জুবায়ের চৌধুরী

  ২০ মে, ২০১৮

যাত্রী-চালক সবারই আছে অভিযোগ

রাইড শেয়ারিং সেবায় বাড়ছে অসন্তোষ

দেশে রাইড শেয়ারিং সেবাটি খুব বেশি দিনের নয়। মাত্র এক বছরের। এরই মাঝে গতিময় শহরের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। যাদের নিজস্ব বাহন নেই তারা তো বটেই, সময় বাঁচিয়ে যারা এক জায়গা থেকে অন্য স্থানে যেতে চান, তারা এই সেবাকে আশীর্বাদ মনে করেন। এতে উপকৃত হচ্ছেন গাড়ির মালিকরাও। তাই অল্প সময়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে রাইড শেয়ারিং।

কিন্তু নানা কারণে রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যাত্রী ও চালক সবারই অভিযোগ। তাই এ নিয়ে অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছে। একদিকে, ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ যাত্রীদের, অন্যদিকে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে চালকদের মূল অভিযোগ—তাদের ঠকানো হচ্ছে। রাইড শেয়ারিংয়ে যাত্রীদের অভিযোগগুলোর বেশিরভাগই চালকদের বিরুদ্ধে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু চালকদের নিয়ন্ত্রণ করে থাকে সে কারণে অভিযোগের তীর প্ল্যাটফর্মগুলোর দিকেও যায়। রাইড শুরুর আগে দেখানো ভাড়ার থেকে রাইড শেষের পর ভাড়া অনেক বেশি আসে বলে অভিযোগ ‘পাঠাও’ ব্যবহারকারীদের।

মিরপুর থেকে যাতায়াতের জন্য নিয়মিত ‘পাঠাও’ ব্যবহার আমিন উদ্দীন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘একদিন পল্লবী থেকে দারুস সালাম যাব বলে পাঠাও-তে কল দেই। রাইড শুরুর আগে ভাড়া দেখানো হয়েছিল প্রায় ১০০ টাকা। তবে রাইড শেষে আমার ভাড়া আসে ১৪০ টাকার বেশি। এমনটা কেন হলো জানার জন্য গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে ফোন দিলাম। সেখান থেকে বলল যে, আমি নাকি ‘হট জোন’ এলাকায় ছিলাম। এই এলাকায় ভাড়া বেশি আসে। আমার কথা হচ্ছে, আমি যে হট জোনে আছি তা আমাকে কেন জানাবে না? আমার অ্যাপসে কেন সেটা আমি দেখতে পারব না? ভাড়া তো আমি দিই, তাই না?’

ভাড়া বেশি আসার অভিযোগ আছে ‘ওভাই’র বিরুদ্ধেও। ‘উবার’ ব্যবহার করে একই এক সংবাদ কর্মীর। শাফিউর রহমান বলেন, ‘একদিন রাতে উবার মটোতে (বাইক) রাইড রিকোয়েস্ট দেই। একজন চালক তা গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি আমাকে না নিয়েই তার মতো করে চলে যান। এতে করে আমি আর নতুন করে রাইড রিকোয়েস্ট দিতে পারছিলাম না। কারণ রাইড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করা চালক রাইড বাতিল না করলে যাত্রী নতুন রাইড দিতে পারেন না। আমাকে সেদিন অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। এতে আমার সময় নষ্ট হয়। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে, উবারের গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে যোগাযোগের কোনো উপায় আমি তখন অ্যাপসে পেলাম না। একটি নম্বরে ফোন দিলে অপরপ্রান্ত থেকে বলা হলো যে, সাপোর্ট সেন্টারে শুধু চালকদের সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়।

চালকদের যত অভিযোগ : রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মে যারা মূল কাজটি করে থাকেন তারা হলেন যানবাহন চালকরা। প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে চালকদের অভিযোগের যেন শেষই নেই। মোস্তাফিজুর রহমান খান নিয়মিতভাবে রাইড শেয়ার করতেন ‘সহজ রাইডসে’। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একদিন রাইড শেষ করে দেখতে পাই যে, যাত্রীর ডিসকাউন্ট (মূল্য ছাড়) ছিল। তাই তার কোনো ভাড়া আসেনি। আমিও ভাড়া নিইনি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সহজ এক খুদে বার্তায় আমাকে জানায় যে, আমার এই রাইড নিয়ে তাদের সন্দেহ আছে। আমাকে তাদের অফিসে যেতে বলে। নইলে টাকা দেবে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমি কেন তাদের অফিসে যাব? আমি তো আর তাদের কর্মী না, তাই না? আমি সেখানে ফ্রিল্যান্স করি। রেজিস্ট্রেশনের জন্য তাদের লোক পেট্রোল পাম্পে এসেও আমাদের থেকে নিবন্ধন করিয়ে নেয়। আর আমার টাকা দেওয়ার সময় আমাকে অফিসে ডাকবে। এটা তো হয় না।’

‘পাঠাও’-তে রাইড শেয়ার করেন নাহিদুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘পাঠাও’ বা ‘সহজ’ এই প্ল্যাটফর্মগুলো বোনাসের লোভ দেখিয়ে বেশি বেশি রাইড শেয়ার করিয়ে থাকে। কিন্তু তারা সহজে বোনাস দেয় না। বোনাস পেতে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। চালকদের জন্য যে মূল্যছাড় প্ল্যাটফর্মগুলো দেয় তা সমন্বয় হয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের পাওয়ার কথা। কিন্তু সেটাও হয় না। গ্রাহকের মূল্য ছাড়ের পরেও দেখা যায়, প্ল্যাটফর্মটিকে আমারই টাকা দিতে হয়। এটা তো মানা যায় না।’

প্ল্যাটফর্মগুলো যা বলছে : যাত্রী বা চালকদের অভিযোগ অনেকটাই মানতে নারাজ রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো। ‘সহজ রাইডস’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা মালেক কাদের বলেন, ‘রাইড শেয়ারিং খাতটি এখনও নতুন। যাত্রী ও চালকদের ভালো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে চালকরা বোনাস বা ডিসকাউন্ট নিয়ে যে অভিযোগ করেছেন তা সঠিক নয়। চালকদের বোনাসের টাকা কার্যদিবসের মধ্যেই পাঠিয়ে দিই। জানতে চাইলে এক লিখিত বিবৃতিতে ‘উবার’ দায়সারা গোছের উত্তর দেয়। তবে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে ‘পাঠাও’য়ের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলেও কোনো মন্তব্য আসেনি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে।

বিআরটিএ যা বলছে : রাইড শেয়ারিং নিয়ে এতসব অভিযোগ থাকলেও সেই অভিযোগ শোনার মতো কেউ নেই। অভিযোগের তদন্ত বা সুষ্ঠু সমাধান কিভাবে হবে তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। রাইড শেয়ারিং এর সার্বিক বিষয়টি দেখভাল করা সংস্থা হলো বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। এই খাতের জন্য নীতিমালার একটি খসড়া ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে সংস্থাটি। বিআরটিএ’র পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রাব্বানী বলেন, রাইড শেয়ারিং নীতিমালা খসড়া পর্যায়ে আছে। সেই খসড়ায় এসব অভিযোগ প্রতিষ্ঠান ও অভিযোগকারীদের মধ্যে সমাধান করে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

দেশে রাইড শেয়ারিং ধারণার বিকাশ ঘটে ২০১৬ সালের শেষ দিকে। ‘শেয়ার এ মোটরবাইক’ বা স্যামকে দেশের প্রথম রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ধরা হয়। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি এসে নগরীর চালক ও যাত্রী দুই শ্রেণির কাছেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এই সেবা। রাইড শেয়ারিং সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ‘পাঠাও’, ‘উবার’ ‘সহজ রাইডস’, ‘মুভ’, ‘ওভাই’, ‘ইজিয়ার’, ‘জিওটু’, ‘ডাকো ক্যাপ্টেইন’। স্যাম দিয়ে শুরু হলেও দেশীয় প্রতিষ্ঠান পাঠাও এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান উবার এই খাতে অন্য সবার থেকে দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। প্রতিষ্ঠান দুটি যথাক্রমে মোটরসাইকেল আর প্রাইভেট গাড়ি দিয়ে শুরু করলেও উভয়েই এখন দুই ধরনের বাহনের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন যানবাহনে যাত্রী পরিবহন করা হয়। গাড়ি, বাইক বা অন্য কোনো মোটর যানের মালিক বা চালক তার বাহনে যাত্রীদেরকে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেন। চালক ও যাত্রীর মধ্যকার এই যোগাযোগ বা পুরো প্রক্রিয়াটি হয় একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। মূলত একটি মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে। যাত্রীকে এই সেবা নিতে হলে দূরত্ব অনুযায়ী, একটি ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। চালকের আদায় করা এই ভাড়ার একটি অংশ (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মোট ভাড়ার ২০ শতাংশ) পাবে ওই রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাইড শেয়ারিং,উবার,পাঠাও,ওভাই
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist