আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৫ অক্টোবর, ২০১৮

সৌদি সম্মেলন ‘বয়কট করতে পারে’ যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য

সাংবাদিক জামাল খাশোগির নিখোঁজের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরব আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বয়কট করতে পারে বলে ধারণা পেয়েছে বিবিসি। নিজের বিয়ের কাগজপত্র জোগাড়ে গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন সৌদি সরকারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত খাশোগি, এরপর থেকেই তার আর কোনো খোঁজ নেই।

সাংবাদিক খাশোগিকে সৌদি গুপ্তচররা কনস্যুলেট ভবনের ভেতরেই হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলেছে বলে ধারণা তুরস্কের কর্তৃপক্ষের, রিয়াদ এ অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ ঘটনায় মিত্র সৌদি আরবের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। খাশোগির ‘নিখোঁজে’ সৌদি আরব দায়ী হলে তাদের ‘শাস্তি’ দিতে পারেন বলে জানিয়েছেন তিনি। খাশোগির ভাগ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন অসংখ্য গণমাধ্যম ও স্পন্সর প্রতিষ্ঠানও রিয়াদে চলতি মাসে হতে যাওয়া বিনিয়োগ সম্মেলন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ‘মরুভূমির দাভোস’ খ্যাত এ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মনুচিন ও যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী লিয়াম ফক্স নাও অংশ নিতে পারেন বলে বিবিসিকে বেশ কয়েকটি কূটনীতিক সূত্র জানিয়েছে।

সম্মেলনকে ঘিরে ফক্সের সূচিই এখন পর্যন্ত ঠিক হয়নি বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের এক মুখপাত্র।

খাশোগি সৌদি গুপ্তচরদের হাতেই মারা পড়েছেন, এমনটা নিশ্চিত হলে সৌদি আরবকে দায়ী করে একটি যৌথ বিবৃতি দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান কূটনীতিকদের মধ্যে আলোচনাও চলছে।

সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান তার সংস্কার কার্যক্রমকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরতেই এবারের এ সম্মেলন আয়োজন করছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

মনুচিন ও ফক্স, এদের কেউই সেখানে উপস্থিত না হলে তা সৌদি আরবের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হয়ে দেখা দেবে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের। নিখোঁজ সাংবাদিকের ভাগ্য নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতারেসও। খাশোগির কী হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়ার পর এ নিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোর ‘উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া’ দেখানো উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, খাশোগির মৃত্যুর জন্য যদি সৌদি আরব দায়ী হয় তবে তাদের ‘বড় ধরনের শাস্তি’ দেবে যুক্তরাষ্ট্র।

‘খুবই বিরক্ত ও রাগান্বিত হব, যদি এমনটাই (খাশোগি হত্যা) ঘটে’, তবে রিয়াদের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত রাখার সম্ভাবনাও নাকচ করেছেন এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ‘এমনটা করলে আমরা আসলে নিজেদেরই শাস্তি দেব। তারা যদি আমাদের কাছ থেকে (অস্ত্র) না কেনে, তাহলে তারা রাশিয়া কিংবা চীনের কাছ থেকে কিনবে,’ বলেন তিনি।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভুত কাভাসোগলু বলেছেন, নিখোঁজ সাংবাদিকের কী হয়েছে তা জানতে চলমান তদন্তে সৌদি আরব এখনো কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি।

তুরস্কের কর্মকর্তাদের কনস্যুলেটের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিতেও রিয়াদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এ সংক্রান্ত ‘সম্পূর্ণ সত্য’ উন্মোচিত হোক, সৌদি আরবও এমনটা চায় বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ বিন সৌদ বিন নায়েফ বিন আবদুল আজিজ।

তুরস্কের দাবি, সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর খাশোগিকে নির্যাতন এবং হত্যার প্রমাণ তাদের হাতে আছে। সৌদি গুপ্তচরদের ১৫ সদস্যের শক্তিশালী একটি দল খাশোগি হত্যায় জড়িত বলেও অভিযোগ তাদের।

কর্মকর্তারা বলছেন, তারা কনস্যুলেটের ভেতরকার কিছু অডিও পেয়েছেন। ওই অডিওতে খাশোগি এবং আরো কয়েক ব্যক্তিকে আরবিতে কথা বলতে শোনা যায়। ওয়াশিংটন পোস্টের এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে তুরস্কের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়, অডিওতে কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশের পর খাশোগিকে মারধর করতে শোনা যায় এবং পরে তাকে হত্যা করার বিষয়টিও বোঝা যায়।

তুরস্কের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে খাশোগির হাতে থাকা ‘স্মার্ট ওয়াচ’ এ রেকর্ড হওয়া শব্দ নিয়েও তুর্কি কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন বলে জানিয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close