ঢাবি প্রতিনিধি

  ০৪ জুন, ২০১৮

ঢাবিতে ‘জবাবদিহিতা : আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও রোহিঙ্গা সংকট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার

সরকারের করণীয় নিয়ে ১১ দফা ঘোষণাপত্র উপস্থাপন

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক আদালতের এখতিয়ার আছে কিনা এ বিষয়ে আগামী ১১ জুনের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারকে লিখিত মতামত পাঠাতে অনুরোধ করেছে এ আদালত। অনুরোধের প্রতিউত্তরে বাংলাদেশ সরকার কোন বিষয়গলোতে প্রাধান্য দিতে পারে এ বিষয়ে ‘জবাবদিহিতা: আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং রোহিঙ্গা সংকট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার করেছে সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ। সেমিনারে সরকারের করণীয় নিয়ে ১১ দফা ঘোষণাপত্র দেয়া হয়। সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বিচারপতি সাঈদ রিফাত আহমেদ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ কেট ভিগনেসওয়ারেন, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক মেয়র ও মানবাধিকার কর্মী ফিলিপ এম রুডক, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের পরিচালক ফারাহ কবির। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মনজুর হাসান।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গাদের উপর চলমান নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের বিষয়টি অনেক পুরোন হলেও এর পক্ষে তেমন তথ্য-উপাত্ত ছিল না। সম্প্রতিকালের হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের স্থানগুলোতে মিয়ানমার সবাইকে প্রবেশ করতে দেয়নি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক দায়মুক্তি পেয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারকে দোষী প্রমাণের জন্য যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। সরকারের প্রধান দায়িত্ব হবে যথাযথভাবে সেসব তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের পাশাপাশি কূটনৈতিক ও অন্যান্য তৎপরতা অব্যাহত রাখা।

সেখানে তারা বলেন, রোহিঙ্গাদেরকে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করে বাংলাদেশের সীমান্তে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, যার যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। যদিও মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আদালতের এখতিয়ারভুক্তদেশ নয়, তারপরেও মিয়ানমার যে জোরপূর্বক রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠিয়েছে এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালত কাজ করতে পারে। যথাযথভাবে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের পাশাপাশি সংকট সমাধানে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। সেমিনারে রোম চুক্তির বিভিন্ন ধারায় মিয়ানমারকে দোষী প্রমাণের বিষয়গুলো তুলে ধরেন বিচারপতি সাঈদ রিফাত আহমেদ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ কেট ভিগনেসওয়ারেন।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সবাই কথা বললেও এত দিনে কেউ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ ধরনের মানবিক বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতিতে কেউ তেমন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। ৭০, ৮০ এবং ৯০ এর দশকে রোহিঙ্গারা এ দেশে আসতে বাধ্য হয়েছিলো, কিন্তু তখন এসব কর্মকান্ডের তেমন কোনো তথ্য-উপাত্ত ছিল না। এখন তথ্য-প্রযুক্তির যুগ। মিয়ানমারকে দোষী সাবস্ত করার মতো যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত সবার হাতে রয়েছে।

মিয়ানমারের গণতন্ত্র দেশটির সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে এবং এজন্য দেশটিতে গণতন্ত্র ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির মানুষের মতামত ঠিকভাবে উঠে আসছে না।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে হাত করতে ভারতের কূটনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ভারত ভেবেছিলো এই ইস্যুতে নীরব থেকে মিয়ানমারকে হাত করবে। মূল প্রতিযোগিতা ছিল চীনের সঙ্গে। কিন্তু তাদের মনে রাখা উচিত ছিলো মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক খুবই ভাল এবং গভীর। তবে এখন ভারত মুখ খুলতে শুরু করেছে।

ধীরে ধীরে সবাই এই সংকট নিয়ে কথা বলবেন এবং এর সমাধানে এগিয়ে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের উচিত হবে রাশিয়ার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা। সব থেকে ভাল হয় দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে এখন বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো গেলে। তাহলে সেটি হবে বড় ধরনের অগ্রগতি।

গত ৯ এপ্রিল রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালত তার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে কি না এ বিষয়ে আদেশ জারি করা হয়। যদিও মিয়ানমার চুক্তিতে সই করেনি, তারপরেও তারা জোরপূর্বক নিজ দেশের নাগরিককে অন্য দেশের সীমানায় তাড়িয়ে দিয়েছে, এটি আন্তর্জাতিক আইনে বিচারযোগ্য। বাংলাদেশ রোম চুক্তিতে সই করা অন্যতম দেশ। এরপর ১১ এপ্রিল এই যুক্তির পক্ষে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। আগামী ১১ জুনের মধ্যে বাংলাদেশকে লিখিত মতামত জমা দিতে বলা হয় এবং এই বিষয়ে আগামী ২০ জুন শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। সে প্রেক্ষাপটেই এই সেমিনারের আয়োজন করে একশন এইড বাংলাদেশ, সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ এবং সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস ।

পিডিএসও/রানা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অপরাধ আদালত ও রোহিঙ্গা সংকট,ঘোষণাপত্র,উপস্থাপন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist