হাসান ইমন

  ১৯ জুলাই, ২০১৯

রাজধানীর বেহাল সড়ক সংস্কার প্রয়োজন

দ্রুত সংস্কারের অপেক্ষায় রাজধানীর মালিবাগ বাজার রোড। ছবি : রূপম ভট্টাচার্য

রাজধানীর আবাসিক ও প্রশাসনিক এলাকার সড়কে এখন বেহাল দশা। এরই মধ্যে নিকেতন, মহানগর প্রজেক্ট, কাঁঠালবাগান, কলাবাগান, হাতিরপুল, রাজাবাজার, মীরবাগ ও বনশ্রী এলাকাসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকার সড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনিক এলাকাখ্যাত শেরেবাংলা নগর ও আগারগাঁও এলাকায়ও একই অবস্থা। এসব এলাকার প্রতিটি সড়ক খানাখন্দে ভরা। এ কারণে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে দুর্ঘটনা। পথচারীরা পড়ছেন ভোগান্তিতে। তবে এসব এলাকার সড়ক, ফুটপাত ও নর্দমা উন্নয়নে ১ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। শিগগির কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর রামপুরা থেকে ডেমরা সড়কটি গত বছর সংস্কার করলেও মাদারটেক থেকে মেরাদিয়া সড়কটি সংস্কার হয়নি। খানাখন্দে ভরা সড়কটি বেহাল অবস্থা এখন নাভিশ্বাস তুলে চলেছে এলাকাবাসীর। বনশ্রী জি ও এইচ ব্লকের মধ্যবর্তী এই রাস্তাটি যুক্ত করেছে প্রধান সড়ককে। কিন্তু গত দুই বছর ধরে রাস্তাটি চলাচলের প্রায় অনুপযোগী। এমনিতেই খানাখন্দ তার ওপর একটুখানি বৃষ্টি হলেই তৈরি হয় দুর্ঘটনার ঝুঁকি। রাস্তাটির বেহাল দশার কারণে সবেচেয়ে বিপাকে এখানকার ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, ভাঙা রাস্তার কারণে এখানে আসতে চান না ক্রেতারা। এলাকাটির সুযোগ সুবিধা দেখভালের দায়িত্ব পালন করছে বনশ্রী কল্যাণ সমিতি। তারা জানায়, রাস্তাটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ঠিক করার কথা থাকলেও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। এছাড়া বসবাসকারীর সংখ্যা বাড়ায় বনশ্রী এলাকায় বাড়ছে যানজট যা তীব্র হয়ে উঠার আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এছাড়া রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশের সরকারি বিভিন্ন কার্যালয়ের ঠিকানা হলেও এই এলাকার আশপাশের সড়কগুলোর চেহারা দেখে তা বোঝার উপায় নেই। সরকারি এসব কার্যালয়ের পাশের বেশ কয়েকটি রাস্তা প্রায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে। খানাখন্দে ভরা এসব সড়কে প্রায় সারা বছর জলাবদ্ধতা থাকে। বর্ষাকালে একটু বৃষ্টি হলেই অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। অথচ এ রাস্তাগুলোর পাশেই রয়েছে ইসলামী ফাউন্ডেশন, পরিসংখ্যান ব্যুরো, ব্যান্সডক, পিকেএসএফ, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার জাতীয় সদর দফতর। আশপাশেই রয়েছে নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতাল ও পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এসব প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা। খানাখন্দে ভরা রাস্তা ব্যবহার করতে গিয়ে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন নিত্য চলাচলকারী অনেক পথচারী। এগুলোর মধ্যে ইসলামী ফাউন্ডেশন হয়ে পিকেএসএফ প্রধান কার্যালয়, কোস্টগার্ড সদর দফতর ও সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্রের সামনে দিয়ে যাওয়া সড়কের অবস্থাই সবচেয়ে করুণ। এলাকার বেশির ভাগ রাস্তা ৩০ ফুটের বেশি প্রশস্ত হলেও বাস্তবে কম সড়কই ততখানি খালি পাওয়া যায়নি। সেই সঙ্গে দখল, নোংরা, ধুলিমাখা, ভাঙাচোরা, ফুটপাতহীন রাস্তা তো আছেই। একই অবস্থা শেরেবাংলা নগর এলাকার। এই এলাকার প্রায় সড়কে রয়েছে খানাখন্দ।

এদিকে কলাবাগান এলাকার মধ্যে ডলফিন গলি, বসির উদ্দিন রোড, লাল ফকিরের মাজার রোড সড়কটির বেহাল অবস্থা। এর মধ্যে লাল ফকিরের মাজার রোডটি নিচু হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতে পানি উঠে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা।

এ ছাড়াও মহানগর আবাসিক এলাকায় সড়কের বেহাল অবস্থা। হাতিরঝিল থেকে হাউজিং রোড, ওয়াপদা রোড, উলন রোডসহ এ এলাকার প্রায় সবকটি রাস্তার বেহাল অবস্থা। এসব আবাসিক এলাকার প্রায় প্রতিটি সড়কে রয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। প্রতিদিনই রিকশার যাত্রী দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। পথচারীরাও চলতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। একই অবস্থা নিকেতন, কাঁঠালবাগান, হাতিরপুল, রাজাবাজার, মীরবাগসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকার। তবে এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পের ভেতর অঞ্চল-১ উত্তরার বিভিন্ন এলাকা, অঞ্চল-৩ এর বনশ্রী, নিকেতন ও মহানগর প্রজেক্ট এলাকা ও অঞ্চল-৫ এর শেরেবাংলা নগর ও আগারগাঁও এলাকা। এসব এলাকায় সড়ক ৯১ কিলোমিটার, নর্দমা ১২২ কিলোমিটার, ফুটপাত ৮৩ কিলোমিটার ও ১১ কিলোমিটার সড়ক মিডিয়ান উন্নয়ন করা হবে। এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২১ সালে। অন্যদিকে ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, ২৪৩ কিমি. সড়ক, ৮০ কিমি ফুটপাত, ২৭ কিমি নর্দমা ও ৫ দশমিক ৭ কিমি সড়ক মিডিয়ান নির্মাণ করা হবে। জিওবি অর্থায়নে ৭৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

সার্বিক বিষয়ে ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও এ প্রকল্পের পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, উত্তরা, বনশ্রী, মহানগর প্রজেক্ট ও নিকেতন আবাসিক এলাকায় সড়কের অবস্থা খারাপ ছিল। এছাড়া শেরেবাংলা নগর ও আগারগাঁও প্রশাসনিক এলাকার রাস্তাগুলোরও একই অবস্থা ছিল। সম্প্রতি এসব এলাকার সড়ক, ফুটপাত, নর্দমা ও মিডিয়ান উন্নয়নে ৬৯৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। শিগগিরই টেন্ডার ঘোষণা করা হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষ হলে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হবে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, ৭৭৪ কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত, সড়ক ও নর্দমা নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৮ সালেন জুন থেকে ২০২০ সালের জুন। এ প্রকল্পের মধ্যে কিছু এলাকার সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি এলাকার কাজ শুরু হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাজধানী,সড়ক সংস্কার,দুর্ঘটনা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close