বিজ্ঞান ডেস্ক
দুনিয়া পাল্টে দেওয়া কয়েকটি আবিষ্কার
কৃত্রিম চোখ দিয়ে দেখা যাবে অন্ধকারেও
নেক্সট জেনারেশন রোবটিক্স
আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার প্রতিটি কাজই করে দেবে রোবট- মানুষের এমন স্বপ্ন দীর্ঘদিনের। এমন রোবট এখনো কারখানার সংযোজন প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য কাজের মধ্যে সীমিত। তবে রোবট এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় কারখানাতে। এই রোবটগুলো বর্তমানে মানবকর্মীদের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোকে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য আলাদা করে রাখা উচিত। রোবটিক্স টেকনোলজির উন্নয়ন আমাদের প্রতিদিনের জীবনের বাস্তবতায় সৃষ্টি করেছে হিউম্যান মেশিনের সহযোগীরূপে। উন্নততর ও সস্তা সেন্সর রোবটকে করেছে অধিকতর বোধক্ষম এবং পরিবেশে সাড়া দেওয়ার উপযোগী। রোবট বডি হচ্ছে অধিকতর মানানসই ও নমনীয়। এ ক্ষেত্রে ডিজাইনারেরা অনুপ্রাণিত হন অতিরিক্ত নমনীয়তা ও জটিল জৈব কাঠামো থেকে, যেমন- মানুষের হাত। বর্তমানের রোবটগুলো ক্লাউড কমপিউটিং বিপ্লবের সঙ্গে অনেক বেশি কানেকটেড হওয়ার মাধ্যমে দূর-দূরান্ত থেকে তথ্যে ও ইনস্ট্রাকশনে প্রবেশযোগ্য হয়েছে পুরোপুরি অটোনোমাস ইউনিট হিসেবে প্রোগ্রাম করার পরিবর্তে। রোবটিক্সের এ নতুন যুগ এই মেশিনগুলোকে বড় ধরনের উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে নিয়ে যায় ব্যাপক বিস্তৃত কাজে। জিপিএস টেকনোলজি ব্যবহার করে ঠিক স্মার্টফোনের মতো রোবটগুলো যথাযথভাবে ব্যবহার হতে শুরু হয়েছে কৃষিক্ষেত্রে আগাছা নিয়ন্ত্রণ ও ফসল কাটার কাজে। জাপানে পরীক্ষামূলকভাবে নার্সিং স্কুলে ব্যবহার হচ্ছে। এগুলো রোগীদের বিছানার বাইরে সহায়তা দিয়ে থাকে এবং পক্ষাঘাতে শিকার রোগীদের সহায়তা দেয়, যাতে তাদের দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও নিয়ন্ত্রণ ফিরে আসে। ক্ষুদ্রতর ও অধিকতর নমনীয় ডেক্সটোরাস রোবট বট, ডেক্সটার বট, বেক্সটার ইত্যাদিকে ডিজাইন করা হয়েছে সহজে প্রোগ্রামযোগ্য এবং ম্যানুফেকচারিংয়ের কাজ হ্যান্ডেল করার জন্য, যেগুলো মানুষের জন্য শ্রমসাধ্য ও অসুবিধাজনক। প্রকৃতপক্ষে রোবটগুলো কিছু কাজের জন্য আদর্শ, যেগুলো খুব বেশি পুনরাবৃত্তিমূলক বা মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং মানবকর্মীদের চেয়ে কম খরচে দিনে ২৪ ঘণ্টাই
কাজ করতে পারে।
বিকাশমান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়টি আইসিটি জগতে বহুল আলোচিত ও চর্চিত এক বিষয়। সাধারণ মানুষ যেমন সব কাজ নিজের সহজাত বুদ্ধি খাটিয়ে করে থাকে, সেসব কাজ কমপিউটারের মাধ্যমে করার বিজ্ঞানকে সাধারণত আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলা হয়। গত কয়েক বছর ধরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সে। আধুনিক তরুণ প্রজন্মের বেশিরভাগই স্মার্টফোন ব্যবহার করে। এগুলো মানুষের বলা কথা চিনতে পারে বা ইমেজ রিকগনিশন টেকনোলজি ব্যবহার করে এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন কিউই কাজে ব্যবহার হয়। নিজে নিজে চালিত গাড়ি এবং স্বয়ংক্রিয় উড়ে চলা ড্রোন এখন ব্যাপক বিস্তৃতভাবে ব্যবহারের আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে। সম্প্রতি পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কিছু লার্নিং ও মেমরি টাস্ক সম্পন্ন হয়, যেখানে যন্ত্র মানুষের চেয়ে ভালো কাজ করছে। ওয়াটসন একটি আর্টিফিসিয়ালি ইন্টেলিজেন্ট কমপিউটার সিস্টেম। এটি সম্প্রতি এক কুইজ গেম জিওপারডিতে সেরা মানব প্রার্থীকে হারিয়ে দেয়। স্বাভাবিক হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের তুলনায় আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স একটি যন্ত্রকে বেশি করে সক্ষম করে তোলে পরিবর্তিত পরিবেশ বোঝা ও সে অনুযায়ী সাড়া দেওয়ার ব্যাপারে। এআই ধাপকে আরো এগিয়ে নেয় যন্ত্র থেকে সৃষ্টি হওয়া অগ্রগতির সঙ্গে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেখে বিপুল পরিমাণের তথ্য অঙ্গীভূত করে। এর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো নেভার এন্ডিং ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিং (এনইএলএল) প্রজেক্ট। এটি কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকল্প। মূলত একটি কমপিউটার সিস্টেম, যা শুধু লাখ লাখ ওয়েব পেজ থেকে তথ্য পাঠ করে না, বরং ভবিষ্যতে প্রসেসে আরো ভালো পারফরম্যান্সের জন্য পাঠ ও বোঝার সক্ষমতা উন্নত করতে চেষ্টা করে।
পরবর্তী প্রজন্মের রোবটিক্সের মতো উন্নত করা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রোডাক্টিভিটিকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় এগিয়ে নেবে, যেহেতু যন্ত্র দায়িত্বভার নেয় বিশেষ কিছু কাজ মানুষের চেয়ে নিখুঁতভাবে করার। সড়ক পরিবহনে স্বচালিত গাড়ি দুর্ঘটনা কমিয়ে দেবে। এর ফলে নিহত ও আহতের হার অনেক কমে যাবে। বাস্তবে এমন নজির প্রচুর আছে। কেননা, যন্ত্রে অন্যান্য সমস্যার মতো হিউম্যান এররের সম্ভাবনা নেই। মনোযোগে বিচ্যুতি নেই, নেই দৃষ্টিভ্রমের মতো সমস্যা। ইন্টেলিজেন্স যন্ত্র বিশাল তথ্যের ভা-ারে অনেক দ্রুত ঢুকে যেতে পারে এবং মানুষের আবেগপ্রসূত পক্ষপাতপূর্ণ আসক্তি ছাড়াই সাড়া দিতে সক্ষম হবে। অসুখ-বিসুখ চিহ্নিত করতে চিকিৎসক পেশাজীবীদের চেয়ে ভালো কাজ করতে পারবে। ওয়াটসন সিস্টেম বর্তমানে অনকোলজিতে বিস্তৃত হয়েছে, যাতে ক্যানসার রোগীদের রোগের লক্ষণ ও রোগ চিহ্নিত করাসহ চিকিৎসা সহায়তা দিতে পারে।
সেন্স অ্যান্ড অ্যাভয়ড ড্রোন
চালকবিহীন অ্যারিয়েল ভেহিক্যাল বা ড্রোন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিলিটারি ক্যাপাসিটিতে হয়ে উঠেছে এক গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত অংশ। এগুলো বর্তমানে কৃষিতেও ব্যবহার হয় ফিল্মিং এবং অন্যান্য বহুবিধ অ্যাপ্লিকেশনে, যা দরকার হয় সস্তা এবং বিস্তৃত অ্যারিয়েল সার্ভিলেন্সে। তবে যতটুকু সম্ভব এসব ড্রোনে থাকে মানব পাইলট বা চালক, তবে পার্থক্য হলো এসব ক্ষেত্রের পাইলট বা চালক থাকেন ভূমিতে এবং তাদের বিমান চালনা করেন দূর থেকে। ড্রোন টেকনোলজির পরবর্তী ধাপ হলো এমন মেশিন ডেভেলপ করা, যা নিজে নিজেই উড়তে পারবে, আরো ব্যাপক-বিস্তৃত রেঞ্জের অ্যাপ্লিকেশনে যাবে। এ কাজগুলো যেন সম্পন্ন হয়, সেজন্য ড্রোনকে অবশ্যই স্থানীয় পরিবেশ বোঝার এবং সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা বা সেন্স থাকতে হবে। তাদের চলার পথে অন্যান্য বস্তুর সঙ্গে সব ধরনের সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য উচ্চতা এবং ফ্লাইং ট্রেজেক্টরি পরিবর্তনের সক্ষম হবে। প্রকৃতিতে পাখি, মাছ এবং কীটপতঙ্গ সব একত্রে জড়ো হতে পারে, প্রতিটি প্রাণী প্রতিবেশীদের সাড়া দিতে পারে মুহূর্তের মধ্যে, যাতে কীটপতঙ্গের বা মাছের ঝাঁক একটি সিঙ্গেল ইউনিটে উড়তে বা সাঁতার কাটতে পারে। ড্রোন এ বৈশিষ্ট্যকে ছাপিয়ে যেতে চেষ্টা করছে।
বিশ্বস্ত স্বায়ত্তশাসন এবং সংঘর্ষ এড়িয়ে চলার সক্ষমতার কারণে বিপদসঙ্কুল বা প্রত্যন্ত অঞ্চলের তথ্য সংগ্রহ করা, ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার লাইন চেক করা, জরুরি অবস্থায় মেডিক্যাল সাপ্লাই সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করতে ড্রোন খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
ড্রোন ডেলিভারি মেশিন তাদের কাক্সিক্ষত গন্তব্যের পথ খুব সহজে খুঁজে বের করতে পারে, যা অন্যান্য ফ্লাইং ভেহিক্যাল বা উড়ন্ত যান
এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধকতায় বেশ গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেওয়া হয়। কৃষি ক্ষেত্রে অটোনোমাস তথা স্বায়ত্তশাসিত ড্রোন আকাশ
থেকে বিপুল পরিমাণের জমির ভিজ্যুয়াল ডাটা সংগ্রহ করে প্রসেস করে যথাযথ এবং কার্যকরভাবে সার ও কৃষিকাজে ব্যবহার করার জন্য। ইন্টেল ও অ্যাসেন্ডিং টেকনোলজি ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে প্রদর্শন করে এক প্রোটোটাইপ মাল্টি-কপ্টার ড্রোন, যা নেভিগেট করতে পারে
বাধাসমূহ এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে জনগণকে এড়িয়ে যেতে পারে। এ
মেশিনে ব্যবহার হয় ইন্টেলের তৈরি রিয়েলসেন্স ক্যামেরা মডিউল, যার ওজন মাত্র ৪ গ্রাম এবং পুরুত্ব ৪ মিমির চেয়ে কম। ড্রোন
অপরিহার্যভাবে টু ডাইমেনশনের পরিবর্তে থ্রি ডাইমেনশন
অপারেটিং রোবট। রোবটিক্সের এ অগ্রযাত্রার প্রবণতা পরবর্তী প্রজন্মের রোবটিক্সের আগমনকে ত্বরান্বিত করবে।
"