বদরুল আলম মজুমদার

  ২৩ জানুয়ারি, ২০২০

উৎসবে মুখরিত ঢাকা

বগুড়া থেকে ভর্তির ইন্টারভিউ দিতে ঢাকায় এসেছে মনন তথাগত। তিনি দেখলেন যেন এক অচেনা নগরী। নগরীর পূর্ব থেকে পশ্চিম এবং উত্তর থেকে দক্ষিণ, যেদিকেই চোখ যায় শুধু পোস্টার-ব্যানার আর ফেস্টুনে সবকিছু ঢেকে গেছে। ভোটারের কাছে দোয়া আর ভোট প্রার্থনা চলছে। জনপ্রিয় গানের প্যারোডি দিয়ে মাইকিং হচ্ছে মোড়ে মোড়ে। চলছে পাড়া-মহল্লায় প্রচার মিছিল। উৎসব জ্বরে ভুগছে মেগা ঢাকার বাসিন্দারা। এ এক উৎসবের নগরী। চায়ের দোকান থেকে সবখানেই একই আলোচনা, কে হচ্ছেন আগামী ঢাকার নগরপিতা। পাশাপাশি চলছে স্থানীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণা।

প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে উৎসবের উত্তাপ। নির্বাচনী প্রচারে মাতিয়ে রাখতে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীরা সকাল-বিকাল গোটা শহরকে মিছিলের নগরীতেই রূপ দিয়েছেন।

সরেজমিন রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মেয়রপ্রার্থীদের চেয়েও নজর কেড়েছে কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণার তোড়জোড়। গতকাল সকালে রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শান্তিবাগ বাজার হয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে-গেয়ে এলাকার মানুষের কাছে প্রার্থীর জন্য ভোট প্রার্থনা করা হচ্ছে। উচ্চৈঃস্বরে বাদ্য-বাজনার আওয়াজ শুনে এলাকার উৎসুক নারী-পুরুষ, কিশোর-তরুণীরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মিছিলের দৃশ্য দেখছে। মিছিলে অংশগ্রহণকারী একজন জানান, তারা কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে প্রতিদিন এভাবেই বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করছেন। সব মিলিয়ে তাদের প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন তারা।

কোনো এলাকায় প্রার্থী না গেলেও প্রতিদিনই সমর্থকদের সরব উপস্থিতি থাকছে। পাড়া-মহল্লায় দল বেঁধে সমর্থকদের লিফলেট বিতরণ চোখে পড়ে। লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি পথসভা, ঘরোয়া সভায় এখন শুধুই ভোটের আলাপ। প্রার্থীর ক্যাম্পে এখন কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে চলছে মাইকিংয়ের মাধ্যমে ভোট প্রার্থনা। উৎসবমুখর পরিবেশে পাড়া-মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাদের পদচারণায় নগরীর সর্বত্র মিছিলে মুখর। সবাই যার যার প্রতীক নিয়ে যাচ্ছেন ভোটারের দ্বারে দ্বারে।

প্রচারে আওয়ামী লীগ মেয়রপ্রার্থীরা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চেয়েছেন। আর বিএনপির মেয়রপ্রার্থীরা সুষ্ঠু ভোট এবং সমান সুযোগ চেয়ে দাবি করছেন, তাদের দিনব্যাপী প্রচার-প্রচারণায় হাজার হাজার দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থক অংশ নিচ্ছেন। দক্ষিণে মিছিলরত নেতাকর্মীরা ‘নৌকা, নৌকা ও তাপস ভাই’, আর উত্তরে ‘আতিক ভাই’ সেøাগানে এলাকা মুখরিত। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে ভোট প্রার্থনা করছেন।

অপরদিকে, দক্ষিণে ‘ঢাকার ছেলে ইশরাক ভাই ধানের শীষে ভোট চাই’; উত্তরে তাবিথ ভাই এগিয়ে চলো, ‘মাগো তোমার একটি ভোটে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে’; ‘আসছে দেশে শুভ দিন ধানের শীষে ভোট দিন’ ইত্যাদি স্লোগানে সব এলাকা মুখরিত হয়ে উঠেছে। এ সময় দালানের ছাদে, বারান্দায় দাঁড়িয়ে সমর্থকরা করতালি দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দক্ষিণ সিটির গ্রিন রোড আল আমিন রোডের নির্বাচনী ক্যাম্পে ছিল লোকে লোকারণ্য। ১৬নং ওয়ার্ডের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির নেতারা বলছেন, স্থানীয়রা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেয়র পদে শেখ তাপস এবং কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বাবুলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

মাইক, মিছিল, ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও মাইকিংয়ের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে জোর প্রচারণা। পোস্টারের পরিবর্তে ডিজিটাল ব্যানার বা ডিজিটাল মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণার বিষয়ে কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা উত্তরের আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম। গতকাল বুধবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের পুলপাড় এলাকায় এক পথসভায় এ আহ্বান জানান আতিকুল ইসলাম।

আতিকুল ইসলাম বলেন, পোস্টারে শহরে সৌন্দর্য নষ্ট হয়। ইসির কাছে আমার আহ্বান তারা এমন নির্দেশনা দিক, যেন পোস্টার ব্যবহার করা না যায়। এরপর থেকে নির্বাচনে পোস্টার ব্যবহার না করে ডিজিটাল মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা করা যায়।

এদিকে নির্বাচনী প্রচারকালে হামলার অভিযোগ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা গতকাল নির্বাচন কমিশনে যান। লিখিত অভিযোগে তাবিথ আউয়াল বলেন, ২১ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকাল ১০টা হতে আমি সিটি করপোরেশন বিধিমালা ২০১৬-এর বিধান পালন করে নির্বাচনী প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা তথা কোটবাড়ী, বাজারপাড়া, হরিরামপুর, গোলারটেক জহুরাবাদ ইত্যাদি এলাকায় পথসভা ও গণসংযোগে যাই।

তিনি আরো বলেন, পথসভা পূর্বনির্ধারিত ছিল। আইনানুগভাবে সংশ্লিষ্ট দারুসসালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি। কিন্তু গণসংযোগ অনুষ্ঠানে আমার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আতিকুল ইসলামের সমর্থক এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী স্বয়ং সারওয়ার মাসুম উপস্থিত থেকে আমার ওপর এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের ওপর আক্রমণ করে। এ ঘটনায় আমি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও এতে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হই। আমার নেতাকর্মীরাও আহত হয়। এ সময় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও নিষ্ক্রিয় ছিলেন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
উৎসব,প্রচারণা,ঢাকা সিটি নির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close