গাজী শাহনেওয়াজ

  ২১ জুলাই, ২০১৯

শত কোটি টাকা গচ্চা

১০ বছরে বিমানে কর্মরতদের ফ্রি টিকিট ৪৫ হাজার

গত ১০ বছরে বিমানের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কমিশনে বিমান থেকে টিকিটি নিয়েছে প্রায় ৪৫ হাজারের মতো। এসব টিকিটের মধ্যে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিমানের রয়েছে। এসব টিকিটের পেছনে বিমান আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা। এসব নানা ভুতুড়ে কর্মকাণ্ডের কারণে বিমানে বছর বছর লোকসান গুনতে হচ্ছে।

সংসদীয় কমিটিতে দেওয়া নথি পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

নথিতে দেখা গেছে, বিমানের অর্থ পরিদপ্তর, উচ্চ পদস্থ থেকে কনিষ্ঠ কর্মকর্তা সবাই এ সুবিধা নিয়েছেন। একই ভাবে প্রকিউরমেন্ট এন্ড লজিষ্টিক সাপোর্ট পরিদপ্তরের পরিচালক মমিনুল ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ নামের পাশাপাশি স্ত্রী-পরিজনদের নামেও নিয়েছেন একাধিক টিকিট। তিনি এবং তার পরিবার মিলে একাই সুবিধা নিয়েছেন ১০বছরে ৪৬টিকিট। এর কোনটিতে শতভাগ কমিশন, কোনটিতে ৯০ভাগ। তবে, ১০ ভাগের নয়। একই ভাবে, প্রকিউরমেন্ট এবং লজিষ্টিক শাখার উপ-ব্যবস্থাপকও কম যাননি। তিনি এবং তার পরিবারের নামে নিয়েছেন ১১টি টিকিট। আর ওই বিভাগের ব্যবস্থাপক বাণিজ্যিক মো. সরোয়ার হোসেন নিয়েছেন ১৩টি টিকিট। এসব টিকিটের কোনটি শতভাগ কমিশন সুবিধা নিয়েছেন।

সিনিয়র সাইন রাইটার মোহাম্মদ মহসীন নিয়েছেন ২২টি টিকিট। নিজ, স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে এ তালিকায়। সব টিকিট বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। সহ ব্যবস্থাপক প্রকিউরমেন্ট স্বপন কুমার দে। তিনি অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে নিজে এবং পরিবার-পরিজনের নামে কমিশনে টিকিট নিয়েছেন ৬৮টি। তার প্রতিটি টিকিট কমিশনে পরিমাণ শতভাগ। তবে, ৯০ শতাংশের কম নয়।

সহ ব্যবস্থাপক মোঃ নুরুজ্জামান ১২টি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রোকসানা আক্তার ১৮টি, প্রশাসনিক সহকারি দিলরুবা আফরোজা নিজ, স্বামী, ছেলে-মেয়ে এবং পিতা-মাতার নামে নিয়েছেন ২৬টি ওয়ানওয়ে টিকিট। আবুল হাসেম ১৭টি, একেএম শাহফুজুর রহমান ১৪টি, মানিকুর রহমান ২টি, লামিয়া শারমিন একাই নিয়েছেন ৫০টি। নিজাম উদ্দিন ৮টি, ফকির আবদুল হালিম ৮টি, আবদুল খালেক ১৪টি, আলমগীর কবির ১৮টি, আবু তালেব ১৭টি, গোলাম রসুল ১টি, ইষ্টার হালদার ২২টি, সাইফ উদ্দিন ১৬টি, আবদুর রশীফ ১৩টি, ফরহাদুর রেজা ১৮টি, মাছুদুল আলম খান ৬টি, শরীফুল ইসলাম ১৩টি, শরিফ হাসান ১৩টি, হাবিবা মির্জা ২০টি, নেছার আলী গাজী ৪৬টি, জাহাঙ্গির আলম তোকদার ২০টি, রবিউল ইসলাম ২০টি, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ৪টি এবং মতিউর রহমান ৪টি। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারি সবাই প্রকিউরমেন্ট ও লজিষ্টিক পরিদপ্তরের কর্মরত ছিলেন।

প্রশাসন পরিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কেউ নিয়েছেন একাই ২৯টি টিকিট, কেউ ২০টি, কেউ ১৮টি। এর মধ্যে মো আল মাসুদ খান ও কামাল হোসেন ১৮টি করে টিকিটি নিয়েছেন। ফখরুল আলম চৌধুরী নিয়েছেন ২৯টি। যার প্রত্যেকটি টিকিটে কমিশন ধরা হয়েছে ৯৫ শতাংশ। এ শাখার ৪২ জন কর্মকর্তার সবাই ৯০ থেকে ১০০ ভাগ কমিশন নিয়েছেন টিকিট প্রতি। আন্তর্জাতিক পরিভ্রমনে এ জেড এম আরিফ সহকারি ব্যবস্থাপক ও সংগঠন ও পদ্ধতি এ কর্মকর্তা ভারত সফরে ২০১২ ও ১৪ সালেই ২টি টিকিট নিয়েছেন। প্রতিটিতে ৯০ শতাংশ কমিশন নেন। আইটি ডিভিশনের উপ-ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোস্তাক হোসেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রুটে নিজ পরিবারের নামে ৩৩টি টিকিট নিয়েছেন। প্রতিটি টিকিটে কমিশন ৮৫-৯০ শতাংশ।

আর আরিফুল হাসান সাধন (সিনিয়র সিষ্টেম এনালিষ্ট) নিয়েছেন ৮৭টি টিকিট। সব নিজ ছেলে-মেয়ে এবং পিতা-মাতার সহ আত্মীয় পরিজনের নামে। তিনিও ৯০ থেকে ১০০ভাগ কমিশন নিয়েছেন প্রতিটি টিকিটের জন্য। তার পুরো পরিবার গত ১০ বছরে দেশের ভিতরে বিমান ছাড়া অন্য কোনও যানবাহন ব্যবহার করেনি। নার্গিস আক্তার নিয়েছেন ৪৩টি টিকেট। সব টিকিটে পরিবার পরিজন সুবিধা নিযেছে। এখানেও কমিশন পেয়েছেন ৮৫-থেকে ১০০ ভাগ।

এভাবে গত ১০ বছরে বিমানে কর্মকর্তা সব বিভাগ কমিশনে টিকিট গ্রহণ করেছেন। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা। আগামীতে এসব কমিশন বাণিজ্য বন্ধ করতে বিমান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি মন্ত্রণালয়য়ে সুপারিশ জানিয়েছে।

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
১০ বছর,বিমান,কর্মরত,ফ্রি টিকিট,৪৫ হাজার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close