ডা. মুনতাসীর মারুফ
নতুন মায়েদের মানসিক রোগ
পোস্ট-পারটাম সাইকোসিস প্রসবোত্তর জটিল একটি মানসিক সমস্যা। একে ‘পিউয়েরপেরাল সাইকোসিস’ও বলা হয়। প্রতি হাজার শিশু জন্মের মধ্যে এক বা দু’জন প্রসূতি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। রোগী ক্লান্তি, নিদ্রাহীনতা এবং অস্থিরতা বোধ করেন। কারো মাঝে আবার আবেগ নিয়ন্ত্রণে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। পরে অহেতুক সন্দেহ, ভ্রান্ত বিশ্বাস, অতিরিক্ত এবং আবোল-তাবোল কথা বলা, অসংলগ্ন-অস্বাভাবিক আচরণ, খাওয়া ও পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে উদাসীনতা, খিটখিটে মেজাজ, সন্তানের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত মনোযোগ অথবা অমনোযোগিতা ও অযতœ-অবহেলা প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়। রোগীর ভ্রান্ত বিশ্বাস অনেক সময় এমন পর্যায়ে চলে যায় যে তিনি মনে করেন, তার সন্তানটি অশুভ, একে হত্যা করা উচিত। অনেকে সন্তানের জন্মদানকেই অস্বীকার করেন; নিজেকে অবিবাহিত, নিগৃহীত বা নির্যাতিত বলে দাবি করেন। অনেকে গায়েবি আওয়াজ শুনতে পান। শুনতে পান কোনো কণ্ঠস্বর আদেশ দিচ্ছে তাকে অথবা তার সন্তানকে হত্যা করতে। কিছু ক্ষেত্রে রোগের মারাত্মক পর্যায়ে রোগী তার সন্তানের ক্ষতি করেন, এমনকি মেরেও ফেলেন।
সাধারণত প্রসবের দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এ রোগের উপসর্গ দেখা দিলেও কিছু ক্ষেত্রে উপসর্গ প্রসবের দু-একদিনের মধ্যেই দেখা দিতে পারে। প্রথম গর্ভধারণ এবং অবিবাহিত মায়েদের ক্ষেত্রে এ রোগের ঝুঁকি বেশি। এছাড়া যেসব প্রসূতির নিজেদের অথবা পরিবারের কারো জটিল মানসিক রোগের ইতিহাস আছে, তারাও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। একবার এ রোগে আক্রান্ত হলে পরবর্তী গর্ভধারণে আবারও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এ রোগের চিকিৎসায় ওষুধের পাশাপাশি রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি রাখার প্রয়োজন হতে পারে। যদি প্রসূতি চান, তবে সন্তানকে তার সঙ্গে রাখা উপকারী। মা ও শিশু উভয়কে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। বিশেষত মা-কর্তৃক যদি শিশুর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, রোগের তীব্র অবস্থা বা ‘একিউট সাইকোসিস’ সময়টুকু কেটে গেলে সাইকোথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। সাইকোথেরাপির মাধ্যমে সাধারণত প্রসূতিকে তার মাতৃত্বের ভূমিকায় সহজ হতে ও মানিয়ে নিতে সহায়তা করা হয়। এছাড়াও স্বামী এবং পরিবারের অন্যদের সহযোগিতাও এ সময় একান্ত প্রয়োজনীয়। পোস্ট-পারটাম সাইকোসিসে আক্রান্ত নারীর অধিকাংশই সঠিক চিকিৎসায় স্বাভাবিক, সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারেন।
সহকারী অধ্যাপক (সাইকিয়াট্রি)
ওএসডি, স্বাস্থ্য অধিদফতর, ঢাকা
"