আলিফ হোসেন, তানোর (রাজশাহী)

  ২০ মে, ২০১৮

তানোরে সরকারি পুকুর-জলাশয় প্রভাবশালীদের দখলে

বছর বছর রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

রাজশাহীর তানোরের সাতটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় অবস্থিত সিংহভাগ খাস পুকুর ও জলাশয় রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে থাকায় এগুলো সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসছে না। দখলকারীরা বলছেন, এসব পুকুর জলাশয় মসজিদ-মাদরাসা ভোগ করছে।

এসব পুকুর-জলাশয় দখলমুক্ত করে সমাজের হতদরিদ্র ভূমিহীন ও প্রকৃত মৎস্যজীবীদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত অথবা বৈধভাবে লিজ দেওয়া হলে সরকারের প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব অর্জন করতে হবে। অন্যদিকে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের পথ তৈরি ও উপজেলার আমিষের চাহিদা পূরণ করেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাছ সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে।

তানোর উপজেলা পরিষদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ২০০৯ সালের দিকে সরকারের নীতিমালা মোতাবেক উপজেলার খাস পুকুর-জলাশয়গুলো তিন বছর আগে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের মধ্যে ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু বাধাইড় ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান (তৎকালীন) আবুল কালাম আজাদ ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারের খাস পুকুর ও জলাশয় ইজারা প্রক্রিয়া বাতিলের জন্য উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন। রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উচ্চ আদালত পুকুর-জলাশয়গুলোর ইজারা কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। এরপর থেকে সরকারি এই পুকুর-জলাশয়গুলোর ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া থেকে থমকে যায়।

উপজেলা পরিষদ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তানোরে প্রায় সাড়ে ৯০০ সরকারি খাস পুকুর-জলাশয় ও প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ১৫টি খাড়ি রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) এই পুকুর-জলাশয়গুলো তিন বছর মেয়াদে রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রভাবশালীদের কাছে লিজ (ইজারা) দেয়। অথচ নিয়ম হলো জনস্বার্থে ব্যবহৃত পুকুর-জলাশয় বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে লিজ (ইজারা) দেওয়া যাবে না। কিন্তু বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানরা পুকুর-জলাশয়গুলো রক্ষণাবেক্ষণের নামে নিজেদের অনুসারীদের কাছে সাত টাকা শতক হারে ইজারা দিয়ে পরে আবার তারা নিজেরাই সেই পুকুর-জলাশয়গুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এখনো ভোগদখল করায় এগুলো এলাকার সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসছে না। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা তাদের অনুগত ও আত্মীয়-স্বজনের নামে সাত টাকা শতক হারে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তিন বছরের জন্য ইজারা দিয়ে পুকুর-জলাশয়গুলো নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে ভোগদখল করে আসছে। উপজেলার বাধাইড় ইউপির হাঁপানিয়া এলাকার প্রভাবশালী আলাউদ্দীন আলী প্রায় কোটি টাকা মূল্যের সাতটি সরকারি খাস পুকুর অবৈধভাবে দখলে নিয়ে মাছ চাষ করছেন। এ ছাড়া (সাবেক) ইউপি সদস্য মোসলেম আলী নিজে পাঁচটি পুকুর অবৈধভাবে দখলের পাশাপাশি বহিরাগতদের কাছে ইজারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব পুকুর-জলাশয় উদ্ধার ও প্রকৃত ভূমিহীন মৎস্যজীবীদের মধ্যে বৈধভাবে ইজারা দেওয়ার দাবি করেছে এলাকাবাসী। এতে একদিকে যেমন সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে, অন্যদিকে বেকার ও হতদরিদ্র ভূমিহীনদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

খাসপুকুর নিজেদের দখলে থাকার বিষয়টি স্বীকার করে আলাউদ্দীন আলী ও ইউপি সদস্য মোসলেম আলী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘পুকুরগুলো আমরা লিজ নিয়ে মসজিদ-মাদরাসাকে দিয়েছি। তারা সেগুলো দেখে।’ তবে মসজিদ-মাদরাসাকে দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘ইউএনওর কাছ থেকে এসব তথ্য নেন। আমরা দিতে পারব না।’

এ ব্যাপারে তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহা. শওকাত আলীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোনে কল গ্রহণ না করায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist