নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭

আজ মহান বিজয় দিবস

বাঙালির বীরত্বের অবিস্মরণীয় দিন

আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। এ দিনটি বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন। বীরের জাতি হিসেবে বাঙালির আত্মপ্রকাশের দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখন্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এ বিজয়ের ৪৬ বছর পূর্তি আজ।

১৯৭১ সালের এই দিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃতে নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। আজ মুক্তির জয়গানে মুখর বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

আজ সরকারি ছুটির দিন। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উত্তোলন করা হয়েছে জাতীয় পতাকা। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হয়েছে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোতে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে, বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘যার যা কিছু আছে’ তা নিয়েই স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ মুক্তিযুদ্ধে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ভুটান, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সাহায্য-সহযোগিতা করে। অবশেষে বাঙালি দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বুকের উষ্ণ রক্তে রাঙিয়ে রাত্রির বৃন্ত থেকে ছিনিয়ে আনে ফুটন্ত সকাল।

সেই সকাল আজ। প্রতি দিনকার মতো আজও সূর্য উঠেছে। দরজায় কড়া নেড়েছে সোনালি রোদ। খেলার মাঠ, ঘন কুয়াশা, পৌষের শীতÑসবই আছে ঠিকঠাক। কেবল বদলে যাবে দিনটা। আর সব দিনের চেয়ে আজ আরো বেশি আলো ছড়াচ্ছে আকাশ। আরো বেশি শব্দ তুলে ডানা ঝাঁপটাচ্ছে পাখি। আলোয় আলোয় নাচছে উঠোন। সমবেত সুর, কণ্ঠ ও মুঠোবদ্ধ হাত তুলে আকাশে- মানুষ ডাক তুললে গলার সবচেয়ে উঁচু পর্দা থেকে ‘জয় বাংলা’। এই আওয়াজ স্মরণ করিয়ে দিয়েছে আজ দিনটি গৌরবের, আনন্দের, বিজয়ের। এবার বিজয়ের ৪৭তম বার্ষিকী।

বিজয়ের ৪৬ বছর পরও অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েছে জাতি। কখনো সামনে এগিয়েছে, আবার পিছিয়ে গেছে নানা রাজনৈতিক টানাপড়নে। তবু হতোদ্যম হয়নি জাতি। বিলম্বে হলেও শুরু হয়েছে ইতিহাসের দায় মোচনের প্রচেষ্টা। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। চলছে একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এর মধ্যে অনেকের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। এ ছাড়াও হার না মানা বাঙালি অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও উড়িয়েছে সফলতার বিজয় নিশান। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গেছে ডিজিটাল ছোঁয়া।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে এবং হচ্ছে। এই স্বস্তি নিয়ে আজ জাতি সশ্রদ্ধ বেদনায় স্মরণ করছে দেশের পরাধীনতার গ্ল¬ানি মোচনে প্রাণ উৎসর্গ করা বীর সন্তানদের। ভোর থেকেই সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল নেমেছে। শ্রদ্ধার সঙ্গে তারা শহীদের উদ্দেশে নিবেদন করছেন পুষ্পাঞ্জলি। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষ অংশ নিচ্ছে বিজয় উল্লাসের শোভাযাত্রায়। দিনভর সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত দেশের এপ্রান্ত থেকে ওইপ্রান্ত। বঙ্গবন্ধুর বজ্র নিনাদ ভাষণ আর মুক্তিযুদ্ধের সময়ের জাগরণী গানে আজ বাংলার আকাশ-বাতাস মুখর।

দিবসটি ঘিরে কর্মসূচি : ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে একাত্তরের শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে। এ ছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন এবং এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।

বিজয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি, জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ রাজধানীর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদ্যাপন করছে। এর মধ্যে আছে সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আওয়ামী লীগের তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারা দেশের সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। বিকেল ৩টায় বিজয় শোভাযাত্রা সহকারে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হয়ে শিখা চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে বিজয় র‌্যালি।

পরদিন ১৭ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করবেন। এ ছাড়াও ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর রবীন্দ্র সরোবরে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য দেশের সব শাখা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

পিডিএসও/মুস্তাফিজ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাঙালির বীরত্ব,অবিস্মরণীয় দিন,মহান বিজয় দিবস
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist