আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

তালিকার বাইরে থাকা মানুষের দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে : মমতা

ভারতের আসাম রাজ্যের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি) নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত শনিবার প্রকাশিত ওই তালিকা অনুযায়ী, ১৯ লাখেরও বেশি স্থানীয় লোকজন রাষ্ট্রহীন মানুষে পরিণত হয়েছেন। মমতার দল তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, তালিকার বাইরে থাকা মানুষদের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারকেই নিতে হবে।

টুইটারে দেওয়া পোস্টে আসামের নাগরিক তালিকাকে অভিসন্ধিমূলক ‘ব্যর্থ নাটকীয়তা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মমতা। তার দল তৃণমূলের দাবি, নাগরিক তালিকার নাম করে বাংলাভাষীদের আসাম থেকে তাড়িয়ে দিতেই এ উদ্যোগ নিয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি।

টুইটে মমতা বলেন, নাগরিক তালিকা নিয়ে যারা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছিল, তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে এনআরসি। দেশকে জবাব দিতে হবে তাদের। দেশ ও সমাজের স্বার্থ পরিহার করে অসৎ উদ্দেশ্যে কাজ করলে এমনটাই ঘটে।

মমতা বলেন, বাংলাভাষী ভাইবোনদের জন্য খারাপ লাগছে। জাঁতাকলে পড়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে তাদের। তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিমের অভিযোগ, আসাম থেকে বাঙালিদের তাড়াতে এনআরসিকে হাতিয়ার করা হয়েছে। তার প্রশ্ন, ‘সরকার কী করে এতটা হীনমন্য হতে পারে যে, একটা সকালে তারা নাগরিকত্ব তালিকা প্রকাশ করল এবং আসামের কয়েক দশকের বাসিন্দারা ঘরছাড়া হলেন?’

এদিকে আসামের পর এবার পশ্চিমবঙ্গেও ‘বাংলাদেশি মুসলমানদের’ তাড়াতে নাগরিক তালিকা তৈরির হুশিয়ারি দিয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। গত শনিবার প্রকাশিত আসামের নাগরিক তালিকা অনুযায়ী, ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন দেশহীন মানুষে পরিণত হওয়ার দিনেই এমন হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তার ভাষায়, ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থে ‘বাংলাদেশি মুসলমানদের’ তাড়াতে পশ্চিমবঙ্গেও নাগরিক করা হবে। তবে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের মাধ্যমে হিন্দু শরণার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় সচেষ্ট থাকবে বিজেপি।

দিলিপের দাবি, ভোটব্যাংক ধরে রাখতে সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বাংলাদেশি মুসলমানদের অনুপ্রবেশে সহায়তা করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দিলিপ ঘোষ বলেন, ‘আমাদের দাবি, আসামের মতো পশ্চিমবঙ্গেও নাগরিক তালিকা চালু করা হোক। তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার যদি এ কাজ করতে ইচ্ছুক না হয়, আমরা এটা কার্যকর করব। ২০২১ সালে ক্ষমতায় এলে রাজ্য থেকে বাংলাদেশি মুসলিমদের তাড়িয়ে দেব।’

দিলিপ ঘোষ বলেন, ধর্মীয় নির্যাতন বা অন্যান্য কারণে বাংলাদেশ বা অন্য দেশ থেকে যেসব হিন্দু শরণার্থীদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে, নাগরিকত্ব বিলের মাধ্যমে তাদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এই বিজেপি নেতার ভাষায়, ‘হিন্দু শরণার্থীদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বিজেপি তাদের সঙ্গে রয়েছে এবং তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক উত্থান ঘটেছে বিজেপির। রাজ্যে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল যেখানে ২২টি আসনে বিজয়ী হয়েছে; সেখানে ১৮ আসনে বিজয়ী হয়েছে বিজেপি। এর ধারাবাহিকতায় আগামীবার পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখছে নরেন্দ্র মোদির দল।

উল্লেখ্য, আসামের নাগরিক তালিকা এরই মধ্যে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক ছড়িয়েছে। সেখানে নাগরিকত্ব হারিয়ে রাষ্ট্রহীন মানুষে পরিণত হওয়ার ব্যক্তিদের মধ্যে দেশটির বিরোধী দলীয় আইনপ্রণেতা থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাও রয়েছেন। তালিকা প্রকাশের আগেই দেশহীন মানুষে পরিণত হওয়ার আশঙ্কায় আত্মহননের মতো ঘটনাও ঘটেছে। সূত্র: এনডিটিভি, টুইটার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close