এম এ সাইদ খোকন, আমতলী (বরগুনা)

  ২৪ নভেম্বর, ২০১৭

মাঠে মাঠে সোনালি ধান

আমন ধান কাটা শুরু, বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

‘এই হেমন্তের কাটা হবে ধান, আবার শূন্য গোলায় ডাকবে ফসলের বান’ সুকান্তের কবিতার এই পঙক্তি বাংলার হেমন্তের যেনো চিরচেনা রূপ। নবান্ন হেমন্তের প্রাণ। যদিও বাঙালির নবান্ন উৎসব এখনও শুরু হতে দেরি। গ্রামে গ্রামে আগাম জাতের ধান কাটা-মাড়াই শুরু হওয়ায় নবান্নের ঘ্রাণে মুখর হচ্ছে আমতলীর কৃষক কূল। ক্ষেতের ফসল দেখে এবছর আমতলীতে আউশের পর এবার আমনের বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষক ও কৃষি বিভাগ। ক্ষেত যেন এখন সোনালী ধানের সমারোহ। যেদিকে চোখ যায় শুধু মাঠের পর মাঠ আগাম সোনালী আমন ধানে পরিপূর্ন। মৌসুমের শুরুতে বৈরী আবহাওয়া থাকলেও এবছর আমনের ফলন ভাল হওয়ার সম্বাবনায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। স্বপ্নের সোনালী ধান কাটা শুরু হয়েছে দামও ভাল বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

আমতলী উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় এ বছর আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার হেক্টর জমি। ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় চাষ হয়েছে ২৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষ হয়েছে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে। দেশীয় আমন ধানের চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে। ধানের উৎপাদন লক্ষামাত্রা ধরা হয়েছে ৯২ হাজার টন। লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে প্রায় ৯৮ হাজার ৯শ’ টন ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। কৃষকরা প্রতি বছর আষার মাসের শেষের দিক থেকে শুরু করে ভাদ্র মাসের শেষ সময় পর্যন্ত আমন ধান রোপন করে। এ বছর আমতলীতে কৃষকরা উচ্চফলন শীল আমনে ব্রি-ধান ৩৩, ৩৪, ৩৯, ৪০, ৪১, ৫১ ও ৫২ এবং বিআর -১১,২৩ ধান বেশী চাষ করেছে। এ ছাড়া দেশীয় আমনের মধ্যে রয়েছে সাদা মোটা, কালো মোটা, কালিজিরা, কুটি আগনী ও হাইল গিরমি। মৌসুমের শুরুতে বৈরী আবহাওয়া থাকলেও আমনের ক্ষেতের তেমন ক্ষতি হয়নি। ফলে আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষকরা হেক্টর প্রতি উচ্চ ফলনশীল আমনে সাড়ে চার থেকে পাঁচ টন ধান পাবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকে ধান কাটা শুরু করে পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ধান কাটবে কৃষকরা। এ বছর লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশী ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ফলন হয়েছে আমতলী সদর ইউনিয়নের ছুরিকাটা, টিয়াখালী, নাচনাপাড়া, মহিষডাঙ্গা গ্রামে। হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া, গুরুদয়াল, উত্তর তক্তাবুনিয়া, চিলা, টেপুরা গ্রামে। চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা, চন্দ্রা, ঘটখালী, কাউনিয়া গ্রামে। আড়পাঙ্গামিয়া ইউনিয়নের তারিকাটা, ঘোপখালী, ভায়লাবুনিয়া গ্রামে। গুলিশাখালী ইউনিয়নের হরিদ্রাবাড়িয়া, গুলিশাখালী, ডালাচারা, গোছখালী গ্রামে। আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের সোনাখালী, গাজীপুর গ্রামে। কুকুয়া ইউনিয়নের কুকুয়া কালিপুরা, হরিমৃত্যুঞ্জয়, চরখালী, ও আমড়াগাছিয়া গ্রামে।

ছুরিকাটা গ্রামের কৃষক মন্নান মুন্সি জানান, এবছর আমন চাষ করে অনেক ধান পাওয়ার আশা করছি। বাজারে ধানের দামও ভাল।

হলদিয়া গ্রামের শানু মোল্লা জানান, আমন চাষের সময় লাগাতার বৃষ্টি ছিল। কিন্তু তাতে ফসলের কোন ক্ষতি হয়নি। এখনো ধান কাটা শুরু করিনি। আশা করি গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি ফলন পাব। শুনেছি বাজারে ধানের দামও ভাল তাই লোকশানের কোন আশঙ্কা নেই। চন্দ্রা গ্রামের কামাল হোসেন বলেন, আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ৫ বিঘা জমিতে জমিতে আমন চাষ করেছি। আশা করি ৬০-৬৫ মণ ধান পাবো। এ বছর ফলন ভালো ও ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষকদের লোকসান গুণতে হবে না।

আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম বদরুল আলম জানান, আমন মৌসুম শুরুর সাথে সাথে বৈরী আবহাওয়ার পরও এবছর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। বাম্পার ফসল হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি। বাজারে উপশী আমন ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষকরা লাভবান হবে বেশি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist