ট্রেনে অগ্রিম টিকিটের দ্বিতীয় দিনেও উপচে পড়া ভিড়
কয়েকদিন পর প্রত্যাশিত ঈদ-উল আজহা। সে কারণে বাড়ি যেতে অগ্রিম টিকিট কেনার লড়াই শুরু হয়ে গেছে।
বরাবরের মতোই ঈদের অগ্রিম টিকিট কিনতে দীর্ঘ লাইন এখন কমলাপুর রেলস্টেশন। অগ্রিম টিকিট কিনতে শুক্রবার বিকেল থেকে লাইনে দাঁড়াতে শুরু করেন টিকিটপ্রত্যাশী নারী-পুরুষেরা। রাতভর অনেকেই তাদের লাইন ঠিক রেখে কমলাপুরে অবস্থান করেছেন।
শনিবার সকাল থেকে হাসি মুখে ফিরছেন অনেকেই। কেউ কেউ প্রত্যাশিত ‘এসি টিকিট’ না পেয়ে সাধারণ টিকিট পেয়ে মন খারাপ করে ফিরে যাচ্ছেন।
রাজধানীর বাড্ডা থেকে এসেছেন একজন। রাজশাহীর টিকিট প্রত্যাশায় কমলাপুরে শুক্রবার রাত ১০টায় এসে লাইনে দাঁড়ান। আর সেই কষ্টের লাঘব হয় শনিবার। প্রত্যাশিত টিকিট পেয়ে ফিরলেন হাসি মুখে; যেন হিমালয় পর্ব্বত জয় করেছেন তিনি।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদের নির্মল ভ্রমণ ট্রেনে। কষ্ট হলেও প্রতিবার এই লাইনে দাঁড়িয়েই টিকিট নিতে হয়। শুক্রবার রাত ১০টায় এসেছি। এসেই লম্বা লাইন দেখলাম। তখনও আমার সামনে অন্তত ১৫০ জন টিকিট প্রত্যাশী।
তিনি বলেন, সারারাত লাইনে বসে থেকে সকাল ১০টায় টিকিট হাতে পেলাম। তবুও ভালো লাগছে। কারণ, এবার আমার সঙ্গে আমার বৃদ্ধ দাদু যাবেন। আর গ্রামে সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করবো। এটা ভাবতে একটুও কষ্ট মনে হচ্ছে না।
এদিকে, দ্বিতীয় দিনের মতো কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ২৩টি কাউন্টার থেকে সর্বমোট ২২,৪৯৬ অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্যে মেয়েদের জন্য তিনটি আর পুরুষের জন্য ২০টি কাউন্টার। সকাল আটটা থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়।
ভোর পাঁচটায় নগরীর আজিমপুর থেকে রংপুরের টিকিট নিতে কমলাপুরে আসেন ইডেন মহিলা কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, শনিবার ভোররাতে ফজরের আজানের পর পরই এখানে এসে লাইনে দাঁড়াই। এসে দেখি আমার সামনে দীর্ঘলাইন। প্রায় ১০০ জনের মতো নারী টিকিটপ্রত্যাশী লাইনে দাঁড়ানো। ভোর পাঁচটা থেকে একটানা লাইনে দাঁড়িয়ে মাত্র টিকিট হাতে পেলাম।
অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবার সঙ্গে ঈদ করবো ভাবতেই খুব ভালো লাগছে। তাছাড়া বন্যায় আমাদের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। টিভিতে ও ফোনে বন্যার খবর জেনেছি। কিন্তু আপনজনদের দেখার সুযোগ হয়নি। তাই এবার একটু আলাদা আগ্রহ বাড়ি যাওয়ার।
শনিবার কমলাপুর ষ্টেশনে সকাল থেকে লম্বা লাইন দেখা যায়। লাইন প্ল্যাটফরম ছাড়িয়ে মূল সড়ক পর্যন্ত চলে গেছে। নারীদের লাইনও অনেক লম্বা। প্ল্যাটফরমের ভেতর থেকে ঘুরে ঘুরে লম্বা লাইনে নারীরা দাঁড়িয়েছেন। তবে উপরে পর্যাপ্ত পাখার ব্যবস্থা না থাকায় অনেককে কাগজ মুড়িয়ে বাতাস করতে দেখা গেছে।
কবে কত তারিখের টিকিট রেলসূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিক্রি হচ্ছে ২৮ আগস্টের টিকিট। ২০ আগস্ট বিক্রি হবে ২৯ আগস্টের টিকিট। ২১ আগস্ট বিক্রি হবে ৩০ আগস্টের এবং ২২ আগস্ট বিক্রি হবে ৩১ আগস্টের টিকিট। ঘোষণা না থাকলেও ২৩ আগস্ট ১ সেপ্টেম্বরের টিকিট মিলবে বলে জানা গেছে।
রেল সূত্র জানায়, ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন সারা দেশে প্রায় দুই লাখ ৬৫ হাজার যাত্রী পরিবহন করবে রেলওয়ে। এবার ১৩৮টি কোচ বাড়তি যোগ করা হয়েছে। এছাড়া ইঞ্জিনের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।
আগে ঈদের তিনদিন আগে থেকে ঈদের বিশেষ ট্রেন চলতো। এবার ঈদের চারদিন আগে থেকে সাত জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। চলবে ঈদের সাতদিন পর্যন্ত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, এসি টিকিটের স্বল্পতা রয়েছে। নারীদের জন্য এবারে রয়েছে তিনটি আলাদা কাউন্টার।
এবার ঈদ উপলক্ষে ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ঈদের পরে ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর সাত জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে।
ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জ, রাজশাহী, পার্বতীপুর এবং চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর রুটে যাত্রী পরিবহন করবে এসব বিশেষ ট্রেন।
শোলাকিয়া ঈদগাহে যাতায়াতের জন্য ঈদের দিন ভৈরববাজার থেকে কিশোরগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ রুটে দুটি ট্রেন চালানো হবে। এছাড়া ঈদকে ঘিরে রয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা বলে জানালেন সিতাংশু চক্রবর্তী।
পিডিএসও/রিহাব