আরিফুল রিগান, কুড়িগ্রাম

  ২৫ জুলাই, ২০১৭

রেলের জমি দখল করে প্রভাবশালীদের মাছের খামার, বালু উত্তোলন

ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে রেলপথ

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বাংলাদেশ রেলওয়ের ৫ একর জমি জবর-দখল করে মাছের খামার তৈরি করে সেখান থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করায় ঝুকিপুর্ণ হয়ে পড়েছে রেল পথ। রেল পথের পাইলিং ভেঙ্গে ঝুঁকিপুর্র্ণ হওয়ায় ট্রেন চলাচল হুমকির মুখে পড়েছে। অভিযোগ আছে, উলিপুর পৌরসভার জোনাইডাঙ্গাঁ গ্রামের মৃত: জহির উদ্দিনের পুত্র ফজলুল হক দীর্ঘদিন ধরেই এই জমি জবর দখল করে আছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উলিপুর পৌরসভার ফজলুল হক এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ঐ এলাকায় প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। সেই সুবাদে দীর্ঘদিন ধরে জোনাইডাঙ্গা এলাকায় রেলওয়ের প্রায় ৫ একর জমি জবর দখলে নিয়ে মৎস্য খামার, চাষাবাদসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে। দখলকৃত জমিতে মৎস্য খামার তৈরি করে সেখান থেকে দেধারচ্ছে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। এদিকে অভিযুক্ত ফজলুল হকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ রেলওয়ের জমি অবৈধভাবে জবর-দখল করার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, ফজলুর মৎস্য খামার বলে পরিচিত জলাশয় থেকে বিপুল পরিমান বালু উত্তোলন করে প্রায় ১০ লাখ টাকা বিক্রয় করেছে। এতে করে পার্শ্ববর্র্তী ফসলি জমি, রেলপথসহ পরিবেশ মারাত্মক হুমকির সম্মূখীন হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় জোন লালমনিরহাটের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজসে রেলের জমি জবর-দখল, বালু উত্তোলন করে মৎস্য খামার প্রকল্প তৈরীকরণসহ বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। এছাড়াও একইভাবে ইতোপূর্বে উলিপুর আনন্দ বাজার থেকে চিলমারী উপজেলার রমনা রেল স্টেশন পর্যন্ত রেলপথের দুই ধারে শত শত একর জমি লিজ দেয়ার কথা বলে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট জোনের কর্মকর্তা-কর্মচারী চক্রটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। জমি লিজ দেয়ার খপ্পরে পড়ে শত শত সাধারণ মানুষ সর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছে। অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজসে অবৈধ দখলদাররা রেলওয়ের দুইধারের কিছু কিছু জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছে। ফলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসূমে রেল পথের দু’ধার ভেঙ্গে যাচ্ছে। যার কারণে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের রেল দূর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

উলিপুর উপজেলা রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটির সভাপতি আপন আলমগীর জানান, আনন্দ বাজার থেকে রমনা রেলস্টেশন পর্যন্ত রেলওয়ের দুইধারে যে জল মহল গুলো আছে তা পুরোটাই রেলের জায়গা। বর্তমান রেল লাইনের দুইধারে ২৫ ফুট থেকে ৬০ ফুট পর্যন্ত জমি রয়েছে। সে গুলো রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে লিজ নেয়ার নামে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল দখল করে নিয়েছে। জল মহল ও পুকুর গুলো থেকে বালু উত্তোলনের কারণে রেলের পাইলিংগুলো ভেঙ্গে পড়েছে। বারবার পাইলিং দেয়ার নামে রেলওয়ের কোটি কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে। তিনি এই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও রেলওয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। এব্যাপারে রেলওয়ের জমি দখলকারী ফজলুল হক জানান, আমি রেলওয়ের পড়ে থাকা জমিতে মাছ চাষ করছি ঠিক আছে। কিন্তু আমি আমার নিজের জমি থেকে বালু উত্তোলন করছি রেলওয়ের জমি থেকে নয়।

এ ব্যাপারে রেলওয়ের বিভাগীয় জোন লালমনিরহাটের ব্যবস্থাপক নাজমুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রামের উলিপুর-চিলমারী রেলপথের দুইধারে কিছু লোক জমি দখল করে বালু উত্তোলন ও মাছ চাষ করার বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অবৈধ দখলদার ও বালু উত্তোলনকারী ভূমিদস্যু ফজলুল হকের বিরুদ্ধে উলিপুর থানায় মামলা দায়ের করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ জানান, ফজলুল হকের বিরুদ্ধে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা রেজাউনুল হকের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হয়েছে। মামলা করার ব্যাপারে সিন্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist