প্রিন্স রাসেল, দুবাই থেকে

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আফগান স্পিনে ভীতি নয়

এশিয়া কাপের শেষ দুই আসরের মঞ্চায়ন হয়েছিল দেশের মাটিতে। দুইবারই তীরে

এসে তরি ডুবিয়েছিল টাইগারদের। সেই দুঃস্মৃতিটা চাপা দেওয়ার শুরুর মিশনটা

দুর্দান্ত হয়েছে মাশরাফি অ্যান্ড কোংয়ের। মরুর দেশে আয়োজিত এশিয়া কাপ টুর্নামেন্টে

১৩৭ রানের বিশাল জয় দিয়ে স্বপ্নযাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ।

উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এমন জয়োচ্ছ্বাসটা দলকে চেপে রাখতে হয়েছে তামিম ইকবালকে হারানোর শোকে। আনন্দের ছিটেফোটা নেই খেলোয়াড়দের মধ্যে। কাল টিম হোটেলে মলিন মুখে সাকিব আল হাসানের দেখা মিলল। হোটেলের লবিতে ট্যাক্সির জন্য সপরিবারে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। সাদা রঙের গাড়িটা আসামাত্রই স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশির ও মেয়ে আলাইনা হাসান অব্রিকে নিয়ে দ্রুত হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লেন সাকিব।

মাঝের এই সময়টাতে সাকিব কন্যার কান্না আর চেচামেচিতে কান পাতাই দায় হয়ে উঠেছিল। অব্রিকে থামানোর চেষ্টা করছেন না সাকিব কিংবা শিশিরের একজনও। সাধারণত সপরিবারে এমন আবহে দেখা যায় না বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডারকে। মানসিকভাবেও কিছুটা বিপর্যস্ত দেখা গেল সাকিবকে। তামিম ইকবাল এবং মিঠুন দাশের অবস্থাও একই। কোনো টুর্নামেন্টে দারুণ একটা শুরুর পর এমন বাংলাদেশ দলের এমন আবহ দেখা গেল এবারই প্রথম।

উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশাল ব্যবধানে জয়। দলের আত্মবিশ্বাস যে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে সেটা অনুমেয়। এই আত্মবিশ্বাসটাই বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে টুর্নামেন্টে নিজেদের পরের ম্যাচে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ। জিতলেই ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সুপার ফোরে চলে যাবে টাইগাররা।

কাল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে আসা মোহাম্মদ মিঠুন সেই আশাতেই বুঁদ হয়ে আছেন। বলেছেন, ‘আমরা শেষ (শ্রীলঙ্কা) ম্যাচটা খুব ভালোভাবে জিতেছি। শুরুটা ভালো না হলেও শেষটা ভালো হয়েছে। মুশফিক ভাইয়ের ইনিংস, তামিম ভাইয়ের আত্মত্যাগ- সবাই অবদান রেখেছেন জয়ে। এটা পরের ম্যাচে আমাদের আত্মবিশ্বাস দিতে পারবে। এই ম্যাচে ভালো করতে হলে আবার নতুন করে তৈরি হতে হবে। নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে এবং তা কাজে লাগাতে হবে।’

এখন প্রশ্ন হলো বাংলাদেশ পরিকল্পনা মাফিক খেলতে পারবে তো? আফগানিস্তানের সামনে এলেই যে প্রায়ই খেই হারিয়ে ফেলে টাইগাররা। এই তো কয়েক মাস আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজে আফগানদের কাছে ধবলধোলাই হতে হয়েছে দলকে। ওয়ানডে ফরম্যাটে সবশেষ যে এশিয়া কাপ হয়েছিল সেখানেও বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছিল তারা। মূলত আফগান স্পিনের কাছেই বারবার ধরাশায়ী হয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।

এবারও এই দলটা বড্ড ভাবনায় ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশকে। মাশরাফি বাহিনীকে ভাবিয়ে তুলেছে আফগানদের স্পিন বিষ। যেখানে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম রশিদ খান। আফগানদের আরো একজন ঘূর্ণি-জাদুকর আছেন তিনি মুজিব-উর-রহমান। এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনারদের মধ্যে তারা অন্যতম। রশিদ-মুজিব জুটি সামাল দেওয়ার বিশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। আলাদা পরিকল্পনাও আঁটা হচ্ছে তাদের জন্য।

তবে আফগান স্পিনে ভীত নয় বাংলাদেশ। কাল সংবাদ সম্মেলনে মিঠুন বলেছেন, ‘ভয় জিনিসটা সবচেয়ে বড় শত্রু। ভয়টা কাটাতে হবে। হ্যাঁ, এটা ঠিক তাদের দুই-তিনটা বিশ্বমানের স্পিনার আছে। কিন্তু তারা না খেলার মতো নয়। তাদের মোকাবিলা করা যায়। কীভাবে তাদের মোকাবিলা করতে পারি সেটা নিয়েই আমাদের ম্যাচের পরিকল্পনা হবে।’

এই মুহূর্তে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের চেয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে ওপরের দিকে আছে আফগানিস্তান। তবে ফরম্যাটটা ওয়ানডে বলেই পরশুর ম্যাচে নিজেদের এগিয়ে রাখলেন টাইগার ব্যাটসম্যান মিঠুন, ‘আমরা ওয়ানডেতে এগিয়ে আছি। মনে হয় না চিন্তার কারণ আছে। আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারলেই জিতব। আর খারাপ খেললে যেকোনো দলের কাছেই হারতে পারি।’

বাংলাদেশ জিতলেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। গ্রুপ শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ হলে বাড়তি একটা চাপও সামলাতে হবে টাইগারদের। আফগানিস্তান ম্যাচসহ চার দিনের মধ্যে খেলতে হবে তিন ম্যাচ। সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রচন্ড দাবদাহ। সবমিলিয়ে বাংলাদেশকে যে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে সেটা মানছেন মিঠুন, ‘আমরা পেশাদার। মানিয়ে নিতে হবে। নিজের প্রস্তুতি নিজের কাছে। এই গরমে খেলতে এবং প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ভাবতে হবে। অবশ্যই, এটা অনেক কঠিন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close