ডা. মহসীন কবির সুস্থ থাকুন

  ২৫ আগস্ট, ২০১৯

চিন্তা যখন রোগ

মানুষ মানেই আবেগপ্রবণ। মানুষের চিন্তার জগতে কত ধরনের আবেগ মিশ্রিত থাকে, তা হয়তো মানুষই জানে না। ধরা যাক, একটি ছেলে ও একটি মেয়ের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক রয়েছে। কোনো কারণে হঠাৎই সে সম্পর্কটি আর টিকল না বা মেয়েটি কোনো কারণে প্রতারিত হলো। ফলে দেখা যায়, মেয়েটির মাথায় শুধু নিজেকে মেরে ফেলার চিন্তা আসতে থাকে। সে বারবার তার পরিচিত পরিজনদের মরে যাব বা যদি মরে যাইÑ এ জাতীয় কথা বলতে থাকে। যারা এমনটি করেন তারা একটি গুরুতর মানসিক রোগে ভুগছেন। এ রোগটির নাম মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার বা বিষণœতা। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার বা গুরুতর বিষণœতায় আক্রান্ত ১৫ শতাংশ মানুষই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বিষণœতা রোগে আক্রান্তরা দিনের পর দিন অধিকাংশ সময়ই মন খারাপ করে থাকেন, কোনো কাজে উৎসাহ-মনোযোগ পান না, ঘুম ও খাওয়ার রুচি কমে যায়। পরবর্তী সময়ে তা তীব্র আকার ধারণ করলে আক্রান্তরা নিজের জীবনকে নিরর্থক ও বোঝা মনে করতে থাকেন, সমাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখেন, প্রতিনিয়ত আত্মঘাতী চিন্তায় মন আচ্ছন্ন থাকে। এ সমস্যা গুরুতর হলে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে ও সাইকোথেরাপি দিতে হবে। আবার যারা এ সমস্যায় ভুগছেন তারা নিজেরাই নিজেদের মনকে একটু শক্ত করে এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে যা করতে হবেÑ

যদি নিজের মধ্যে উপরোল্লিখিত বিষণœতার লক্ষণ দেখেন, তাহলে আপনার সমস্যাটি নির্ভরযোগ্য বন্ধু বা স্বজনকে জানান। তার সঙ্গে মনের কথাগুলো শেয়ার করুন।

সারা দিন আপনি যে কাজগুলো করতে পছন্দ করেন, সে কাজগুলোর প্রতি মনোযোগ বাড়ান। প্রয়োজনে সারা দিনের কাজগুলোকে রুটিনমাফিক ভাগ করে নিন।

শরীরের সাধারণ যতœ নিন, নিয়মিত গোসল করুন, নখ কাটুন, দাঁতের যতœ নিন, পছন্দের পোশাক পরে হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন।

মনকে বিষণœ করে বা মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে এমন কথা বা কাজ এড়িয়ে চলতে হবে।

নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন ও প্রতিদিন সুষম, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুন।

ধূমপান ও মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে এবং রুটিনমাফিক শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাপন করতে হবে।

সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করুন। যে কোনো নেতিবাচক চিন্তা পরিহার করতে হবে।

নিজের ওপর ভরসা রাখুন। এ দুঃখকে জয় করতে আপনি সচেষ্ট হোন এবং জীবনের এ অধ্যায় থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীতে আপনি সামনের দিকে বলিষ্ঠভাবে এগিয়ে যাবেনÑ এ শপথ গ্রহণ করুন।

আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় এলে বারবার ভাবুন আপনার এ অপমৃত্যুতে বাবা, মা, ভাই, বোনই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনি অবশ্যই মা, বাবা কিংবা ভাইবোনকে অন্য কারো চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। তাই তাদের কথা একবার হলেও গভীরভাবে চিন্তা করুন। আপনার পরিচিতদের মধ্য থেকে যত দ্রুত সম্ভব এমন একজনকে খুঁজে বের করুন, যার কাছে আপনি আপনার সমস্যাগুলো শেয়ার করতে পারবেন। তার কাছে আপনার অনুভূতি ও সমস্যাগুলো শেয়ার করুন। প্রয়োজনে তার পরামর্শ নিন। ধৈর্য ধরুন। নিজেকে বোঝান ও যার কারণে আপনি এত কষ্ট পাচ্ছেন, তাকে ঘৃণা করার চেষ্টা করুন।

এ সমস্যা সমাধানে আপনি যদি নিজের মনকে শক্ত করে ঠিক হতে না পারেন, তবে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো ওষুধ গ্রহণ করুন ও সাইকোথেরাপি নিন। মনে রাখবেন, আপনার জীবনটা শুধুই আপনার নয়। আপনার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেকেই। তাদের কথা চিন্তা করে আপনাকে এ বিষণœতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং বেঁচে থাকতে হবে। জীবনে অনেক দুঃখ আসে আবার সেগুলোকে মোকাবিলা করে বেঁচে থাকতে হয়। এ বেঁচে থাকার মধ্যেই জীবনের আনন্দ। মৃত্যু কোনো সমস্যার সমাধান নয়, মৃত্যুকে জয় করে আমাদের বাঁচতে হবে নিজের জন্য, পরিবার-স্বজনের জন্য ও পরিশেষে সমাজ, দেশ ও পৃথিবীর জন্য।

লেখক :

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, লেখক ও গবেষক

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close