বকুল আশরাফ
সৈয়দ শামসুল হক
বাঙালি ঐতিহ্যে বিশ্বস্ত এক কবি
‘সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম কবিতা প্রকাশ একুশের সংকলনে। সেই থেকেই আমৃত্যু দাপটের সঙ্গে শাসন করে গেছেন বাংলার কাব্যজগৎ। সৈয়দ শামসুল হকের আত্মপরিক্রমা ও শিল্প পরিকল্পনা দ্বৈরথ বিগত ছয় দশকে বাঙালির সংস্কৃতির সমগ্রতার সঙ্গে সমরেখায় মিলিত হয়েছে। এই দীর্ঘ শিল্পযাত্রায় আত্মদ্বন্দ্ব ও দ্বন্দ্বোত্তরণের অনেকগুলো স্তর তিনি অতিক্রম করেছেন। প্রায় সমসময়েই তিনি সাহিত্যের প্রাচীনতম ও কনিষ্ঠতম দুই রূপ কবিতা ও গল্প রচনার মাধ্যমে শিল্পযাত্রা শুরু করেন।’ [রফিকুল্লাহ খান, অক্ষৌহিণী, ক্রোড়পত্র, সৈয়দ শামসুল হক ৮০তম জন্মবর্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি, এপ্রিল, ২০১৫]।
সৈয়দ হকের কবিতায় মাটি ও মানুষের মধ্যে যে প্রকৃতি রয়েছে, তার সত্তাকে উপলব্ধি করেছেন সময়ের চেয়ে অগ্রগামী থেকে। তার কাব্য চেতনায় দেশ ও ঐতিহ্যের অস্তিত্ব নিরঙ্কুশভাবে ফুটে উঠেছে। আধুনিক ও প্রাচ্য পুরাণের সমন্বয়ে প্রতিচিত্র এঁকেছেন তিনি কবিতা প্রাঙ্গণে। তার বিষয়বিন্যাস আয়োজন সুনিবিড়ভাবে গ্রন্থিত। তিনি জানেন গন্তব্য পথের অধিক। সমকালীন সমাজজীবনের আদিম অকৃত্রিম ভাবনাগুলোর টানাপড়েন, জীবন ধারণের গ্লানি সর্বদা তার কবিতায় স্পষ্ট থেকেছে। ঐতিহাসিক ঘটনাবলির ছবি, নেতৃত্ব, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, যা বাঙালিকে আলোড়িত করে, তেমন অনেক বিবরণ বিধৃত হয়েছে তার কবিতায়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়কার স্মৃতি রোমন্থন থেকে শুরু করে স্বদেশের অস্থির মানচিত্র গণআন্দোলনের জোয়ার জোরালোভাবে উজ্জীবিত করেছে তার কবিতাকে।
পারিপার্শ্বিক ঘাত-প্রতিঘাত, ক্ষত, না পাওয়ার বেদনাশ্রিত মমত্ববোধ ততোধিকভাবে তার কাব্যে মুহ্যমান রয়েছে। তিনি আগামীর কথা বলেছেন। জীবনের স্বতঃস্ফূর্ততার কথা বলেছেন। মধ্যবিত্ত জীবনের খ-চিত্রগুলো কাব্যের পঙ্ক্তিমালায় অঙ্কিত করতে পেরেছেন স্বচ্ছন্দে। তাই সমাজ ও সমাজমানস মূর্ত থেকেছে তার কবিতায়।
অতীতকালের মস্ত বড় মুখ/হা খোলা ঠিক বিরাট গরুর মতো/ঘুমায় যেন সবুজ মাঠে শুয়ে/তাড়ায় মাছি লেজেই অবিরত।/তাড়াক মাছি লেজেই অবিরত/প-িতেরা নস্য দিন নাকে/যা গেছে তা চলেই গেছে জানি/কোকিল গেলে বাঁধছে বাসা কাকে। [আত্মার মৃত্যু ও কবি যা দেখেছে]
সমকালীন সমাজব্যবস্থাকে খুব আন্তরিকভাবে ব্যঙ্গ ও স্যাটায়ারের মাধ্যমে তুলে এনেছেন। কেননা, তিনি তো সমাজমনস্ক সৃজনশীল মানুষ। তাই মানুষের দুর্দশার কথা বিশ্বস্ততার সঙ্গে উপস্থাপন করেন। সৈয়দ হক ‘ব্যালার্ড’ নিয়ে কাজ করেছেন, কাহিনী-কবিতা লিখেছেন, মায়ার ওপর কবিতা সিরিজ লিখেছেন। ইরোটিসিজ্ম বা কামজ কবিতা সিরিজ করেছেন। প্রেমের সিরিজ লিখেছেন। তার কবিতার বিষয়বস্তু একেকটি দর্শন থেকে উঠে এসেছে। ডিকশন বা বাগ্বিন্যাস প্রণালীতে ভিন্নতার পরিচয় রেখেছেন। কবি মনে করেন, এ যেন মাতৃগর্ভে একটি ভ্রণের বেড়ে ওঠা। কবি বলেন, ‘কেননা, সৃজনের প্রক্রিয়াটা হচ্ছে মাতৃগর্ভে একটি ভ্রণের বেড়ে ওঠা।... কিছু একটা বাড়ছে ভেতরে। একটা গর্ভ-জলের ভেতরে সেটা রয়েছে, একটা অন্ধকারের ভেতরে রয়েছে। জন্মের পর ইট কামস টু লাইট।’ [সৈয়দ শামসুল হক, পান্থজনের কথা, দ্বিতীয় বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা, নভেম্বর-ডিসেম্বর, ২০১৪]
কখনো বক্তব্যের ভারে কবিতা মন্থর হলেও প্রতিবেদনের ভাষা ব্যবহারিক বাকভঙ্গিকে পেছনে সরিয়ে দিয়েছে। চিন্তার আকরগুলো স্তরে স্তরে বিন্যন্ত হয়েছে, পরস্পরকে সম্পৃক্ত করে পৌঁছেছে সমগ্রের ধারপ্রান্তে। সামাজিক ও ভাবদর্শন অবস্থান কবিতার ভাষায় পরিলক্ষিত থেকে পাঠককে সময়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সৃষ্টি করেছে আবহের পরিসর। কখনো দৃশ্য ও অদৃশ্যের শৃঙ্খল ভেঙে দিয়ে প্রত্যক্ষ বক্তব্য নিয়ে ধাবমান থেকেছে কবিতা, কখনো বা পরোক্ষকে আশ্রয় করে এঁকেছেন সমাজছবি, একুশের শহীদদের ছবি।
আগুন, আগুন জ্বলে, আগুন গলিয়ে মেদ ভুড়ি
বাসনার,
নিকট, নৈঃশব্দ আর আসঙ্গ সঙ্গীতে
রক্তিম মৃত্যুর জ্বালা,
কত না আগুন জ্বলে-শিখা আর শিখা আর শিখা
ক্রমাগত অন্তহীন বর্তুলের মতো
তৃষ্ণার দেয়ালে।
এবং আমার উৎস উল্লাসের ফলমূল চিবিয়ে চিবিয়ে
দাঁড়িয়েছে এঁদো ইঁদারার পাশে অস্পষ্ট আলোতে।
সহস্র পুরুষ তাকে ডেকেছিলো বৃষ্টির ভাষায়-
অনন্ত পুরুষ তাকে দেয়ালে দেয়ালে।
[অন্তহীন বর্তুলের গান]
‘পরানের গহীন ভিতর’ কাব্যে ইতিহাসের সারিবদ্ধ অবস্থানের পরম্পরায় মানুষের ভালোবাসা ও জীবনের সঞ্চয় থেকে যে নির্যাস সঞ্চয় করা যায়, তাকেই কবি ধারণ করেছেন পাওয়া-না পাওয়ার অভিমান সনেটের সুগঠনে, এই কাব্যগ্রন্থে। অনুভবের চলতি সাহিত্যভাষায় একটি বিকল্প পথ তৈরি করেছেন কবি সৈয়দ শামসুল হক। এখানে ভাষার রূপ, অনুষঙ্গ, কল্পনা ও অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে এক বিশেষ সীমা অতিক্রমের প্রয়াসকে অতিক্রান্ত করতে পেরেছেন মাত্র ২৫টি কবিতা-সনেটে। এই কাব্যে আঞ্চলিক ভাষায় সন্নিবদ্ধ উচ্চারণে জীবন গঠনের প্রকৃতি ও প্রতিসঙ্গের এক আকুল আবেদন আমরা লক্ষ্য করি। কবিতার ক্যানভাসে কবি অজানা বেদনার জ্বালা, অপ্রাপ্তির এক নীরব জিজ্ঞাসাকে ধারণ করেছেন।
উঠানে খাড়ায়া আছি, খুলবা না তোমার দুয়ার?
আমার মতন যারা হারায়াছে আইজ তার ভাই,
য্যান শিলাবিষ্টি শ্যাষে পরিষ্কার আকাশ হঠাৎ
হাজার হাজার তারা ঘিরা আছে পুন্নিমা তোমার।
[পরানের গহীন ভিতর-২৪]
কবি সৈয়দ শামসুল হকের কাব্য ‘তোমার নক্ষত্র এই রক্তের লোহিতে’ নেশা ধরায়, সজাগ বোদ্ধা প্রেমিকদের। যারা জীবনের সবুজ মায়ায় দিনের মৃত্যু কামনায় অন্ধকার খোঁজেন, নক্ষত্র দেখবে বলে। যেমন ‘এখনো সেই রাতের ঘোর, এখনো সেই হাওয়া!/নদীর জল! মধ্যরাতে নৌকা আমার বাওয়া।’ [৩৮] অথবা ‘আমি শুধু ভালোবেসে যেতে পারি তাকে,/প্রথম নক্ষত্র সে যে, অন্ধকারে ফোটে/প্রতিটি গ্রহের কেন্দ্রে চন্দ্রটানে তাকে-/। তার জন্যে শব্দফুল প্রতিদিন ফোটে।’ [১০] পরাণেই দেখি ভাঙন ‘বৃষ্টি পড়ে কাচের দেয়াল ঝাপসা হয়ে আসে।/চোখে আমার জলের খেলা ছবির মতো ভাসে।’ [১৮]। তারপর পরিযায়ী পাখি থৈ থৈ জোছনায় রাত জাগা, হৃদয়ে পুরো সৌরম-ল ধারণ, নক্ষত্রহীন, দৃষ্টি দূরে চলে যাওয়া গোলাপ, ইন্দ্রজালের মতো হঠাৎ মিলায়। কবি বলেন, ‘ফাঁকি দিয়ে গেছে স্বর্গীয় পাখি, উদ্যানে যত ফুল/ফুটছে ঝরছে জেনে রাখ তুই ভালোবাসাটাই ভুল।’ [৬]। ধসে পড়া পাহাড় যেন প্রেমিকার মন, উপহাসে ডাকে কাক হৃদয়ে তখন। কবি বলেন, ‘দরজাটা বন্ধ সারারাত/এখন ভাঙ্গছে আলো, প্রান্তরের ঘাসে/সে এখন সাদা হাড়, মৃত শুয়ে আছে/করুণার আকাশ-বাতাস-/পৃথিবীতে শেষ ভালোবাসার নিশ্বাস’/ [৭]।
এক সাক্ষাৎকারে কবি বলেন, ‘আমি লিখতে চেয়েছি, সমাজের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, মানুষের ভেতরে বসবাস করছি, প্রতিনিয়ত মনের ভেতরে একটা অনুরণন বাঙালি ঐতিহ্যে বিশ্বস্ত এক কবি
পাচ্ছি; সেটাই ধ্বনিতে শব্দে ভাষায় কবিতায় গল্পে নাটকে বলবার চেষ্টা করেছি; এবং করে যেতে পারছি- এখনো এটাই আমার কাছে একমাত্র বিবেচ্য বিষয়।’ [সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোলায়মান কবীর ও আহমেদ বাসার, অক্ষৌহিণী, সাহিত্য শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক ছোট কাগজ]
একদিন সবুজ গন্ধবাহী সোনালি সূর্যের দিশা ঘনীভূত জনতার হৃদয়ে হৃদয়ে জ্বালাবে উজ্জ্বল শিখা। সেই অমর সংবাদ যেন চারদিকে ঢেউ তুলে দিয়ে গেল। এভাবেই একদিন নবীন সূর্যেরে তার দৃঢ় অঙ্গীকার জানাবেই। অকস্মাৎ উদ্ভাসিত করে দেবে মানুষের চলার পথ। এ রকম দীপ্ত বাসনা নিয়ে সৈয়দ শামসুল হক লিখেছেন ‘একুশের কবিতা’। কবিতায় আহ্বান জানান সমস্ত দেশের জনতাকে। এই আহ্বানই তো আমাদের স্বাধীনতার ডাক। কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংকলনে সৈয়দ হকের একুশের কবিতা প্রকাশিত হয়।
সভ্যতার মণিবন্ধে সময়ের ঘড়ি
শিশুর জন্ম থেকে জরাদেহ ক্ষীণশ্বাস মানবের অবলুপ্তির সীমারেখায়
বলে গেল সেই কথা। সেই কথা বলে গেল অনর্গল-
...
সঞ্চয় করে যাও মুঠো মুঠো গৈরিক মাটি
সবুজ গন্ধবাহী সোনালি সূর্যের দিশা
অকস্মাৎ উদ্ভাসিত করে দেবে তোমার চলার পথ।
... সেই কথা বলে গেল অনর্গল
পৃথিবীর জিজীবিষু আত্মার আছে। ঘনীভূত জনতার হৃদয়ে হৃদয়ে
উজ্জ্বল শিখা সেই অমর সংবাদ ঢেউ তুলে দিয়ে গেল ॥
[একুশের কবিতা, সৈয়দ শামসুল হক]
মানুষের মধ্যকার প্রকৃতির উপাদান দিয়ে যে কবি ঐতিহ্যের নিরঙ্কুশ সমর্থন নিয়ে কবিতার শরীর তৈরি করেন, তা পাঠকের হৃদস্পর্শী হয়ে ওঠে। যেমনটি ঘটেছে সৈয়দ শামসুল হকের ক্ষেত্রে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষিতার আর্তনাদ বর্ণনা করতে কবি বলেছেন ১০ লাখ ধর্ষিতার কথা, যেটা সংখ্যাতাত্ত্বিকভাবে অতিকথন মনে হতে পাওে, তবে এখানে প্রতীকার্থে উপস্থাপিত। তার কবিতা ‘ব্রহ্মপুত্রের প্রতি’ এভাবেই মুক্তিযুদ্ধকালীন ঘটনা প্রবাহ ও সময়কে প্রতিফলিত করেছে। তবে মুক্তিযুদ্ধ বা ঊনসত্তরের পটভূমি নিয়ে তার অন্যান্য কবিতাও আমাদের সংগ্রামের স্মৃতিকে চির জাগ্রত করে রাখবে।
যখন ১০ লাখ ধর্ষিতার আর্তনাদে নষ্টমান আমার শ্রুতি,
এখনো তো আমার শ্রুতি;
যখন তিরিশ লক্ষ মানুষের রক্তে প্লাবমান আমার স্মৃতি,
এখনো তো আমার স্মৃতি;
যখন তিন কোটি মানুষের গৃহত্যাগে বিলীয়মান আমার সভ্যতা,
এখনো তো আমার সভ্যতা;
যখন বলীবর্দের দ্বিখ-িত খুরে কম্পমান আমার স্বপ্ন,
প্রিয় ব্রহ্মপুত্র, এখনো তো আমার স্বপ্ন।
[ব্রহ্মপুত্রের প্রতি, সৈয়দ শামসুল হক]
সামরিক ব্যারাকের আশপাশের চুনকাম করা দৃশ্যাবলির এক ব্যঙ্গচিত্র আঁকেন কবি সৈয়দ শামসুল হক। সামরিক ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তা এবং তাদের আদেশ পালন করা নিয়ে অনেক ব্যঙ্গরস সৃষ্টি রয়েছে, যা মানুষের মুখে মুখে বা কোনো আসরে বা বন্ধুমহলে বেশ জনপ্রিয়। সৈয়দ হকের ‘চুনকাম করা দুই পায়ে’ তেমনই এক ব্যঙ্গ কবিতা। সামরিক ব্যারাককে বা ক্যাম্প বা ক্যান্টনমেন্টকে বলেছেন তিনি ‘সামরিক খামার’। আমরা ভ্রমণপথে দেখতে পাই, সামরিক অঞ্চলের আশপাশের সবগুলো গাছই একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় চুনকাম করা থাকে। বেশিরভাগই সাদা রং। কবিতাটি কবি ফরিদ কবির সম্পাদিত ‘নির্বাচিতা’য় ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত।
ঘোড়াটি দাঁড়িয়ে ছিল খামারের ধারে
অন্ধকারে আসন্ন সন্ধ্যায়;
......
এ বড় অদ্ভুত বটে, এ বড় তামাশা
অন্ধকার-, মফস্বলে আরো কিছু অন্ধকার বটে-
তবুও তাতেই চোখ মেনে নেয় যা আছে দেখার।
ঘোড়ার বাদামি রং- শুধু তার পায়ে
খুরের উপরিভাগ চমৎকার সাদা-
চুনকাম করা যেন-
যেমন কাঁঠাল বন, আম, জাম, বকুল, পিপুল
সামরিক খামারের সমুখের এই সব সড়কের পাড়ে।
সমস্ত শরীর নিয়ে ইতিহাস সন্মত শ্যাওলা
হঠাৎ পায়ের কাছে চুনের সম্ভ্রান্ত মোজা
পরে সোজা আছে;
ঘোড়াটিও পায়নি নিস্তার-..
[চুনকাম করা দুই পায়ে]
সামরিক শাসনের রাষ্ট্রকাঠামোতে পরিবর্তন ছিল আবশ্যিক সময়ের ব্যবধানে। আন্দোলনের জোয়ার যখন ধাবিত, যখন দৃশ্য বদল হচ্ছে, তখন কবিরাও ধরে রাখেন সেই সময়কে কবিতায়। ভাষা আন্দোলনের অভিজ্ঞতা, গণঅন্দোলনের অভিজ্ঞতা ও স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মৃতি তখন কবির মানসপটে গ্রোথিত থাকে, তখন গণজাগরণের বর্ণনা সরাসরি কবিতায় ফোটে। রাজধানীর রাস্তায় পানির তোড়ের মতো মানুষের ঢল যেখানে অপশাসনের বিরুদ্ধে, জলকামান মেশিনগানের গুলি উপেক্ষা করে নূর হোসেনের মতো জীবন দিতে প্রস্তুত জনতা। সৈয়দ শামসুল হক একত্র এক চিত্রকল্প তৈরি করেন সেই দৃশ্য বদলের।
আরে একি দিখ! কোথা থেকে ঢল বাড়ছে তো বাড়ছেই
তলিয়ে যাচ্ছে বড় রাস্তাটা রাজধানী অভিমুখে
অচিরেই বুঝি এভিনিউগুলো ভাসবে এ পানি তোড়ে।
প্যারেডের মাঠ ঢুবে যাবে, সব বিল্ডিং গিলে খাবে
বোঝা কি যাচ্ছে মহোদয়গণ, দৃশ্য বদল হচ্ছে?
আরে একি দেখি! পত্রিকাগুলো পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা
খবর ছাপছে ভয়াবহ সব, মানুষেরা ছুটে আসছে।
পানির কামান, রাবার বুলেট এ সবতো ছেলেখেলা।
মেশিনগানের গুলি খেয়ে নূর হোসেনরা তবুও হাসছে।
বোঝা কি যাচ্ছে, মহোদয়গণ, দৃশ্য বদল হচ্ছে?
[বোঝা কি যাচ্ছে, মহোদয়গণ, দৃশ্য বদল হচ্ছে]
অবশেষে কবি নির্দিষ্ট গন্তব্যকেই পথ করে নিলেন অপর পারের পথে। আমরা হারালাম গত শতকের পাঁচ দশকের এক নক্ষত্রকে।
"