আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৭ আগস্ট, ২০১৯

ভারতের ভাঙন শুরু : পি চিদম্বরম ‘বিশ্বাস ঘাতকতা’: ওমর-মেহবুবা

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার তুলে নেওয়ার পরই শুরু হয়েছে তীব্র বিরোধিতা। ‘এখন থেকে শুরু হয়ে গেল ভারতের ভাঙন’ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা থেকে বেরিয়ে এমনই মন্তব্য করেছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম।

আর জম্মু-কাশ্মীরের দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাহ গণমাধ্যমের সামনে আসতে না পারলেও টুইটারে দুজনই কড়া মন্তব্যে বলেছেন, ভারতের ওপর কাশ্মীর রাজ্যের মানুষের বিশ্বাস আজ ভেঙে দেওয়া হলো।

ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের কথা গত সোমবার অমিত শাহ রাজ্যসভায় ঘোষণা করা মাত্রই তুমুল হট্টগোল শুরু করে বিরোধীদলগুলোর সংসদ সদস্যরা। জম্মু-কাশ্মীরের দল পিডিপির দুই সংসদ সদস্য সংবিধানের প্রতিলিপি সংসদের মধ্যেই ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করেন। এ হট্টগোলের মধ্যেই অমিত শাহ কাশ্মীর সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র এবং বিল পড়ে শোনান। চেয়ারম্যানের বিশেষাধিকার বলে অমিত শাহ তার কাজ সারতে পারলেও রাজ্যসভার উত্তাপ কমেনি। কেন্দ্রীয় সরকার তথা ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) তীব্র আক্রমণ শুরু করে বিভিন্ন বিরোধীদল। সংসদের ভেতরে-বাইরে শুরু হয় ক্ষোভ উগরে দেওয়া।

নরেন্দ্র মোদির সরকারকে ও তার নীতিকে সবচেয়ে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে পি চিদম্বরম বলেন, ‘সাংবিধানিক ইতিহাসে আজ কালো দিন। সরকার যা করেছে, তা অভাবনীয়।’ দেশকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘এটি যদি জম্মু-কাশ্মীরের সঙ্গে করা যায়, তাহলে দেশের অন্য রাজ্যগুলোর প্রত্যেকটার সঙ্গেই করা যেতে পারে।’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে চিদম্বরম বলেন, ‘প্রথমে রাজ্যের নির্বাচিত সরকার ফেলে দেওয়া হবে, রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হবে, বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হবে, বিধানসভার ক্ষমতা সংসদের হাতে যাবে, সরকার সংসদে একটি প্রস্তাব আনবে, সেটিতে সংসদ অনুমোদন দেবে এবং রাজ্যটি আর থাকবে না। প্রত্যেকটি রাজ্যকে এভাবে ভেঙে দিয়ে দুটি অথবা তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা যাবে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার এ পথেই এগোতে থাকলে এখন থেকেই ভারতের ভাঙন শুরু হয়ে গেল।’ সরকারের পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যসভায় বর্তমানে কংগ্রেসের দলনেতা গুলাম নবি আজাদ এবং রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনও।

গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘সংবিধানকে হত্যা করা হলো। ভারতের মানচিত্র থেকে একটা রাজ্য আজ মুছে গেল।’ আজাদ যখন রাজ্যসভায় সরকারকে এমন আক্রমণ করে কথা বলছেন, তখন কাশ্মীরের বাকি দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী গৃহবন্দি। বাড়িতে বসেই রাজ্যকে ভাগ করার খবর পান মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাহ।

তাই দুজনেই সোশ্যাল মিডিয়ার আশ্রয় নিয়ে মোদি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছেন। এক টুইটে মেহবুবা লেখেন, ‘আজ ভারতীয় গণতন্ত্রের কালো দিন। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্ব প্রত্যাখ্যান এবং ভারতের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত উল্টো ফল দিল। ৩৭০ ধারা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে ভারত সরকার নিয়েছে, তা বেআইনি ও অসাংবিধানিক। এ সিদ্ধান্ত ভারতকে জম্মু-কাশ্মীরে দখলদার শক্তিতে পরিণত করবে।’

ওদিকে ওমর আবদুল্লাহও টুইটারে অনেকটা একই মন্তব্যে লিখেছেন, ‘১৯৪৭ সালে যখন জম্মু-কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে জুড়েছিল, তখন রাজ্যের মানুষ ভারতের ওপর যে বিশ্বাস রেখেছিল, তা আজ সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দেওয়া হলো।’ ভারত সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফল বিপজ্জনক হবে বলেও তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close