উত্তম কুমার মোহন্ত, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)

  ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৮

নির্বাচনী হাওয়া

প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন দাশিয়ারছড়াবাসী

দেশের মূল ভূখন্ডে যুক্ত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন বিলুপ্ত ছিটহলের অধিবাসীরা। ভারতের মানচিত্র থেকে এ দেশের মানচিত্রে স্থান করে নেওয়া তাদেরকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। এরই মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটধিকার প্রয়োগ করলেও এবারই প্রথম তারা সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। দেশ পরিচালনার প্রতিনিধি নির্বাচনে নাগরিক অধিকার প্রয়োগের এমন সুযোগে নতুন এই নাগরিকদের মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। পুরো দেশের মানুষের মতো তারাও ভোট উৎসবে মেতে উঠেছেন। এই নিয়ে চলছে নানা শলাপর্রামর্শ ও আলাপ-আলোচনা।

৯টি উপজেলা নিয়ে দশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সর্বশেষ জেলা কুড়িগ্রামে সংসদীয় আসন সংখ্যা ৪টি। এর মধ্যে সদর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ী উপজেলা নিয়ে কুডিগ্রাম-২ আসন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বিরোধীদলীয় (জাতীয় পার্টি) চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

এই আসনে যে প্রার্থী ছিটমহলের জীবন-মান উন্নয়নের অগ্রনী ভুমিকা রাখবেন তাকেই ভোট দিতে চান বিলুপ্ত ছিটের বাসিন্দারা। তারা নাগরিত্ব পাওয়ার পর থেকে বর্তমান সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। তাদের জীবনমান উন্নয়নে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, যোগাযোগ, কালভাট, ব্রীজ, বিদ্যুৎ, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মৎস্য, সমবায় ও একটি বাড়ী খামার, আত্মনির্ভরশীল করতে যুব প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ারছড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে চায়ের দোকানে ও বাজারের অড্ডায় আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চলছে নাগরিকদের মাঝে নানা ঝল্পনা-কল্পনা। চায়ের কাপের চুমুকের ফাঁকে ভোটাররে দৃষ্টি সংবাদ মাধ্যমের খবরে। কারও চোখ পত্রিকায় আবার কারও বা চোখ টেলিভিশনে প্রচারিত নির্বাচনী খবরে। আবার কেউ বা আলাপ-আলোচনায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, দাসিয়ারছড়াসহ উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ২৬ হাজার ৪১১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬২ হাজার ৩০১ জন ও মহিলা ভোটার ৬৪ হাজার ১১০ জন। এদের মধ্যে বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়ায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ১৭২ জন। বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়াবাসীরা পাঁচটি ভোট কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

ওই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মান্নান শেখ ও নজরুল ইসলাম জানান, জীবনে এই প্রথম বাংলাদেশী নাগরিক হয়ে সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবো। তাই খুবেই খুশি লাগছে। আমরা দীর্ঘ ৬৮ বছর থেকে পাশের লোকজনদের ভোট দিতে যাওয়া দেখেছি। কিন্তু আমরা ভোট দিতে পারিনি। এবার আমাদের আশা পূরণ হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের আলো দেখিয়েছেন এবং এই দাশিয়ারছড়ায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এখন আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্বাধীন ভাবে স্কুল-কলেজে পড়ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিরকাল বিলুপ্ত দাশিয়ারছড়া বাসিন্দাদের মা জননী হয়ে থাকবেন। এই মা জননী যেন আবারো দেশের প্রধানমন্ত্রী হয় সেই কামনাই করছি।

উল্লেখ্য, গত ২০১৫ সালের ১লা আগস্টে বাংলাদেশের মানচিত্রে ভারতীয় ১১১ ছিটমহল নতুন ভাবে যোগ হয়। ফলে ২০১৫ সালের ৬ থেকে ১৬ জুলাই দুইদেশের যৌথ গণনায় মোট জনসংখ্যা ৩৭ হাজার ৫৩৫ জনের মধ্যে বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ারছড়ায় ৬ হাজার ৮৮৯ জন লোকের বসবাস রয়েছে।

কুডিগ্রাম-২ আসনে বর্তমান এমপি তাজুল ইসলাম চৌধুরী উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। একসময় গোটা কুড়িগ্রাম জাতীয় পার্টির (এরশাদ) দখলে ছিল। সময়ের পরিক্রমায় এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। বলতে গেলে অনেকটা উল্টে গেছে! এ আসন এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাতে। সাংগঠনিক দিক বিবেচনায় আওয়ামী লীগের পরেই এখানে জাতীয় পার্টির অবস্থান। যদিও এ ব্যবধান অনেক বেশি। স্থানীয় রাজনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বাড়িও এ আসনে। তবে এখানকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই তার। এখানে বিএনপির অবস্থা এখানে একবারেই নাজুক। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলই তাদের সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সবার আগে উঠে আসে বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসক ও সাবেক এমপি মো. জাফর আলীর নাম। জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর আলী নেতাকর্মীদের কাছে দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ। রাজনীতির শুরুতে সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন থেকে বেশ কয়েকবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তবে গতবারের ধারাবাহিকতায় একবারও আসনটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টিকেই ছেড়ে তবে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তবে ইতোমধ্যে একাধিক মিছিল ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই আসনে দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়নের জন্য দাবি জানিয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close