‘রায়ের অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য বাদ দিতে চায় সরকার’
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে প্রধান বিচারপতির অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আপিল বিভাগের ওই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের দশ দিনের মাথায় সরকারের প্রতিক্রিয়া জানাতে এসে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এ কথা বলেন তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, মাননীয় প্রধান বিচারপতির রায়ে আপত্তিকর ও অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য আছে, সেগুলো এক্সপাঞ্জ করার উদ্যোগ আমরা নেব। তবে আদালতের রায়ের বক্তব্য কীভাবে সরকার বাদ দিতে পারে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি আইনমন্ত্রী।
ওই রায়ে সংক্ষুব্ধ হলেও রিভিউ আবেদন করার বিষয়ে সরকার এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। আমরা নিশ্চয়ই চিন্তা ভাবনা করছি যে, এই রায়ের রিভিউ করা হবে কি-না। আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হই নাই। কারণ, রায়ের খুটিনাটি বিষয়গুলো এখানো নিবিড়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের যে পরিবর্তন ষোড়শ সংশোধনীতে আনা হয়েছিল, হাই কোর্ট গতবছর তা অবৈধ ঘোষণা করে। আপিল বিভাগ গত ৩ জুলাই সরকারের আপিল খারিজ করে দিলে সামরিক সরকারের চালু করা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান ফিরে আসে।
গত ১ আগস্ট প্রকাশিত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী বলেন, মামলার ফ্যাক্ট অব ইস্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা প্রধান বিচারপতি তার রায়ে বলেছেন। তিনি জাতীয় সংসদ সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন এবং এই প্রতিষ্ঠানকে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। আমি মনে করি, ওই সকল রাজনৈতিক প্রশ্ন আদালত কর্তৃক বিচার্য বিষয় হতে পারে না। আমরা তার ওই বক্তব্যে দুঃখিত।
আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি (প্রধান বিচারপতি) রায়ের আরেক জায়গায় বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোনো একক ব্যক্তির কারণে হয় নাই। আমি তার এই বক্তব্যে মর্মাহত। এরপর ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাঙালির স্বাধীনতার লড়াইয়ে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। এক পর্যায়ে বলেন, আজ স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর এই বাস্তব সত্যকে পুনরাবৃত্তি করতে হচ্ছে, সেটাই আমার জন্য অনেক কষ্টের এবং লজ্জার। তাই আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি যে, আমাদের নিরীক্ষায় মাননীয় প্রধান বিচারপতির রায়ে যেসব আপত্তিকর এবং অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য আছে, সেগুলো এক্সপাঞ্জ করার উদ্যোগও আমরা নেব।
পিডিএসও/হেলাল