ডা. এস এ মালেক

  ০৫ এপ্রিল, ২০১৮

শেখ হাসিনা ও আগামী নির্বাচন

সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা স্লোগান প্রায়ই শোনা যায়, ‘শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আসতে হবে।’ অনেকই বলবেন, এটা হয়তো তার দলীয় লোকদের স্লোগান। কেননা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে দুই মেয়াদে প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতাসীন। তাই স্বাভাবিক কারণেই তার দলের সমর্থকরা বেশ কিছুটা হৃষ্ট-পুষ্ট হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তাদের সেই পুষ্টিকে অব্যাহত রাখার প্রয়োজনে দলীয় সমর্থকরা তাকে ক্ষমতায় দেখতে চাইবেন—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। তিন টার্মে প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনা যেভাবে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে বিশ্ব পরিমণ্ডলে এক মর্যাদার আসনে উন্নীত করেছেন, তা এ দেশের অধিকাংশ মানুষ বিস্ময়ের সঙ্গে অবলোকন করছেন। বিশ্বে বোধ হয় এরূপ আর একজন সরকারপ্রধান পাওয়া যাবে না, যিনি তার দেশকে সর্বাত্মকভাবে উন্নয়ন করতে পেরেছেন।

শেখ হাসিনার বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের এক রোল মডেল। যেদিকেই তাকানো যায়, সেদিকেই উন্নয়ন আর অগ্রগতি। গত কয়েক দিন আগে উত্তরবঙ্গের ঠাকুরগাঁও জেলায় এক জনসভায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা তার সরকারের উন্নয়নের যে বর্ণনা জনগণের সামনে যেভাবে তুলে ধরেছেন, তা সত্য সত্যই বিস্ময়ের ব্যাপার। যেখানে জনসভা করছেন, সেখানের সেই অঞ্চলে উন্নয়নের সমীক্ষা তিনি তুলে ধরেছেন, তা সত্য সত্যই বিস্ময়কর। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষিত হয়নি। একটা দেশকে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে যে স্থানে যা করা প্রয়োজন, তার সবকিছুই শেখ হাসিনা সরকার করে যাচ্ছেন। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তাই কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন করতে পারলে দেশ যে দ্রুত স্বনির্ভর হতে পারে, তা শেখ হাসিনা ভালো করেই অনুধাবন করেছেন। তাই এ দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শুধু খাদ্য নয়, কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেদিন বেশি দূরে নয় যে কৃষি পণ্যের ওপর বাংলাদেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধি অনেকাংশই নির্ভর করবে।

কৃষিপণ্য নিয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্ববাজারে ঢুকেছে। ধান, পাট, মাছ, শাকসবজি ইত্যাদি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের বৈজ্ঞানিকরা যে অসাধারণ অবদান রেখেছেন, তা সবাই অবগত আছেন। যদি পাওয়ার সেক্টরের কথা বলি, তবে এত অল্প সময়ে এত বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন খুব কম দেশই উৎপাদন করতে পেরেছে। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিছু খাদ্য আমদানি করতে হয়েছে এবং এর আগে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে তো দেশে বিপ্লব ঘটেছে। বিশ্বের কোনো স্বল্পোন্নত দেশের গ্রামপর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার কৃতিত্ব শুধু বাংলাদেশের, অন্য কোনো দেশ এটা পারেনি। এখন প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে, যা থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে। আমরা যখন চিকিৎসা বিদ্যা অধ্যয়ন শুরু করি অর্থাৎ সেই ৫০ দশকে, তখন পূর্ব পাকিস্তানে একটি মাত্র মেডিক্যাল কলেজ ছিল আর রাজশাহী ও চট্টগ্রামে ছিল আন্ডার মেট্রিকুলেশন। আর এখন সরকারি ও মেডিক্যাল কলেজ অগণিত। মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও উন্নীত করা হয়েছে। দেশে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার মতো মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা আজ দেশের মানুষ ঘরে বসেই পাচ্ছে, বিদেশ গমনের প্রবণতা এ ক্ষেত্রে অনেক কমেছে।

বেসরকারি খাতে চিকিৎসাসেবাকে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও উন্নত চিকিৎসা জনগণ পাচ্ছে। শিল্পক্ষেত্রেও উন্নয়ন ও অগ্রগতি দৃষ্টিগোচর হওয়ার মতো। কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ দ্রুত শিল্পসমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত হতে চলেছে। ইতোমধ্যে আমাদের পোশাকশিল্প, ওষুধশিল্প, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প ও পাটশিল্প বিশ্বে অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। টোনারিশিল্পকে সরিয়ে সাভারে প্রতিস্থাপন করার কাজ দুরূহ ব্যাপার ছিল। সরকার তা সফলভাবে সমাধান করেছেন। শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধি করার প্রয়োজনে অনেক শিল্প নগরী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তারা শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছেন ও বিনিয়োগ করছেন। এতে আমাদের রফতানি আয় বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। সুপরিকল্পিতভাবে কৃষিভিত্তিক শিল্প উন্নয়নে সরকার ব্যাপক উদ্যোগ করেছেন। ফলে কৃষি ও শিল্প সমন্বিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করবে। কৃষিক্ষেত্রে দেশীয় শিল্পসমূহ যেসব নতুন যন্ত্র, বীজ ও কৌশলের উদ্ভাবন ঘটেছে, তা আমাদের দ্রুত স্বনির্ভর করে তুলবে।

শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক সমালোচনা আছে। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে অনেক তর্কবিতর্ক হচ্ছে। এরপরও শিক্ষাক্ষেত্রে অর্জন ঈর্ষণীয়। সরকার প্রাথমিক পর্যায়ে বছরের প্রথম সপ্তাহে প্রায় ৩৫ কোটির ওপরে বিনামূল্যে বই সরবরাহ করছেন বছরের পর বছর। প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করা হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে মাধ্যমিক শিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থাকে অবৈতনিক করা। শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ বেড়েই চলেছে। শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে এবং মেধাবী ও বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উচ্চতর ডিগ্রিধারী শিক্ষকরা শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশ করছেন, এতে শিক্ষার গুণগত মানের পরিবর্তন আসবে। ঠাকুরগাঁওয়ের জনসভায় শুধু নয়, যেখানেই তিনি জনসেবা করেছেন, যেমন : খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, চাঁদপুর ও চট্টগ্রামে দলীয় যেসব জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে লাখ-লাখ জনতা উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়নের যে বর্ণনা তিনি দিয়েছেন ও ভবিষ্যতের উন্নয়ন গতিধারা অব্যাহত রাখার জন্য জনগণের কাছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন, তাও অত্যন্ত যৌক্তিক বলে মনে হয়। শেখ হাসিনা কিন্তু এ কথা বলছেন না, আগামী নির্বাচনে ইচ্ছামতো ভোট দিয়ে যাকে খুশি, তাকেই নির্বাচিত করুন, যা নাকি গণতান্ত্রিক নীতিব্যবস্থার স্বীকৃত। বরং তিনি বলছেন, তিনি দেশকে যেভাবে উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তা যদি অব্যাহত রাখতে হয়, তাহলে তাকে আবার ক্ষমতায় নিয়ে যেতে হবে। কেননা নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আর একজন সরকারপ্রধান হয়ে প্রচলিত গ্রামীণ স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলো আবার বন্ধ করে দেন, তাহলে জনগণের অবস্থাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? গণতান্ত্রিক পদ্ধতি কিছুটা সংকুচিত হলেও দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় যাওয়া দরকার বলে তিনি নিজেও মনে করেন, আর জনগণ তো মনে করবেনই।

মনে না করলে বিগত সাতটা জনসভায় বিপুল লোকের উপস্থিতি দেখে মনে হয়, বাংলাদেশে ছয় দফা আন্দোলনের আগে বঙ্গবন্ধু যে অবস্থার সৃষ্টি করেছিলেন, শেখ হাসিনা বোধ হয় এরূপ একটা অবস্থানে চলেছেন। জনগণ তো আর বেকুব বা অকৃতজ্ঞ নয়, দেশ ও জাতিকে কে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। তিনি তো আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা যত সম্মাননা ও উপাধী পেয়েছেন, বর্তমান বিশ্বে আর কোনো সরকারপ্রধান পেয়েছেন কি না, সন্দেহ। শেখ হাসিনা কোনো সাধারণ সরকারপ্রধান নন। তার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের একক নেতৃত্বেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। তার দেশ স্বাধীন করার একমাত্র লক্ষ্য ছিল বাংলার জনগণের আর্থ-সামাজিক মুক্তি।

আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চক্রান্তের কারণে বঙ্গবন্ধুকে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে অপসারণ করা হয়। সেই থেকে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যে মহাবিপর্যয়ে নিপতিত হয়, তা থেকে দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করার জন্য শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবেশ করতে হয়। সেই থেকে তিনি সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। তার সংগ্রামের মূল লক্ষ্যই বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। বাবার অসমাপ্ত কাজকে তিনি সমাপ্ত করতে চান। এটা তার বিশ্বাস, এটা তার জীবন দর্শন। তিনি দেশের জনগণের জন্য রাজনীতি করেন, জনগণকে তিনি তা ভালোভাবেই বুঝিয়েছেন। তিনি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেন না, তার চাওয়া-পাওয়ারও কিছু নেই। সব হারিয়ে শূন্য হাতে তিনি রাজনীতি করেছেন। মাত্র দেড় দশক রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে তিনি জনগণকে যে কী দিয়েছেন ও কী দিতে পারেননি, তা তিনি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে বলে থাকেন। তার কথাবার্তায় কোনো চাতুরতা নেই। সহজ, সুন্দরভাবে সত্য কথা বলাই তার অভ্যাস।

তাই আগামী সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের কোনোপ্রকার কারচুপির প্রয়োজন নেই। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হলে এ দেশের জনগণ শেখ হাসিনার দলকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের মহান দায়িত্ব তার ওপরই ন্যস্ত করবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিশ্লেষণ,নির্বাচন,শেখ হাসিনা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist