সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
সোনারগাঁয়ে মেঘনা নদী
নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার প্রভাবশালীদের
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মেঘনার শাখা নদীতে বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ আটকে মাছ শিকারের অভিযোগ ওঠেছে ইকবাল হোসেন, কবির হোসেন, পনির হোসেন ও তাদের সহযোগি কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের নয়াগাঁও এলাকায় আষাঢ়িয়ারচর কোল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া নদীর অংশে এই বাঁধ দেওয়ায় হয়েছে। ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছ ধ্বংস সহ বন্ধ হয়ে গেছে নৌ চলাচল। জীবিকা বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় জেলে পরিবার।
জানা গেছে, আষাঢ়িয়ারচর এলাকার একজন পিরোজপুর সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবদুল হালিম ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বেআইনী ভাবে নদীতে বাঁধ দিয়ে অবাধে ছোট বড় সব ধরণের মাছ শিকারের অভিযোগ ওঠেছে মৎস্যজীবি ইকবাল হোসেন, কবির হোসেন, পনির হোসেন ও তাদের সহযোগি কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তাদের দাপটে প্রকৃত জেলেরা নদীতে মাছ শিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিধান অনুসারে, প্রবাহমান কোনো জলাশয় ও খরস্রোতা নদীতে কোনো ধরনের বাঁধ, স্থায়ী অবকাঠামো বা অন্য কোনোভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মাছ শিকার করা যাবে না। নদী কিংবা জলাশয়ে পানির প্রবাহ ও মাছের চলাচলে বাঁধ দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে বাধাগ্রস্থ করে মাছ শিকারে শাস্তির বিধান থাকলেও এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মেঘনার শাখা নদীর উত্তর ও দক্ষিন পাড়কে সংযুক্ত করে বাঁশ ও নিষিদ্ধ সোঁতি জালের বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণের নৌ চলাচল বন্ধ করে বাঁশ ও নিষিদ্ধ সোঁতি জাল দিয়ে মাছ আহরণ করা হচ্ছে। এতে নৌ চলাচল বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি নিষিদ্ধ সোঁতি জাল ব্যবহার করায় মাছের প্রজনন ধ্বংস করা হচ্ছে।
নয়াগাঁও এলাকার জেলে মিছির আলী জানান, এক সময় উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ছয়হিস্যা, নাগেরগাঁও, চেঙ্গাকান্দি, কান্দারগাঁও, মৃধাকান্দি, আষাঢ়িয়ারচর ও নয়াগাঁও এলাকার জেলেরা এই নদীতে নেমে মাছ ধরতে পারতেন। বিগত কয়েক বছর ধরে আষাঢ়িয়ারচর এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নদীতে বাঁধ দিয়ে একক আদিপত্য বিস্তার করে মাছ শিকার করার কারণে এখন আর কেউ নদীতে নামতে পারেনা। কোনো নৌকাও চলাচল করতে দেয় না বাঁধ মালিকরা। তাদের কারণে জীবিকা বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় অনেক জেলে পরিবার।
বাঁধ মালিকদের মধ্যে পনির হোসেন জানান, প্রতিবছরই গ্রাম্য পঞ্চায়েত প্রথা অনুযায়ী স্থানীয় এলাকার কয়েকটি মসজিদ উন্নয়নের জন্য কিছু টাকা পয়সা দিয়ে নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করেন তারা। এ বছর কয়েকটি মসজিদে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে নদীতে বাঁধ তৈরি করে মাছ শিকার করছেন। নদীতে বাঁশ ও নিষিদ্ধ সোতি জালের বাঁধ দিয়ে প্রতিবছর এভাবেই মাছ আহরণ করা হয়।
এদিকে আষাঢ়িয়ারচর এলাকার একজন পিরোজপুর সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবদুল হালিমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তেমন কোনো কিছু জানান নি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার জানান, নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করা বেআইনি কাজ। যদি কোনো ব্যক্তি নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকারে জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে আইনুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদ করা হবে।