলল, না, আমার ঘরে নিয়ে আসো।

সাজিদা আমাকে বলল, তোমার কী খেতে ইচ্ছে করছে। যা ইচ্ছে করবে তা-ই প্লেট ভর্তি হয়ে তোমার সামনে আসবে।

আমার পোয়া পিঠার কথা মনে হলো। রসগোল্লার কথা মনে হলো। আপেল, আঙুর ও নাশপাতির কথা মনে হলো। মনে হচ্ছে আর দেখছি সাজিদা এসব প্লেটে সাজাচ্ছে। আমি দেখতে পাই থরে থরে প্লেট ভর্তি সাজানো রয়েছে পোয়াপিঠা, আপেল, আঙুর ও নাশপাতি। আমি একটার পর একটা খেতে থাকি। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় খাদ্য। খেতে খেতে অজ্ঞান হয়ে গেলাম। ঘুমিয়ে পড়লাম। যখন জ্ঞান ফিরল, তখন জেগে উঠলাম। বুঝতে পারি, আমি আমার ঘরের বিছানায় শুয়ে আছি। কাঁঠালতলীর চিরচেনা মানুষগুলো সব জেগে উঠছে। হাত মুখ ধুয়ে ডাল-রুটি রান্না করি। আয়নার সামনে দাঁড়াই। দেখি, সাজিদার ছোঁয়ায় সজীবতার ছাপ পড়েছে মুখে। পরীস্থানের সুখ স্মৃতিতে আমার মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। আমার সময় কাটছে আবারও সেই রাতের অপেক্ষায়। কখন রাত হবে। সাজিদা আসবে। আমি পরীস্থানে যাব। সাজিদার স্পর্শ সুখে বিভোর হব। আমার সমস্ত ভাবনাজুড়ে সাজিদা। আমার সমস্ত অস্তিত্বজুড়ে সাজিদা।

শরীফ কম্পিউটার বন্ধ করে খুব মন দিয়ে এতক্ষণ আমার কথা শুনছিল। পরীস্থানের গল্প শুনতে শুনতে বিস্ময়ে ও ভয়ে ওর চোখজোড়া ছানাবড়া হয়ে উঠছিল। আমি বললাম, সাজিদা পরীর সঙ্গে আমার সম্পর্কের কাহিনি শুনিয়ে ফেললাম। আসলে প্রসঙ্গক্রমে বলে ফেলেছি। তুমিও আমার সম্পর্কে জানতে কৌতূহল দেখালে তাই। বললে, নারী বর্জিতভাবে আমি কিভাবে থাকি? এতরাতে ঝাড় জঙ্গলে কিভাবে একা একা চলাচল করি? ভয়ভীতি নেই কেন? আসলে আমার ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। জিন-পরীরা আমাকে দেখলে রাস্তা ছেড়ে চলে যায়। কারণ, সাজিদা জিনের সরদারের মেয়ে।

শরীফ বলল, ওরাতো আতশী জাতি। আমার কাছে যে ব্যাপারটা বলেছ, নিশ্চয়ই তা সাজিদা জেনে গেছে।

আমি বললাম, আজকে রাতে যখন দেখা হবে, তখন জিজ্ঞেস করতে পারে। রাগ করে কি না, কে জানে? ভারী চিন্তায় পড়ে গেলাম।

শরীফ ভয়ার্ত গলায় বলল, আমার কোনো সমস্যা হবে নাতো?

বললাম, না। তবে রাতে একটু দুষ্টুমি করতে পারে।

শরীফ ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, মানে?

ধর, রাতে ঘর থেকে বেরিয়েছ প্রস্রাব করতে। হঠাৎ তোমাকে ছুঁঁয়ে দিতে পারে অথবা মৃদু থাপ্পড় দিতে পারে।

শরীফ ভয়ে কেঁপে ওঠে, মানে! আমাকে ছুঁয়ে দেবে! থাপ্পড় দেবে! আমি কি দেখতে পাব?

আমি বললাম, না, দেখতে পাবে না।

শরীফ বলল, তোমার কাহিনি শুনিয়েতো আমায় বিপদে ফেললে!

বললাম, ভয়ের কিছু নেই। সাজিদা জানে তুমি আমার বন্ধু।

যথারীতি দিনের শেষে রাত এলো। যত রাত ঘনাচ্ছে, তত পুলকিত হচ্ছি। সাজিদাকে ভাবতে ভাবতে শুয়ে আছি। হঠাৎ একটি ডাল ভাঙার শব্দে খুশি হয়ে উঠি। আমি শুনতে পাই, বোরহান বাইরে আসো। আমি তড়িঘড়ি বেরিয়ে পড়ি। সাজিদা আমাকে তার ডানায় মিশিয়ে শূন্যে উড়তে লাগল। না, আজ পরীস্থানে যায়নি। এসেছে একটা নদীর পাড়ে। দেখতে পাই, সাজিদার পরনে খুবই খোলামেলা পোশাক। ডানাকাটা গ্যাঞ্জি। ঊরু পর্যন্ত পাজামা। সাজিদার সৌন্দর্যে আমার চোখ ধাঁধিয়ে গেল। ও আমার কাছে এলো। ওর শরীরের সুগন্ধে আমি অভিভূত হয়ে গেলাম।

বললাম, তোমাকে আরো গভীরভাবে কাছে পেতে চাই সাজিদা।

সাজিদা বলল, তোমার সঙ্গেতো এখনো আমার বিয়ে হয়নি। একমাস অপেক্ষা করো।

এতক্ষণ ধরে সাজিদা শরীরী হয়ে আমার কাছে ছিল। সহসা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। টের পাচ্ছি ও নদীতে গোসল করছে। আমি জলের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। ভেজা কাপড়ে ওর সুন্দর শরীর আমাকে দারুণভাবে পুলকিত করছে। টের পাই, ভেজা কাপড় পরে সাজিদা আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছে। বললাম, সাজিদা আমি তোমাকে এই অবস্থায় দেখতে চাই। তুমি দৃশ্যমান হও।

সাজিদা বলল, তা বুঝতে পারছি। তোমার ইচ্ছেটা আমার মনের ঘরে জমা রইল। একমাস পরে আমি তোমাকে নিয়ে একসঙ্গে নদীতে গোসল করব। দুজনে মিলে সাঁতারও কাটব, তখন দেখবে। এখন চলো। তোমাকে ঘরে পৌঁছে দিই।

বিস্ময়ভরা চোখে ভয়ার্ত শরীফ এতক্ষণ ধরে আমার কথা শুনছিল।

আমি বললাম, রাস্তায় একটি ভূত আমাদের পথরোধ করে দাঁড়াল।

তখন সাজিদা ক্রুদ্ধ কণ্ঠে বলল, মুশরিক্যা পথ ছেড়ে দাঁড়া বলছি। তুই জানিস কার সামনে দাঁড়িয়েছিস? আমার বাবার নাম জিনের সরদার সিদরাতুল কুবুরিয়া।

ভূত মুশরিক তখন ভয়ে কাঁপতে লাগল। সাজিদার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইল। বলল, আপা, কুবুরিয়া হুজুরকে বলবেন না!

সাজিদা বলল, আচ্ছা এবার ক্ষমা করে দিলাম। আর শুনে রাখ, আমার সঙ্গে যে আছে ও মানুষ। নাম বোরহান। রাত-বিরাতে একা একা চলাফেরা করে। ওকে সবসময় তুই পাহাড়া দিবি।

মুশরিক ভূত বলল, হ্যাঁ দেব। অবশ্যই দেব।

সেই থেকে মুশরিক ভূত সবসময় আমার আশেপাশেই থাকে। আমি এখন তখন শ্মশানে যেতে পারি। কবরস্থানে যেতে পারি। আমার কোনো ভয় নেই।

শরীফ ভয়ে আঁতকে উঠে বলল, মুশরিক ভূত কি এখনো তোমার সঙ্গে আছে?

বললাম, ভূতেরা দিনে ঘুমায়। সন্ধ্যার পরপরই ও আমার কাছে আসবে। গতকাল সন্ধ্যায় আমি যে তোমার ওখানে ছিলাম। মুশরিক তখন তোমার কম্পিউটারের ওপর বসে ছিল।

শরীফ বলল, প্লিজ বন্ধু তুমি একটু বলে দিয়ো আমার যেন ক্ষতি না করে!

হেসে বললাম, না, ক্ষতি করবে না। ও জানে তুমি আমার বন্ধু।

সাজিদা পরীর সঙ্গে আমার সম্পর্কের বিষয়টা শরীফকে বলায় সাজিদা কিছু মনে করেনি। তাই আমার দুশ্চিন্তা কাটল। তবে শরীফের দুশ্চিন্তা বাড়ল। ও বাড়িতে চলে গেল। ওর বাড়ি কাঁঠালতলীর কাঁঠাল গাছটার নিচে।

পরদিন সকালে আমি শরীফের কম্পিউটারের দোকানে এলাম। ও বলল, গতরাতে আমার ঘড়িটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সারা ঘর তন্নতন্ন করেও খুঁজে পাইনি। অতঃপর ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম হতে উঠে দেখি আমার ঘড়িটা সিথানের পাশে। আমার স্ত্রী বলল, আশ্চর্য এখন এটা এখানে কিভাবে? আমি যা বোঝার বুঝে গেলাম। নিশ্চয়ই সাজিদা পরীর কর্ম। আমার স্ত্রীকে বিষয়টা বলিনি। বললে ও ভয় পেত।

বললাম, হ্যাঁ জানি। সাজিদা আমাকে এ বিষয়টা বলেছে।

শরীফ আমাকে বলল, তোমাকে আমার ঈর্ষা হয়। আমার জীবনে যদি এমন একটা পরী আসতো! তুমি সত্যিই মহা ভাগ্যবান।

আমি ঈর্ষার পাত্র হতে পেরে তৃপ্তির হাসি হেসে বললাম, হয়তোবা তাই।

শরীফ বলল, তুমি তো তাহলে আর কোনো মানবীকে বিয়ে করছ না? সাজিদা পরীকেই বিয়ে করছ?

আমি বললাম, মানবীকে বিয়ে! অসম্ভব। আমিতো কোনো মানবীর দিকে চোখ তুলেই তাকাতে পারি না। সাজিদা জেনে গিয়ে কঠোরভাবে শাসায়। বিয়ে করলেতো আমার ঘাড় মটকে দেবে। মাধবীকে আমার ভালো লেগছিল। ওকে মুগ্ধ চোখে দেখেছিলাম। ও আমার ভাবনায় মিশে গিয়েছিল। যদিও সে আমাকে পছন্দ করত কি না, বুঝতে পারিনি। তবে মাধবী মনের অজান্তেই আমার মনে ঠাঁই করে নিয়েছিল।

ব্যাপারটা জানতে পেরে সাজিদা আমাকে খুব করে শাসিয়েছিল। এরপর থেকে আমি আর মাধবীকে দেখতে যাচ্ছি না। তার কোনো খোঁজও রাখি না। তবে, সেদিন সাজিদা এসে আমাকে বলল, তোমার মাধবীর খুব অসুখ। বুকে টিউমারের মতো কী জানি একটা হয়েছে। কেমন শক্ত শক্ত লাগে।

সংবাদটা শুনে আমি আঁতকে উঠি। আবার সাজিদাকে ভয় পেয়ে তা চেপে যেতে চেষ্টা করি।

সাজিদা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার মাধবীর খোঁজ নিতে ইচ্ছে করছে খুব। তাই না? আমাকে ভয় পেয়ে তোমার ইচ্ছেটা চেপে রাখছ। শোনো, মাধবীর সঙ্গে আমার কোনো শত্রুতা নেই। তুমিও শত্রুতা করো, তা আমি চাই না। চাইতে পারি না। তবে, আমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসার আবেগে কাছে নিতে পারবে না। কারো সঙ্গে তোমার এমনটি হলে তা আমি মানবো না। ভালোবাসার এই দিকটা শুধুই আমার সঙ্গে হতে হবে। তুমি ইচ্ছে করলে মাধবীর খোঁজ নিতে যেতে পারো।

মাধবীর অসুখের কথা শুনে মনটা অস্থির হয়ে উঠল। খুব সকাল সকাল বের হই। মাধবীর বাড়ি যাই। গিয়ে দেখি ও মনমরা হয়ে বসে আছে। আমি বললাম, হেলাফেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাও। রোগ পোষা ঠিক নয়।

যথারীতি রাতে সাজিদা এলো। সে এবার আমাকে একটি অচেনা বিলের কাছে নিয়ে গেল। আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে বলল, আমি আজ মাঝরাতে মাধবীর ঘরে যাব। অসুখটা কোথায় ও কতটুকু তা দেখে আসব। সাজিদার পারমিশন পেয়ে আমি মাধবীকে ভাবি। অবস্থাটা এরকম যে, রাতে সাজিদা দিনে মাধবী।

একটি বৃষ্টির দিনে মাধবীর মুখটা বারবার ভেসে উঠছিল। আমার খুব ইচ্ছে করছিল ওকে দেখতে। কাঁঠালতলীর উজান খার বাড়িতে বসা ছিলাম। হঠাৎ দেখি দুখুনী যাচ্ছে। দুখুনী মাধবীর বাড়িতে কাজ করে। ওকে ডেকে বললাম, এই শোনো, মাধবীকে একটু বলবে যদি সম্ভব হয় উজান খার বাড়িতে আসতে।

দুখুনী কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো। বলল, বলেছিলাম, আসবে না। বলল, কাজ আছে।

রাতে সাজিদা এলো। বলল, মাধবীকে দেখতে পারছ না বলে তোমার খুব খারাপ লাগছে, তাই না? চলো দেখিয়ে আসি। সাজিদা আমাকে শূন্যে উড়িয়ে নিয়ে গেল। মাধবীর ঘরে ঢুকল। ভেতরে ঢুকে দরোজা খুলল। আমিও ভেতরে ঢুকলাম। মাধবী ঘুমাচ্ছে। সাজিদা ওর বুকে হাত দিয়ে বলল, ওখানটায় শক্ত লাগে। ডাক্তারী মতে অপারেশন লাগবে। আমি ছুঁয়ে দিচ্ছি ভ লো হয়ে যাবে।

অতঃপর সাজিদা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, এবার টেনশন কমল?

আমি বললাম, হ্যাঁ।

এরপর সাজিদা আমাকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নিয়ে গেল। বঙ্গোসাগর হয়ে ফের কাঁঠালতলী ফিরলাম।

শরীফ এতক্ষণ ধরে বিস্ময়াভিভূতভাবে আমার কথা শুনছিল। এদিকে, সাজিদা যে বিয়ের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল, তা শেষ হতে এক সপ্তাহ বাকি আছে। কেন জানি সাজিদা হঠাৎ উধাও হয়ে গেল। আমি সারারাত ওর অপেক্ষায় থাকি কিন্তু ও আসে না। অবশেষে আসল সময়সীমা পাড় হওয়ার দুদিন আগে। হঠাৎ অনুভব করি মাথাটা কেন জানি ভার ভার লাগছে। আমি হাত নাড়াতেই সাজিদার অস্তিত্ব টের পাই। ও হাওয়ায় মিলিয়ে আমার মাথার ওপর বসে আছে।

সাজিদা হাসল। বলল, চলো।

ও আমাকে আবারও পরীস্থানে নিয়ে গেল। ওখানে গিয়ে আরেক বিস্ময়কর ঘটনার মুখোমুখি হই। দেখি মাধবী বসে আছে। ওর পাশ ঘিরে রয়েছে জিন-পরীরা। সাজিদা মাধবীকে পরীর পোশাক পরিয়েছে। জিন সরদার সিদরাতুল কুবুরিয়া ওর মাথায় হাত বুলাল।

মুহূর্তেই মাধবী সাজিদার রূপ ধারণ করল। দেখি দুজন সাজিদা। বিস্ময়ে আমার অনুভূতি স্তব্ধ হয়ে গেছে। আসল সাজিদা বলল, মাধবী আজ থেকে আর মানবী নয়। সে পরী হয়ে গেছে। ওকে গতরাতে আমিই এখানে এনেছি। মাধবীর পরিবার জানে ও হাসপাতালে আছে। ও এখন থেকে সাজিদা হয়ে পরীস্থানে থাকবে। আমি মাধবী হয়ে কাঁঠালতলী যাব। উজান খাঁ মাধবীর সঙ্গে তোমার বিয়ের প্রস্তাব দেবে। তুমি রাজি হয়ে যেয়ো। আমরা বিয়ে করে সুখী হব।

আমার কথা শুনে শরীফ ভয়ে ও বিস্ময়ে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইল। আমি ওর কম্পিউটারে একটি গল্পের অক্ষর বিন্যাসের অর্ডার দিলাম মাধবীকে ভাবতে ভাবতে। শরীফকে বললাম, আগামীকাল গল্পের পান্ডুলিপিটা নিয়ে আসব।

শরীফ বলল, গল্পটার নাম কী।

আমি বললাম, কাল বলব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist