আল-আমিন মিয়া, পলাশ (নরসিংদী)

  ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯

মুক্তিযোদ্ধা সুলতানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চান স্ত্রী-সন্তান

১৯৭১ সালের রণাঙ্গনে মো. সুলতান উদ্দিন অংশগ্রহণ করেছেন তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। তবে গত ৪৮ বছরেও মেলেনি তার সেই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। বেঁচে থাকা অবস্থায় পাননি কোনো মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। এমনকি মরার পরও মেলেনি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন। এখন তার স্ত্রী ও কন্যা সরকারের কাছে দাবি করেছেন সুলতানকে যেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

সুলতান উদ্দিন ১৯৭১ সালে নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিরাপত্তা কর্মীর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার ফুলদী গ্রামের মৃত রফিউদ্দিনের ছেলে। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে নিজ কর্মস্থল ছেড়ে ভারতে ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩ নম্বর সেক্টর থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি পুনরায় নিজ কর্মস্থলে যোগদান করেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শুধুমাত্র তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক মেজর জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানী স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেট ছাড়া আর কোনো সনদ তিনি সংগ্রহ করেননি। সরকারি গ্রেজেট হওয়ার পর থেকে তিনি নিজের স্বীকৃতি চেয়ে অনেক জায়গায় চেষ্টা চালিয়ে না পেরে এক পর্যায়ে রোগে-শোকে ২০০৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। স্বীকৃতি না পাওয়ায় তার মৃত্যুর পর মেলেনি রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাফন। সুলতান উদ্দিনের চার মেয়ে ও দুই ছেলে। সুলতান উদ্দিন মারা যাওয়ার পর তার স্বীকৃতি চেয়ে পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে ধরনা দিয়েও তালিকায় এই মুক্তিযোদ্ধার নাম তুলতে পারেনি।

৩ নম্বর সেক্টরে একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সহকর্মী মুক্তিযোদ্ধা হাসমত আলী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, সুলতান উদ্দিন ৩ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর শফিউল্লাহ ও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক মেজর জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানী স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেট পেলেও পরবর্তীতে আর কোনো সার্টিফিকেট উত্তোলন করেনি। তিনি আরো বলেন, একসঙ্গে যুদ্ধ করেছি, সব অপারেশনে গিয়েছি, আমি মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পাচ্ছি, অথচ সুলতান উদ্দিন পাননি। দুঃখজনক হলো, তিনি মৃত্যুর আগে নিজের নামটি সরকারি তালিকায় দেখে যেতে পারেননি।

সুলতান উদ্দিনের স্ত্রী সেলিনা বেগম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমার স্বামী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সে দেশের জন্য যুদ্ধ করে স্বীকৃতি চাননি, ভাতাও চাননি। কিন্তু জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে সরকারিভাবে নিজের নামটি দেখে যেতে চেয়েছিলেন। সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই তালিকায় আমার স্বামীর কাগজপত্র জমা দিলেও আজও তালিকায় নাম আসেনি। মুক্তিযোদ্ধের তালিকায় নাম না থাকায় মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার পরও আমার স্বামীকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়নি। সুলতান উদ্দিনের কন্যা রেখা বেগম সরকারের কাছে দাবি জানান, একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমরা চাই পিতার নামটি অন্তত সরকারি তালিকায় থাকুক। সরকার যেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার শেষ স্বপ্নটি পূরণ করে। আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই দাবি জানাই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close