রাজশাহী ব্যুরো

  ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

পুঠিয়ায় বেদেনা বেওয়া হত্যার রহস্য উন্মোচন

মনোমালিন্যের কারণেই হত্যার পর বস্তাবন্দি করে লাশ গুম

ছবি : সংগৃহীত

মনোমালিন্যের জেরে প্রতিশোধ নিতেই পরিকল্পিতভাবে শাশুড়ি বেদেনা বেওয়াকে (৫৭) হত্যার পর লাশ গুম করতে বস্তাবন্দি করে কবরস্থানে ফেলে দিয়ে নিখোঁজের নাটক বানিয়েছিল পুত্রবধূ কণিকা (২৯)। আর হত্যার আগে কুটকৌশলী পুত্রবধূ কণিকা তার পরিকল্পনা অনুযায়ী ইফতারের আগে শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সতীনের মেয়েকে দিয়ে সেটি খাওয়েছিল। এরপর ঘুমিয়ে গেলে নিজের ওড়না দিয়ে শাশুড়ির দুই হাত খাটের সঙ্গে বেঁধে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন ঘাতক পুত্রবধূ কণিকা। আর এ ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই লোমহর্ষক হত্যার এমন রহস্য উদঘাটিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইদুর রহমান।

থানা সূত্রে জানা যায়, পুঠিয়া উপজেলার থান্দারপাড়া গ্রামের মৃত মোজাহার আলীর স্ত্রী ছিলেন বেদেনা বেওয়া। সম্প্রতি তার এক ভাগনেকে আনতে বানেশ্বর বাজারের উদ্দেশ্যে বের হয়ে বৃদ্ধা বেদেনা বেওয়া নিখোঁজ হওয়ার খবর প্রচার করেন ঘাতক পুত্রবধূ কণিকা। নিখোঁজের ঘটনায় খোঁজাখুঁজি করে মাকে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত গত ১১ এপ্রিল পুঠিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন নিহত বেদেনা বেওয়ার ছেলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক রিপন আলী।

এরপর গত ১২ এপ্রিল বিকেলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে বেদেনা বেওয়ার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেখান থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে সিআইডি। এরপর তদন্ত শুরু করে পুলিশ। কয়েকদিনের মধ্যেই ঘটনার লোমহর্ষক রহস্য উদঘাটন হলো।

এ ঘটনায় গ্রেফতার নিহতের পুত্রবধূ কণিকা খাতুন (২৯) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন। কণিকা ছাড়াও এ ঘটনায় নিহতের নাতনিসহ আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে তারা দুইজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ। এই দুই আসামির একজন কণিকার সতীনের ১৪ বছরের মেয়ে ও দেবরের ১৬ বছরের ছেলে। তারাও আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন। সর্বশেষ গত বুধবার (১৭ এপ্রিল) আসামি কণিকার দেবরের ছেলেকে গ্রেফতারের পর আদালতে তোলা হয়। আর নিহত বেদেনা বেওয়ার দুই সন্তানের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঘাতক কণিকার স্বামী রিপন আলী বাদি হয়ে এই হত্যা মামলা করেছেন।

রাজশাহীর পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান জানান, কোনো এক বিষয় নিয়ে আগে থেকেই শাশুড়ির সঙ্গে পুত্রবধূ কণিকার মনোমালিন্য ছিল। ঘটনার দিনও তার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল কণিকার। এর জের ধরেই শাশুড়িকে হত্যার পরিকল্পনা করেন পুত্রবধূ। ইফতারের সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সতীনের মেয়েকে দিয়ে সেটি তার দাদীকে দিয়ে আসতে বলেন। কিন্তু ওই কিশোরী তাকে মানা করে। দাদির সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে জানিয়ে কণিকা তার সতীনের মেয়েকে শরবত দিয়ে আসতে পুনরায় অনুরোধ করেন। বলেন, আমি দিলে তোমার দাদি খাবে না।

এ কথা শুনে সতীনের মেয়ে দাদিকে কণিকার পাঠানো শরবত দিয়ে আসে। ইফতারে সেই শরবত পানের কিছুক্ষণ পরই বেদেনা বেওয়া ঘুমিয়ে পড়েন। এরপর কণিকা ওড়না দিয়ে শাশুড়ির দুই হাত খাটের সঙ্গে বেঁধে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে তার দেবরের ছেলেকে ডাকেন। আগে থেকেই সে কণিকার বিশ্বস্ত ছিল। তাকে ডেকে কণিকা প্রথমে কেক খেতে দেন। এরপর তার দাদিকে হত্যার এই পুরো ঘটনা বলেন এবং মরদেহ গুম করে দেওয়ার ব্যাপারে তার সহযোগিতা চান। এরপর তিনজন মিলেই মরদেহ বস্তায় ভরে দেয়ালের ওপর দিয়ে বাড়ির পাশের কবরস্থানে ফেলে দেন। পরে গত ১২ এপ্রিল মরদেহ পচে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় স্থানীয় এক ব্যক্তি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে দুর্গন্ধের বিষয়টি জানান।

পুঠিয়া থানা পুলিশ ডোম ডেকে বস্তার মুখ খুলে বেদেনার মরদেহ দেখতে পায়। এই ঘটনায় পরদিন শনিবার (১৩ এপ্রিল) পুলিশ রিপন ও তার স্ত্রী কণিকাকে থানায় মামলা করার জন্য ডাকে। তারা থানায় যাওয়ার পর রিপন ও তার স্ত্রীকে পুলিশ আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একপর্যায়ে কণিকা ঘটনার কথা স্বীকার করেন। তার কথা অনুযায়ী বাড়ি থেকে তার সতীনের মেয়েকেও থানায় নিয়ে আসা হয়। তাদের দুজনকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে তারা দুজনই পরদিন আদালতে গিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর সূত্র ধরে গত বুধবার (১৭ এপ্রিল) পুলিশ কণিকার দেবরের ছেলেকে গ্রেফতার করে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
হত্যার রহস্য উন্মোচন,পুঠিয়া
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close