প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯

চারদিক থেকে আসতে থাকে বিজয়ের খবর

ইসলামাবাদে ইয়াহিয়া খান আর ঢাকায় জেনারেল নিয়াজি ও রাও ফরমান আলী দিশাহারা। চারদিক থেকে মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের খবর আর পাক হানাদের নাস্তানাবুদের খবর আসতে থাকে। আজ ১১ ডিসেম্বর। একাত্তরের এ দিনে হিলি সীমান্তে প্রচণ্ড প্রতিরোধের মুখে পড়ে মিত্র বাহিনী। সন্ধ্যায় সম্মিলিত বাহিনী বগুড়া-রংপুর মহাসড়কসংলগ্ন গোবিন্দগঞ্জে পাকিস্তানের শক্তিশালী ঘাঁটির ওপর সাঁড়াশি আক্রমণ চালায়। সারা রাত যুদ্ধের পর ভোরে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি হানাদাররা। চারদিক থেকে ট্যাংকসহ আধুনিক সমরাষ্ট্র নিয়ে ঢাকার দিকে এগিয়ে আসতে থাকেন মুক্তি সেনারা।

একাত্তরের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে বর্বর পাক হানাদার বাহিনী মুন্সীগঞ্জ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। শত্রুমুক্ত হয় জামালপুর, লাকসাম, আশুগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও দিনাজপুরের হিলিসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী নিয়ন্ত্রিত টাঙ্গাইলের মধুপুর অঞ্চলে অবতরণ করে মিত্র বাহিনীর ৭০০ সেনা। পাকিস্তানি হানাদারদের আরেক শক্ত ঘাঁটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও উপকূলীয় অবকাঠামো, জাহাজ, নৌযান ইত্যাদি সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় করতে ব্যাপক তৎপরতা চালায় ভারতীয় নৌবাহিনীর বিমান ও যুদ্ধজাহাজ। একের পর এক বোমা ও রকেট হামলা চালিয়ে বিধ্বস্ত করে দেয় পাকিস্তান হানাদারদের সবকিছু। আক্রমণে দিশাহারা পাকিস্তান সেনারা নদীপথে পালাতে গিয়েও ধরা পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে।

ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানায়, যদিও পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধাবস্থা খুব ভালো নয়। তারপরও আমাদের আত্মসমর্পণের প্রশ্নই উঠে না। বিকাল ৩টা থেকে ঢাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সান্ধ্য আইন জারি করা হয়।

১১ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর কবলমুক্ত যশোরে স্বাধীন বাংলার প্রথম জনসভা যশোর টাউন হল ময়দানে। ভাষণ দিয়েছিলেন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমেদ। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জনসভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ফণিভূষণ মজুমদার, রওশন আলী, মোশাররফ হোসেন, তবিবর রহমান সরদার, এম আর আকতার মুকুল, জহির রায়হান প্রমুখ।

এ জনসভার খবর সংগ্রহের জন্য উপস্থিত ছিলেন লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক পিটার গিল, নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সিডনি এস এইচ সানবার্গ, ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিনিধিসহ বহু বিদেশি সাংবাদিক।

যশোরের মুক্ত এলাকায় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বৈঠক করে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। সেগুলো হলো ১. বাংলাদেশ সরকার ওয়ার ট্রাইব্যুনাল গঠন করছে। এ ট্রাইব্যুনাল নরহত্যা, লুণ্ঠন, গৃহদাহ ও নারী নির্যাতনের অভিযোগে যুদ্ধ বন্দিদের বিচার করবে। ২. ২৫ মার্চের আগে যে যা কিছুর মালিক ছিল, তাদের সব ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ৩. সব নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে। ৪. জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, পিডিপি ও নেজামী ইসলামী নিষিদ্ধ করা হবে।

অন্যদিকে, মেজর জেনারেল রাও ফারমান আলী খান ঢাকায় নিয়োজিত জাতিসংঘের প্রতিনিধির কাছে পাঁচ শর্তে আত্মসমর্পণের একটি লিখিত প্রতিবেদন দেন। শর্তগুলো হচ্ছে ১. পাকিস্তানি বাহিনী ভারতীয় বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করবে। ২. বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তারা কোনো লিখিত চুক্তি করবে না। ৩. পশ্চিম পাকিস্তানের ১ লাখ নাগরিককে পশ্চিম পাকিস্তানে ফেরত যেতে দিতে হবে। ৪. পাকিস্তানি সেনাদেরও পশ্চিম পাকিস্তানে যেতে দিতে হবে। ৫. সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে।

নিয়াজির সে প্রস্তাব নাকচ করে দেন ইয়াহিয়া। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে পাকিস্তানকে যুদ্ধে সহায়তা দেওয়ার দাবি জানান। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নিক্সন নিশ্চুপ থাকেন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিজয়,১১ ডিসেম্বর,একাত্তর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close