শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন

কক্সবাজারে চৌফলদণ্ডী ঘাট ইজারা নিয়ে তেলেসমাতি কাণ্ড

বিপুল রাজস্ব বঞ্চিত হওয়া শঙ্কা

কক্সবাজার জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন সদরের চৌফলদণ্ডী ঘাট ইজারা নিয়ে আবারও তেলেসমাতি ঘটনা নিয়ে ইজারায় অংশ নেয়া ব্যাক্তিদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। গত অর্থবছরেও এই ঘাট নিয়ে তেলেসমাতির ঘটনায় সরকার বিপুল রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে। এই অর্থবছরেও একই কায়দায় সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হওয়ার আশংকা করছে সংশ্লিষ্টরা। তবে, জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী হিল্লোল বিশ্বাস জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ অথরিটি হচ্ছে আমাদের চেয়ারম্যান। সরকারি নিয়মনীতি মেনে সর্বোচ্চ দরদাতাকে দেয়া হয়, যদি ব্যাংক ড্রাফটসহ সবকিছু ঠিক থাকে।

জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা পরিষদের আওতাধীন ২১ টি খেয়া/লঞ্চ ঘাট ও তিনটি জেটি এবং ৪টি চেঞ্জিং রুম কাম শৌচাগার ১৪২৭ বাংলা সনের জন্য (পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত) ইজারার জন্য গত ৩০ জানুয়ারি (স্মারক নং-৪৬.০৪২.০০২২.০০১.০০৭.৪২.২০১৯.০২) জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিল্লোল বিশ্বাস কর্তৃক ইজারা বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় দুটি পত্রিকায় তা প্রকাশ করা হয়। ইজারা বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম দরপত্র দাখিলের তারিখ ছিল ১৭ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় দরপত্রর দাখিলের তারিখ ১১ মার্চ, তৃতীয় দরপত্র দাখিলের তারিখ ৩০ মার্চ ও চতুর্থ দরপত্র দাখিলের তারিখ ১২ এপ্রিল নির্ধারণ করা হয়।

অভিযোগ উঠে, ২১ টি খেয়া/লঞ্চ ঘাট দরপত্র সিডিউল বিক্রির নিয়ম থাকলেও ২০টি ঘাট ইজারা ফরম (সিডিউল) বিক্রি করা হলেও ২১ নাম্বার ক্রমিকে চৌফলদণ্ডী ঘাট ইজারার সিডিউল বিক্রি বন্ধ রাখা হয়।

তবে সিডিউল ফরম ক্রয়ের জন্য কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদণ্ডী ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়া গ্রামের নুরুল হকের ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহান নামের এক ব্যাক্তি গত ১২ ফেব্রুয়ারি জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেন। আবেদনে তিনি দাবি করেন, গত ৩০ জানুয়ারি ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়, কিন্তু তিনি ১২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত মুল্যে (অফেরত যোগ্য) চৌফলদণ্ডি ঘাট ইজারার সিডিউল কিনতে গেলে উক্ত ঘাটে ফরম বিক্রি করবে না বলে জানায়। যা কোনওভাবেই কাম্য নয়। তিনি উচিত মূল্যে উক্ত ঘাট ইজারা নেওয়ার আগ্রহী হয়ে ফরম দেয়ার অনুরোধ জানান।

মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, ঘাট ইজারার সিডিউল কিনতে লিখিত আবেদন করার পরেও ব্যর্থ হয়ে আমি বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবগত করার পর জেলা প্রশাসক সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেন। পরবর্তীতে নির্ধারিত মূল্যে সিডিউল কিনে যথারীতি ও নিয়মে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি টেন্ডার ড্রপ করেন। ঘাট ইজারার সরকারি সম্ভাব্য মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। জেলা পরিষদ অফিসে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি একইদিন বিকালে দরপত্র দাতাদের উপস্থিতিতে দরপত্র খোলা হয়। ইজারায় অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতিতে এবং সর্বোচ্চ মূল্য ( ১৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা) দিয়ে টেন্ডার ড্রপিং করা (দরপত্র) দাতার নাম মোহাম্মদ শাহজাহান ঘোষণা করা হয়। এই চৌফলদণ্ডি ঘাট ইজারায় অংশ নেন আরও দুই ব্যাক্তি। তাদের মধ্যে একজন ৮ লাখ টাকা ও অপরজন ২লাখ ৬০ হাজার টাকা দর দেন। কিন্তু সর্বোচ্চ দরদাতা মো. শাহজাহানকে বাতিল করে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পছন্দ সই অন্য একজন ব্যাক্তিকে চৌফলদণ্ডি ঘাটের ইজারা দেয়ার পায়তারা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এদিকে চৌফলদণ্ডি ঘাট ইজারা নিয়ে গত বছর একই ঘটনা ঘটেছে। গত বছর এই ঘাটটি ইজারা মূল্য ছিল ১১ লাখ টাকার উপরে। তৎসময়েও সর্বোচ্চ দরদাতার সিডিউল বাতিল করে অন্য একজন ব্যাক্তিকে মাত্র দেড় লাখ টাকায় ঘাট ইজারা দেয়া হয়েছিল। এতে করে অত্যন্ত কৌশলে সরকারকে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত করে বরাবরের মতো এ বছরও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করেন সর্বোচ্চ দরতাদা মোঃ শাহজাহান। তিনি বলেন, আমি সর্বোচ্চ দরদাতা হলেও আমাকে বাতিল করে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পছন্দের একজনকে কম দামে ইজারা দেওয়ার আশঙ্কা করছি। এতে করে সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিল্লোল বিশ্বাসের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, যথা সময় টেন্ডার আহ্বান ও ড্রপ করা হয়েছে। তিনজন দরদাতা এতে অংশ নেন।

তিনি বলেন, সর্বোচ্চ দরদাতাদের মধ্যে একজন ১৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, আরেকজন ৮ লাখ ও আরেকজন ২ লাখ ৮০ লাখ মুল্য দেন।

তিনি দাবি করেন, সর্বোচ্চ অথরিটি হচ্ছে আমাদের চেয়ারম্যান। ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার সহ সবকিছু ঠিক থাকে সরকারি নিয়মনীতি মেনে সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা দেয়া হবে।

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চৌফলদণ্ডী ঘাট,ইজারা,কক্সবাজার,তেলেসমাতি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close