আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৪ নভেম্বর, ২০১৯

কাশ্মীর ইস্যুতে ইমরানকে হুররিয়াত নেতার চিঠি

ভারত অধিকৃত কাশ্মীর ইস্যুটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কাশ্মীরের হুররিয়াত কনফারেন্স নেতা সাইয়্যেদ আলী শাহ গিলানি। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, এটি হয়তো ইমরান খানের সঙ্গে তার শেষ যোগাযোগ। বয়স হয়তো তাকে আর যোগাযোগের সুযোগ দেবে না।

সাইয়্যেদ আলী শাহ গিলানির এই চিঠির একটি কপি হাতে পেয়েছে পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। চিঠিতে ইমরান খানকে উদ্দেশ করে গিলানি বলেছেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ব্যাপারে ভারত সরকারের অবৈধ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবং জম্মু-কাশ্মীরের নির্যাতিত নিপীড়িত জনগণের পক্ষে আপনি যেভাবে কথা বলেছেন, তা প্রশংসার দাবিদার। ১৯৪৭ সাল থেকেই ভারতীয় দখলদারিত্ব ও অন্যায় আচরণ হতে মুক্তি লাভের জন্য জনগণ বিভিন্ন পর্যায়ে সংগ্রাম করে এসেছেন। সেই থেকে কাশ্মীরের নারী, পুরুষ এবং শিশুরা সংগ্রামকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮, ২০০৮, ২০১০ ও ২০১৬ সাল মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। দিন দিন স্বাধীনতার এ সংগ্রাম জোরদার হয়েছে; যা ভারত নস্যাৎ করতে ব্যর্থ। ভারতের অবৈধ ইচ্ছা কাশ্মীরের জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে গিয়ে তারা ব্যাপকভাবে এ অঞ্চলে কারফিউ জারি করেছে। এজন্য তারা টেলিফোন এবং ইন্টারনেটসহ সব ধরনের যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে। হাজার হাজার শিশু, বৃদ্ধ, কিশোর, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, ছাত্র, ডাক্তার, হুররিয়াতের নেতা ও তাদের আত্মীয়স্বজনকে আটক করা হয়েছে এবং ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। শত শত তরুণের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে।

সাইয়্যেদ আলী শাহ গিলানি বলেন, ভারতীয় সেনারা পিলেট গান ব্যবহার করছে এবং কাশ্মীরি তরুণদের অন্ধ করে দিচ্ছে। রাষ্ট্রীয় নীতির আওতায় কাশ্মীরের জনগণের ওপর নিগ্রহ করা হচ্ছে, যৌন হয়রানি, এমনকি পুরুষদের ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ভারতের দখলদার বাহিনী বাড়ি বাড়ি ঢুকে বাকবিত-া করছে এবং নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালাচ্ছে। মা-বাবার কাছে তাদের তরুণী মেয়েদের বয়স জানতে চাওয়া হচ্ছে। দখলদার বাহিনী জনগণের কাছে বলছে যে, তাদের আসল লক্ষ্য হচ্ছে কাশ্মীরের মুসলিম নারীদের অসম্মান করা। বহু মানুষকে হুমকি দেওয়া হয়েছে যে, তাদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হবে। বহু মানুষের ঘরবাড়ি কেড়ে নেওয়ার জন্য তাদের নোটিস দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, লাদাখের মুসলমানরাও বর্বর ভারতীয় বাহিনীর করুণার ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ ওই অঞ্চলের জনগণও ভারতের অবৈধ কর্মকা-ের বিরোধিতা করছেন।

গিলানি বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের যে প্রস্তাবে কাশ্মীরের জনগণকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দেওয়া হয়েছে ৫ আগস্টের সিদ্ধান্ত তার বিরোধী। যেভাবে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সেনারা ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে তাদের ভূমি জবর খল করে নিচ্ছে এবং অবৈধ বসতি গড়ে তুলছে, ঠিক একইভাবে ভারতের সেনারাও একই কাজ করছে। উন্নয়নের নামে কাশ্মীরের জমি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। এসব করা হচ্ছে কাশ্মীরের জনগণকে তাদের ভূমিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে পরিণত করার জন্য। উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের নামে আমাদের সম্পদকে প্রতারণার মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। দখলদারিত্বের মাধ্যমে কাশ্মীরি জনগণকে সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করার চক্রান্ত করা হচ্ছে।

ইমরান খানকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন সাইয়্যেদ আলী শাহ গিলানি। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের জনগণ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। সূত্র : পার্স টুডে, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close